তারপর তিন রাকাত অথবা চার রাকাতের পর শেষ তাশাহুদের জন্য বসবে। এবং 'তাওয়াররুক' করে বসবে। অর্থাৎ ডান পা খাড়া করে রাখবে এবং বাম পা নলার নিচ দিয়ে বের করে দিবে এবং নিতম্বদ্বয় জমিনে বিছিয়ে দিবে। অতঃপর শেষ তাশাহুদ পড়বে এবং দুরূদ শরীফ পড়বে
«اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ»
“হে আল্লাহ তুমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার বংশধরদের প্রতি রহমত নাযিল কর যেমনটি করেছিলে ইবরাহীম 'আলাইহিস সালাম ও তার বংশধরদের প্রতি, নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীত। হে আল্লাহ তুমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার বংশধরদের প্রতি বরকত নাযিল কর যেমনটি বরকত দিয়েছিলে ইবরাহীম 'আলাইহিস সালাম ও তার বংশধরদের প্রতি, নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীত।"[15]
এ দুরূদ শরীফকে শেষ তাশাহুদের সাথে যোগ করবে।
এছাড়াও যে কোনো দুরূদ, যা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত, পড়তে পারবে।
তারপর এ দো'আটি পড়বে:
«اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا، وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الغَفُورُ الرَّحِيمُ»
“হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের ওপর অনেক বেশি যুলুম করেছি। আর আপনি ছাড়া কেউই আমার গুনাহসমূহ মাফ করতে পারে না। সুতরাং আপনি আপনার নিজ গুনে আমাকে মার্জনা করে দিন এবং আমার প্রতি রহম করুন। আপনিতো র্মাজনাকারী ও দয়ালু।"[16]
এ দো'আটিও পড়বে:
«اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ»
“হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় চাচ্ছি জাহান্নাম থেকে, আশ্রয় চাচ্ছি কবরের আযাব থেকে, আশ্রয় চাচ্ছি জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেতে এবং মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা থেকে।"[17]
এরপর দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যানের জন্য দো'আ করবে।
যেমন, হাদীসে বর্ণিত:
«ثُمَّ يَدْعُو لِنَفْسِهِ بِمَا بَدَا لَهُ»
“তারপর তার নিজের কল্যাণের জন্য যে কোনো দো'আ করবে।"[18]
সালামের পূর্বে বেশি বেশি করে দো'আ করা উচিত। বিশেষ করে পুর্বোক্ত হাদীসে উল্লিখিত চারটি বিষয়ে আল্লাহর নিকট বেশি করে প্রার্থনা করবে। তারপর হাদীসে উল্লিখিত অন্যান্য দো'আ করতে পারে। অতঃপর «السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ» বলে ডানে ও বামে সালাম ফিরাবে।
উল্লিখিত র্কাযাবলী সুন্নাতানুসারে সম্পাদনের পর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অন্তরকে হাজির রাখা এবং শয়তানের প্রবঞ্চনা, যা দ্বারা ছাওয়াব বিনষ্ট হয়, তা হতে অন্তরকে মুক্ত রাখা। কারণ, শয়তানের সাথে তার যুদ্ধ ততক্ষণ পর্যন্ত শেষ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার মৃত্যু হবে না। আল্লাহর নিকট আমরা আমাদের সুন্দর পরিণতি কামনা করি।
সালাতের রুকুনসমূহ
সালাতে অনেকগুলো রুকুন আছে যেগুলো আদায় করা ছাড়া সালাত শুদ্ধ হয় না।
এক. সক্ষম ব্যক্তির জন্য ফরয সালাত দাঁড়িয়ে আদায় করা:
অর্থাৎ ফরয সালাত দাঁড়ানোর ক্ষমতা থাকা অবস্থায় দাঁড়ানোর স্থানে দাঁড়িয়ে আদায় করা ফরয।
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿ وَقُومُواْ لِلَّهِ قَٰنِتِينَ ٢٣٨ ﴾ [البقرة: ٢٣٨]
“তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয়ের সাথে দাঁড়িয়ে আদায় করো।" [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: 238]
দুই. তাকবীরে তাহরীমা:
সালাতের প্রারম্ভে 'আল্লাহু আকবার' বলবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وَتَحْرِيمُهَا التَّكْبِيرُ، وَتَحْلِيلُهَا التَّسْلِيمُ»
“সালাতের শুরু হলো তাকবীর আর শেষ হলো সালাম।"[19]
তিন. সূরা ফাতিহা পড়া:
ইমাম ও মুক্তাদি সকলের জন্য প্রতি রাকাতে সূরা আ-ফাতিহা পড়া ওয়াজিব।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন
«لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الكِتَابِ»
“যে ব্যক্তি সূরা আল-ফাতিহা পড়ে না, তার সালাত হয় না।"[20]
চার. রুকু করা।
পাঁচ. রুকু থেকে উঠা।
ছয়. প্রতি রাকাতে দুইবার সাজদাহ করা।
সাত. দুই সাজদার মাঝে বসা:
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱرۡكَعُواْ وَٱسۡجُدُواْۤ ﴾ [الحج: ٧٧]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা রুকু কর এবং সাজদাহ করো।" [সূরা আল-হজ, আয়াত: ৭৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَعْتَدِلَ قَائِمًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا»
“তারপর ভালোভাবে রুকু করো। অতঃপর রুকু হতে মাথা উঠাও এবং সম্পূর্ণ সোজা হয়ে দাঁড়াও। তারপর ভালোভাবে সাজদাহ করো। অতঃপর সাজদাহ হতে মাথা উঠাও এবং ভালোভাবে বস। তারপর পুনরায় ভালোভাবে সাজদাহ করো।"[21]
মনে রাখতে হবে, সাজদাহ অবশ্যই সাতটি অঙ্গের উপর করতে হবে; কপাল-নাক, দুই কবজি, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের তালু।
আট. শেষ তাশাহুদ:
নয়. শেষ বৈঠক:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ''যখন সে সালাত পড়বে শেষ বৈঠকে বলবে,[22]
«التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ»
দশ. সালাম ফিরানো:
ডান দিকে বলবে السلام عليكم ورحمة الله এবং বাম দিকে বলবে السلام عليكم ورحمة الله রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وَتَحْرِيمُهَا التَّكْبِيرُ، وَتَحْلِيلُهَا التَّسْلِيمُ»
“সালাতের শুরু হলো তাকবীর আর শেষ হলো সালাম।"[23]
এগার. সালাতে সকল রুকুনকে ধীরস্থিরভাবে আদায় করা।
বার. সমস্ত রুকনগুলো ধারাবাহিকভাবে আদায় করা।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু 'আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَنَّ رَجُلًا دَخَلَ المَسْجِدَ، وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ فِي نَاحِيَةِ المَسْجِدِ، فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ، ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» فَرَجَعَ فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ، فَقَالَ: «وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ، فَارْجِعْ فَصَلِّ، فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» فَقَالَ فِي الثَّانِيَةِ، أَوْ فِي الَّتِي بَعْدَهَا: عَلِّمْنِي يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَقَالَ: «إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلاَةِ فَأَسْبِغِ الوُضُوءَ، ثُمَّ اسْتَقْبِلِ القِبْلَةَ فَكَبِّرْ، ثُمَّ اقْرَأْ بِمَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ القُرْآنِ، ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ افْعَلْ ذَلِكَ فِي صَلاَتِكَ كُلِّهَا»
“এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের একপার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলেন। সে সালাত আদায় করে তাঁকে এসে সালাম করল। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওয়া'আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং সালাত আদায় করো। কেননা তুমি সালাত আদায় করনি। সে ফিরে গিয়ে সালাত আদায় করে এসে আবার সালাম করল। তিনি বললেন, ওয়া'আলাইকাস সালাম' তিনি বললেন, তুমি ফিরে যাও এবং সালাত আদায় করো। কেননা তুমি সালাত আদায় কর নি। সে ফিরে গিয়ে সালাত আদায় করে তাঁকে সালাম করল। তখন সে দ্বিতীয় বারের সময় অথবা তার পরের বারে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি আমাকে সালাত শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, যখন তুমি সালাতে দাঁড়াবার ইচ্ছা করবে, তখন প্রথমে তুমি যথাবিধি অযু করবে। তারপর কিবলামুখী দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যে অংশ তোমার পক্ষে সহজ হবে, তা তিলাওয়াত করবে। তারপর তুমি রুকু করবে প্রশান্তভাবে। তারপর মাথা তুলে ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর তুমি সাজদাহ করবে প্রশান্তভাবে। তারপর মাথা তুলে বসবে প্রশান্তভাবে। তারপর সাজদাহ্ করবে প্রশান্তভাবে। তারপর আবার মাথা তুলে বসবে প্রশান্তভাবে। তারপর ঠিক এভাবেই তোমার সালাতের সকল কাজ সম্পন্ন করবে।"[24]
সালাতের ওয়াজিবসমূহ
সালাতের ওয়াজিব নয়টি
1. তাকবীরে তাহরীম ছাড়া অন্যান্য তাকবীর বলা।
2. রুকুতে «سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ» বলা। (কেউ কেউ এটাকে রুকন বলেছেন।)
3. ইমাম ও মুনফারেদ (একা সালাত আদায়কারী) এর জন্য রুকু হতে উঠার সময় «سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ» বলা।
4. ইমাম মুক্তাদি ও একা সালাত আদায়কারীর জন্য «رَبَّنَا وَلَكَ الحَمْدُ» বলা।
5. সাজদায় «سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى» বলা। ( কেউ কেউ এটাকে রুকন বলেছেন।)
6. দুই সাজদার মাঝে «رَبِّ اغْفِرْ لِي، رَبِّ اغْفِرْ لِي» বলা।
7. প্রথম বৈঠক।
8. প্রথম বৈঠকে তাশাহুদ পড়া।
9. শেষ বৈঠকে দরূদ শরীফ পড়া। ( কেউ কেউ এটাকে রুকন বলেছেন।)
রুকন ও ওয়াজিবের মধ্যে প্রার্থক্য
রুকন আদায় না করলে সালাত হয় না। যদি কোনো মুসাল্লী ইচ্ছা করে কোনো রুকন ছাড়ে তবে তার সালাত বাতিল হয়ে যায়, আর অনিচ্ছায় ছাড়লে তা স্মরণ করার পর আদায় করতে হবে এবং সালাতের বাকী কার্যাদি সম্পন্ন করে সাজদাহ সাহু করবে। আর যদি মুসল্লী ইচ্ছা করে ওয়াজিব ছেড়ে দেয়, তার সালাত বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি ভুলে ছেড়ে দেয় সাজদাহ সাহুর মাধ্যমে ক্ষতি পুরণ দিবে।
সালাতের সুন্নাতসমূহ
সালাতের ওয়াজিব ও আরকান ছাড়া বাকী অন্যান্য র্কাযাবলী সুন্নাতের অর্ন্তভুক্ত।
সুন্নাত দুই প্রকার:
এক: কথ্য সুন্নাত
যেমন, সালাত শুরুর দো'আ বা সানা পড়া
আমীন বলা। সকল সালাতে প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার পর কুরআনের যে কোনো স্থান হতে তিলাওয়াত করা, সালাতে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনা করা, বিশেষ করে সাজদায় বেশি বেশি করে দো'আ করা এবং শেষ বৈঠকে বেশি বেশি করে প্রার্থনা করা।
মাগরিব, ইশার প্রথম দুই রাকাত ফরযে আর জুমু'আ ও ঈদের সালাতে ইমামের জন্য ক্বিরাত উচ্চস্বরে পড়া আর মুক্তাদির জন্য সব সময় ক্বিরাত নিম্নস্বরে পড়া।
দ্বিতীয় প্রকার সুন্নাত
অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কার্যাদি
১- তাকবীরে তাহরীমার সময় দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠানো। এছাড়া রুকুতে যাওয়া, রুকু হতে উঠা এবং প্রথম তাশাহুদের পর তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠার সময় দু'হাত উঠানো।
২- দাঁড়ানো অবস্থায় ডান হাতকে বাম হাতের পিঠের ওপর মিলিয়ে রাখা।
৩- সাজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখা।
৪- রুকুতে দুই কব্জিকে দুই হাঁটুর ওপর রাখা।
৫- সাজদার সময় প্রথমে দুই হাঁটু, তারপর দুই হাত, তারপর চেহারা মাটিতে রাখা। (কারো কারো মতে প্রথমে দুই হাত, তারপর দুই হাঁটু, তারপর চেহারা মাটিতে রাখা।)
৬- দুই সাজদার মাঝে প্রথম তাশাহুদ ও শেষ তাশাহুদে বসা অবস্থায় দুই হাতকে দুই উরুর ওপর রাখা।
৭- বৃদ্ধা আঙ্গুল ও মধ্যমা দ্বারা বৃত্ত বানানো এবং তাশাহুদে দো'আর সময় আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা।
৮- প্রথম সালামে ডান দিক আর দ্বিতীয় সালামে বাম দিক মাথা ঘুরানো।
৯- প্রথম রাকাত ও তৃতীয় রাকাত শেষ করার পর বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বসা।
আযান ও ইকামতের প্রচলন ও বিধান:
আযানের উদ্দেশ্য হল, সালাতের সময় সম্পর্কে মানুষদের অবহিত করা। ইকামতের উদ্দেশ্য হল, উপস্থিত লোকদের সালাত আরম্ভ হওয়া সম্পর্কে অবহিত করা। আযান ও ইকামত বিশেষভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও জুমার সালাতেই হয়ে থাকে। এছাড়া অন্যান্য সালাত যেমন দুই ঈদের সালাত, ইস্তেসকার সালাত, কুছফের সালাত এবং তাহাজ্জুদের সালাতে আযান ও ইকামত হয় না।
আযান ইকামতের বিধান হলো মুকীম বা স্থানীয় পুরুষের ক্ষেত্রে ফরযে কেফায়া, তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে নয়।
যদি উপযুক্ত কোনো ব্যক্তি আযান ইকামত দেয় তবে অন্যরা দায়িত্বমুক্ত হবে।
আযানের বাক্য:
আযানের বাক্য ১৫টি। তা হলো, চার বার اللهُ أَكْبَرُ দুই বার أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، দুই বার أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ» দুই বার حَيَّ عَلَى الصَّلَاة দুই বার حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ দুইবার اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ » এবং একবার لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُবলা। ফযরের সালাতের আযানে حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ বলার পর الصَّلَاةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ বৃদ্ধি করে বলবে।
ইকামতের বাক্য:
ইকামতের বাক্য ১১টি।
اللهُ أَكْبَرُ দুই বার أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ এক বার َشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ এক বার حَيَّ عَلَى الصَّلَاة এক বার حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ এক বার قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ দুই বার اللهُ أَكْبَرُ দুই বার لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ একবার।[25]
আযান ও ইকামত শুনার সময় মুয়াযযিনের সাথে সাথে আযান ও ইকামতের বাক্যাবলী বলা সুন্নাত। তবে حَيَّ عَلَى الصَّلَا এবং حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ বলার সময় لَاحَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إلَّا بِاللهِ বলা সুন্নাত। তারপর নবী করিম সাল্লাল্লাহু 'আলিইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর দরূদ পড়বে এবং আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবে।
«اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ القَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الوَسِيلَةَ وَالفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ»
“হে আল্লাহ, এ পরিপূর্ণ আহ্বান এবং আগত সলাতের প্রভু, আপনি প্রদান করুন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওসীলা (নৈকট্য) এবং মহা মর্যাদা এবং তাকে পাঠান সম্মানিত অবস্থানে, যার ওয়াদা আপনি তাকে দিয়েছেন।"[26]
সুন্নত সালাত
রাতদিনে মোট দশ রাকাত সালাতের পাবন্দী করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ নিজেও এসব সালাতের বিশেষ পাবন্দী করতেন। দশ রাকাত সালাতের বিবরণ:
অর্থাৎ যোহরের সালাতের পূর্বে দুই রাকাত এবং পরে দুই রাকাত, মাগরিবের সালাতের পরে দুই রাকাত, এশার সালাতের পরে দুই রাকাত এবং ফযরের সালাতের পূর্বে দুই রাকাত।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু 'আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«حَفِظْتُ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشْرَ رَكَعَاتٍ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الظُّهْرِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ المَغْرِبِ فِي بَيْتِهِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ العِشَاءِ فِي بَيْتِهِ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلاَةِ الصُّبْحِ»
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলিইহি ওয়াসাল্লাম হতে দশ রাকাত সালাত সংরক্ষণ করি; যোহরের পূর্বে দুই রাকাত এবং পরে দুই রাকাত, মাগরিবের সালাতের পর দুই রাকাত, ইশার সালাতের পর নিজ গৃহে দুই রাকাত। আর ফযরের সালাতের পূর্বে দুই রাকাত।"[27]
যোহরের সালাতের পূর্বে চার রাকাত এবং পরে দুই রাকাতের কথাও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তখন দিবারাত্রে মোট সালাত হবে বার রাকাত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলিইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّي لِلَّهِ كُلَّ يَوْمٍ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا، غَيْرَ فَرِيضَةٍ، إِلَّا بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ، أَوْ إِلَّا بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ»
“কোনো মুসলিম যদি ফরয সালাত ছাড়া প্রতিদিন বার রাকাত সালাত আদায় করে আল্লাহ তা'আলা তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি ঘর তৈরী করেন।"[28]
অনুরূপভাবে যোহরের পরে ও চার রাকাত পড়া হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলিইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ صَلَّى أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ قَبْلَ الظُّهْرِ وَأَرْبَعًا بَعْدَهَا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى النَّارِ»
“যে ব্যক্তি যোহরের পূর্বে চার রাকাত এবং তার পরে চার রাকাত সালাত আদায় করে আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন।"[29]
ফযরের দুই রাকাত সুন্নাত সালাত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলিইহি ওয়াসাল্লাম সফরে এবং বাড়িতে কখনোই ছাড়তেন না।
সালাত আদায়ের মাকরূহ সময়
বিশেষ কয়েকটি সময়ে সালাত পড়া মাকরূহ আর তা হলো নিম্ন রূপ:
ফযরের সালাতের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত। তবে যে ব্যক্তি ফযরের দুই রাকাত পড়তে পারেনি, সে অবশ্যই দুই রাকাত ফযরের সুন্নাত পরে আদায় করে নিবে।
সূর্যোদয়ের সময় হইতে সূর্য এক ধনুক পরিমান উঁচু হওয়া পর্যন্ত।
সূর্য আকাশের মধ্যভাগে অবস্থানকাল থেকে পশ্চিম আকাশের দিকে ঢলে পড়া পর্যন্ত। (অর্থাৎ যোহরের সালাতের সামান্য পূর্বে)
আছরের সালাতের পর সূর্যাস্ত র্পযন্ত।
সূর্যাস্তের মুহূর্তে।
সালাতের পর আযকার ও দো'আসমূহ
সালাতের সালাম ফিরানোর পর সুন্নত হলো তিন বার أستغفرالله বলবে।
তারপর নিম্নবর্ণিত দো'আগুলো পড়বে:
«اللهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ»
“হে আল্লাহ! আপনি শান্তিদাতা, আর আপনার কাছ থেকেই শান্তি, আপনি বরকতময়, হে মর্যাদাবান ও কল্যাণময়!''[30]
«لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ، وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الجَدِّ مِنْكَ الجَدُّ»
“আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো মা'বুদ নেই, তিনি একক, তার কোনো শরীক নেই। রাজত্ব ও র্কতৃত্ব একমাত্র তাঁরই এবং সকল প্রশংসা এক মাত্র তাঁরই, তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ, আপনি যা প্রদান করেছেন তাতে বাধা দেওয়ার আর কেউ নেই আর আপনি যা দিবেন না তা প্রদান করার মতো আর কেউ নেই। আপনার আযাব হতে কোনো বিত্তশীল পদর্মযাদার অধিকারীকে তার ধন সম্পদ বা পদর্মযাদা রক্ষা করতে পারে না।"[31]
«لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ، لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ، وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ»
“আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো মা'বুদ নেই, তিনি একক, তার কোনো শরীক নেই। রাজত্ব ও র্কতৃত্ব একমাত্র তাঁরই। আর সকল প্রশংসাও একমাত্র তাঁরই, তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। কোনো পাপকাজ, রোগ-শোক, বিপদ-আপদ হতে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় এবং সৎ কাজ করার কোনো ক্ষমতা নেই আল্লাহর তাওফীক ছাড়া কারোই নেই। আল্লাহ ছাড়া ইবাদতযোগ্য কোনো মা'বুদ নেই, আমরা তারই ইবাদত করি। সকল নি'আমত তার, সকল অনুগ্রহ এবং সকল উত্তম প্রশংসা তাঁরই। তিনি ছাড়া আর কোনো সত্যিকার ইলাহ নেই। আমরা তার দেওয়া জীবন বিধান একমাত্র তার জন্যই একনিষ্টভাবে মান্য করি। যদিও কাফিরদের নিকট এটা অপ্রীতিকর।"[32]
«اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ»
“হে আল্লাহ! আপনার যিকির, আপনার শুকরীয়া এবং আপনার ইবাদত বন্দেগী সুন্দর ও সঠিকভাবে আদায় করতে আপনি আমাকে তাওফীক দান করুন।"[33]
«اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الجُبْنِ، وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ العُمُرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ».
“হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় র্প্রাথনা করছি কাপুরুষতা হতে। আর আশ্রয় র্প্রাথনা করছি বার্ধক্যের চরম দুঃখ কষ্ট হতে আরো র্প্রাথনা করছি দুনিয়ার ফিৎনা-ফাসাদ এবং কবরের আযাব হতে।"[34]
«اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ، وَعَذَابِ الْقَبْرِ»
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি কুফর হতে এবং কবরের আযাব হতে।"[35]
তারপর سُبْحَانَ اللهِ ৩৩ বার, اَلْحَمْدُ لِلهِ ৩৩ বার এবং اَللهُ أَكْبَرُ ৩৪ বার।
সূরা নাছ, ফালাক, এখলাছ প্রত্যেক সালাতের পর একবার করে আর মাগরিব ও এশার সালাতের পর তিন বার করে।
এছাড়া প্রত্যেক সালাতের পর আয়াতুল কুরছি পড়া সুন্নাত।
সমাপ্ত