Articles

 





মানব সম্পদ উন্নয়নে ইসলাম





আল্লাহ তা'আলা মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন এবং নবী ও রাসূল পাঠিয়ে কোরআন শিক্ষা দিয়ে আল্লাহর জমিনে তাঁর প্রতিনীতিত্বের দায়িত্ব অর্পন করেছেন। তাই সংগত কারণেই মানুষ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ হওয়া বাঞ্চনীয়। যাঁরা তাঁদের বিবেক বুদ্ধি ও আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিজেকে ও এ পৃথিবীকে সুন্দর ও কল্যানে পরিপূর্ণ করবে। কিন্তু এ মানবগোষ্ঠী নিজেদের কর্মদোষে এ পৃথিবীকে কুলষিত করেছে ও নিজেই পৃথিবীর সমস্যা ও বোঝা হয়ে গিয়েছে। পাশবিক স্বভাবে অভ্যস্থ হীনতাগ্রস্থদের হীনতমে নেমে গিয়েছে। আল্লাহ বলেন: ﴿ثُمَّ رَدَدۡنَٰهُ أَسۡفَلَ سَٰفِلِينَ ٥﴾ ''অতপর আমি তাদেরকে হীনতাগ্রস্থদের হীনতমে পরিণত করি''।





এটা বললে অতোক্তি হবে না যে, বর্তমানে মানুষ হিংস্র প্রাণী অপেক্ষা একশ্রেণীর মানুষকে অধিক ভয় পায়। এরা সম্পদ'ত নয়ই; বরং সমাজের সমস্যার মুল কারণ। আর এক শ্রেণীর অধিকার বঞ্চিত মানুষ তাদের ভুল সীদ্ধান্তের কারনে অজ্ঞ বেকার পুঙ্গ হয়ে সমাজে সমস্যা বনে গিয়েছে। অধিকার বঞ্চিতদের অধিকার পুনঃ প্রতিষ্ঠা করে, বেকারকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে সম্পদে পরিণত করা যায়। তাছাড়া নৈতিকতা বর্জিত পাশবিক স্বভাবের মানুষকে নৈতিক আদর্শিক শিক্ষা প্রদান, শাসন ও ধর্মীয় অনুশাসন পালনে অভ্যস্থ করে সম্পদে পরিণত করা সম্ভব। আর তখনই মানব সম্পদ উন্নয়ন হয়েছে বলা যাবে। এ প্রবন্ধে মানব সম্পদ উন্নয়নের এ প্রক্রিয়াই পর্যালোচনা করা হয়েছে। এর দ্বারা মানুষের আর্থ সামাজিক ও নৈতিক ক্ষেত্রে সামান্যতম উন্নয়ন সাধন হলে আমার শ্রম স্বার্থক হবে।]





আল্লাহ তা'আলা মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন:





﴿لَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ فِيٓ أَحۡسَنِ تَقۡوِيمٖ ٤﴾[التين:4]





''আমি তো সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে''।[1] অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা মানুষকে দৈহিক ও মানসিক দিক দিয়ে সৌন্দর্যতা দান করেছেন। আর এ মানব জাতিকে অন্ধকার হতে আলোর পথে দিক নির্দেশনা দিয়ে সম্পদে পরিণত করার জন্য যুগে যুগে নবী ও রাসুল প্রেরিত হয়েছে। এরশাদ হয়েছে





﴿ وَلِكُلِّ قَوۡمٍ هَادٍ﴾ [الرعد : 7 ]





''এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য আছে পথ প্রদর্শক''।[2] যারা মানবতার মুক্তি ও উন্নয়নের জন্য আমৃত্যু চেষ্টা ও সাধনা অব্যাহত রেখেছিলেন।





মানব সম্পদ এ দুটি শব্দের মধ্যে মানব বলতে মানুষ জাতি তথা আদম ও মাতা হাওয়া (আঃ) এর মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা যে জাতি সৃষ্টি করেছেন তাকে বুঝানো হয়েছে। আর সম্পদ বলতে যে সব দ্রব্য সামগ্রীর উপযোগ আছে যোগান সীমাবদ্ধ এবং বিক্রয় যোগ্য সে সব দ্রব্য সামগ্রীকে অর্থনীতিতে সম্পদ বলে।[3]





যে সমস্ত দ্রব্যের আর্থিক মূল্য আছে অর্থশাস্ত্রে উহা তাকে সম্পদ বলে। এ সম্পদের চারটি বৈশিষ্ঠ রয়েছে। ১. উপযোগ ২. অপ্রাচুর্যতা ৩. হস্তান্তর যোগ্যতা ৪. বাহ্যিকতা।[4]





অর্থনীতিতে দ্রব্য ও সেবা উৎপাদনে ব্যবহার ও প্রাপ্তি যোগ্য উৎপাদনকে সম্পদ বলে। অন্যভাবে বলা চলে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার যোগ্য সেবার পরিমানই সম্পদ। বৈশিষ্ঠের প্রেক্ষিতে সম্পদের সংজ্ঞা বিবেচনা করা যায়, যে সব বস্ত্ত ও অবস্ত্তগত দ্রব্যের উপযোগ আছে কিন্তু যোগান সীমাবদ্ধ এবং হস্তান্তর যোগ্যতা আছে তাকে সম্পদ বলা যায়।[5]





উন্নয়ন বলতে অর্থনৈতিক, সামাজিক, নৈতিক ও আর্দশিক উন্নয়ন বুঝানো হয়েছে।





আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন। যেমন এরশাদ হচ্ছে-





﴿وَلَقَدۡ كَرَّمۡنَا بَنِيٓ ءَادَمَ وَحَمَلۡنَٰهُمۡ فِي ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِ وَرَزَقۡنَٰهُم مِّنَ ٱلطَّيِّب وَفَضَّلۡنَٰهُمۡ عَلَىٰ كَثِيرٖ مِّمَّنۡ خَلَقۡنَا تَفۡضِيلٗا ٧٠﴾[الإسراء : 70 ]





আমি তো আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি তাদেরকে উত্তম রিয্ক দান করেছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর তাঁদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।[6]





কিন্তু এ মানব জাতি নিজেদের কর্মদোষে সৃষ্টির নিন্মতম স্তরে পৌছে গিয়েছে যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন: “অতঃপর আমি তাদেরকে হীনতাগ্রস্তদের হীনতমে পরিনত করি"[7] আর মানুষ যখন নিম্ল স্তরে নেমে যায়। সমাজে তাদের উপযোগিতাও থাকে না বরং সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ তখন অনাকাংখিত ও বোঝা হয়ে দাড়ায় এ শ্রেনীর মানুষকে সম্পদে পরিনত করণার্থে নিম্নরুপ পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।





মানুষ যাতে সম্পদে পরিনত হতে পারে তার জন্য প্রথমত তার মৌলিক প্রয়োজন পুরনের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। মানুষের মৌলিক পাঁচটি প্রয়োজন হচেছ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা।[8] এ ক্ষেত্রে সম্পদের সুষম বন্টন, পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা পরিবর্তন করে যাকাত ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা বাঞ্চনীয়। কেননা পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় ধনী আরো সম্পদশালী আর গরীব ক্রমাম্বয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে পক্ষান্তরে যাকাত তথা ইসলামী অর্থব্যবস্থা ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে।





তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জনগনের জীবন যাত্রার মানউন্নয়নের সুচক নয়, বা তার পর্যাপ্ত প্রতি ফলনও নয়। দেশের জনসংখ্যার বৃহত অংশকে উন্নয়ন প্রক্রিয়ার থেকে দুরে, দরিদ্র, বেকারত্ব, নিরক্ষরতা, অপুষ্টি ও স্বাস্থ্যহীন পরিবেশে জীবন যাপন করে, দেশের নারী সমাজ বেকার ও শিক্ষিত যুবকেরা অর্থনৈতিক অনগ্রসর। এ অবস্থায় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ব্যাতীত টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। অপর পক্ষে অদক্ষ পুষ্টিহীন জনশক্তি উন্নয়ন প্রক্রিয়া ব্যহত করে।[9] সুতারং দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তি তথা মানব সম্পদে পরিনত করার লক্ষে নিম্নোক্ত খাতসমূহের দুর্বলতা দ্রুততার সাথে কেটে উঠা আবশ্যক। এখাতগুলো হচেছ শিক্ষা ব্যবস্থা, পরিবার কল্যাণ, নারী ও শিশু, যুব উন্নয়ন, সমাজ কল্যাণ, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কল্যান।





এ দুর্বলতা থেকে নিস্কৃতির জন্য সরকার ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করেছে যেমন প্রাথমিক শিক্ষা সার্বজনীন, বাধ্যতামুলক ও অবৈতনিক করা হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার বিনিময় খাদ্য কর্মসুচীর আওতায় চাল ও গম প্রদান, এইচ, এস, সি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক ও উপবৃত্তি প্রদান করছে, এবং ২০১০ সালের মধ্যে নিরক্ষর মুক্ত করার লক্ষ্যে প্রতিটি গ্রামে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যানের জন্য স্বাস্থসেবা বৃদ্ধি করেছে।





মানব সম্পদ উন্নয়নে নারীর অধিকার বাস্তবায়ন একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-





﴿وَلَهُنَّ مِثۡلُ ٱلَّذِي عَلَيۡهِنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ﴾[البقرة : 28 ]





নারীদের তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে, যেমনি আছে তাদের উপর পুরুষদের।[10]





নারী মাতৃজাতি বলেই সন্তানদের সকল দুঃখ সমস্যা সম্পর্কে নারীগণ বেশী সচেতন।[11] সন্তান প্রতিপালনে নারীর ভূমিকাই মুখ্য বিধায় নারী অধিকার অন্যসব থেকে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত। কিন্তু সমাজের প্রাচীন ধ্যান ধারনার কারণে এবং পুরুষ শাসিত সমাজে অনেক ক্ষেত্রে নারী অধিকার উপেক্ষিত হয়। নিম্লে মহিলাদের অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।





1. সম্পদে মালিকানা লাভের অধিকার নারীর চিরন্তণ অধিকার। সে চাইলে বৈধ যে কোন মালের মালিক হতে পারে। যেমন এরশাদ হচ্ছে:





﴿لِّلرِّجَالِ نَصِيبٞ مِّمَّا ٱكۡتَسَبُواْۖ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيبٞ مِّمَّا ٱكۡتَسَبۡنَۚ ٣٢﴾ [النساء : 32 ]





"পুরুষ যা অর্জন করবে তা তার প্রাপ্য অংশ এবং নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ।[12]





2. শিক্ষার অধিকার এ ক্ষেত্রে নারী পুরুষ উভয়েরই সমান অধিকার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমত ইসলামী আকীদা, আবশ্যিক ইবাদত সংক্রান্ত জ্ঞান ও দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন। রাসুল (সাঃ) বলেন[13]





» طلب العلم فريضة على كل مسلم «





ইলেম শিক্ষা করা প্রতিটি মুসলমানের উপর ফরয।





3. সম্পদ ব্যয় করার অধিকার : বৈধ সকল ক্ষেত্রে পুরুষের ন্যায় তার সম্পদ ব্যয় করার অধিকার চিরন্তন।





4. পাত্র নির্বাচনের অধিকার: ইসলাম নারীকে তার জীবনসঙ্গী নির্বাচনের অধিকার দিয়েছে রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেছে:





« لا تنكح الأيم حتى تستامر ولا تنكح البكر حتى تستأذن- قالوا يارسول الله وكيف إذنها- قال أن تسكت»





বিধবা বিবাহ করবে না যতক্ষন তার অভিমত না নেওয়া হয়, কুমারী বিবাহ করবে না যতক্ষন তার থেকে অনুমতি না নেওয়া হয়। তারা বললেন হে রাসুল (সাঃ) তার অনুমতি কিভাবে বুঝা যাবে? রাসুল বললেন যে তার চুপ থাকা।[14]





5. ধর্মীয় বিধান পালনের অধিকারঃ ধর্মীয় দিগন্তে নারী এবং পুরুষের সমান অধিকার রয়েছে। ইবাদতের কোন সীমাবদ্ধতা নেই। আল্লাহর ইবাদত করে তারা যে কোন স্তরে উন্নীত হতে পারে। দ্বীনের দাওয়াত ও ধর্মীয় অন্যান্য ক্রিয়াকর্মে তাদের পূর্ণ অধিকার রয়েছে। তবে শারীরিক অসুবিধার ক্ষেত্রে অব্যবহৃত দেয়া হয়েছে। নফলের ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতির কথা বলা হয়েছে। আল-কোরআনে বলা হয়েছেঃ





"মুমিন নর নারী একে অপরের বন্ধু। তারা সৎকাজে নির্দেশ দেয়, অসৎকার্য নিষেধ করে। সালাত কয়েম করে, যাকাত দেয়, আল্লাহ্ এবং রাসুলের আনুগত্য করে তাদের প্রতি আল্লাহ্ দয়া পরবশ হবেন।[15] হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে।"





«لا تصوم المرأة وزوجها شاهد يوم من غيررمضان إلا باذنه»





কোন মহিলা যদি তার স্বামীর নিকট থাকে তবে তার অনুমতি ছাড়া সে রোজা রাখতে পারবেনা। (রমজানের রোজা ব্যতীত)[16]





6. পছন্দের অধিকারঃ সে যদি ভাল মেয়েদের ভালবাসে বা পছন্দ করে তবে তাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে যেতে ও হাদীয়া দিতে পারবে। তাদের সাথে চিঠি পত্র আদান প্রদান ও খোজ খবর নিতে পারবে। তেমনি তারা অপছন্দ করবে খারাপ মেয়েদের তাদের সাথে রাগ করবে আল্লাহ্ উদ্দেশ্যে সম্পর্কচেছদ করবে।[17]





ওসিয়ত করবার অধিকারঃ যা তার মৃত্যুর পূর্বে অথবা পরে কার্যকর হবে, এতে বাধাদানের অধিকার কারো নেই। কারন আখেরাতের ছওয়াব সকলেই প্রয়োজন। এজন্য আল্লাহক পাক বলেন





﴿ وَمَا تُقَدِّمُواْ لِأَنفُسِكُم مِّنۡ خَيۡرٖ تَجِدُوهُ عِندَ ٱللَّهِ هُوَ خَيۡرٗا وَأَعۡظَمَ أَجۡرٗاۚ﴾ [المزمل : 20 ]





এবং তোমরা তোমাদের নিজেদের জন্য যে সমস্ত নেক কার্য করবে তাকে উপস্থিত পাবে আল্লাহ পাকের সকাশে আরও উত্তম ও মহান হিসেবে।[18]





7. সাজগোজ করার অধিকারঃ নারী চাইলে তার স্বামীর জন্য সাজগোজ করবে এক্ষেত্রে গহনা, সুন্দর জামা, লিপিষ্টিক পাউডার ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে তবে এমন পোষাক পরবে না যা উলঙ্গের মত দেখা যায় ও কাফেরদের মত পোষাক পরবে না। এ ব্যপারে কোরআনের নির্দেশ হলো[19]





﴿وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ ﴾ [الأحزاب : 33]





আর তেমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না





8. পানাহারের অধিকারঃ নারীগণ হালাল সর্বপ্রকার খাবার পুরুষের মতই গ্রহন করার অধিকার রাখে। এ ক্ষেত্র কোন প্রকার পার্থক্য নেই আল্লাহ্ বলেন





﴿وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ ٣١﴾[الأعراف : 31 ]





আহার করিবে ও পান করিবে। কিন্তু অপচয় করিবেনা। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।[20]





9. জিহাদে অংশগ্রহনের অধিকারঃ দেশ ও ধর্ম রক্ষায় ইসলাম নারী পুরুষকে সমভাবে দায়িত্ব দিয়েছে। জেহাদে অংশ গ্রহন শুধু পুরষ বা শুধু নারীর উপর ফরজ নয়। আল্লাহর বানী:





﴿ٱنفِرُواْ خِفَافٗا وَثِقَالٗا وَجَٰهِدُواْ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ٤١﴾ [التوبة : 41]





অভিযানে বের হয়ে পড়, হালকা অবস্থায় হোক অথবা ভারি অবস্থায় হোক (রণসম্ভরে বেশী হোক কম হোক) সংগ্রাম কর আল্লাহ্র পথে তোমাদের সম্পদও জীবন দিয়ে।[21]





10. সামাজিক ক্রিয়াকর্মে অংশগ্রহনের অধিকারঃ ইসলাম নারীকে ধর্মীয় ও সামাজিক ক্রিয়াকর্মে অংশগ্রহনের পূর্ণ অধিকার দিয়েছে। ঐতিহাসিক তথ্যাবলীতে দেখা যায় যে, ইসলামের স্বর্ণযুগে যখন সমাজ জীবনে ইসলামের সত্যিকার শিক্ষা বাস্তবাযিত হয়েছিল সে সময় মহিলারা বহিরাংগনে শিক্ষা গ্রহন, শিক্ষা দান, ব্যবসা বানিজ্য, পুরুষের সাথে পরামর্শ ও যুদ্ধে অংশ্রগ্রহনেও তাঁদের জন্য কোন সীমাবদ্ধতা ছিল না। এছাড়া মা হিসেবে পিতা অপেক্ষা সন্তানের অধিকতর ভালবাসা পাবার চিরন্তন অধিকার নারীর রয়েছে।[22]





বিশেষ করে একজন মহিলা যখন গর্ভবতী হন তখন প্রথমতঃ তার নিজের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের দরকার হয়। দ্বিতীয়ত তার গর্ভাস্থিত ভ্রুনের ঠিকমত গঠন ও বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত খাদ্যের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ দুজনের খাবার একত্রে খেতে হয়।





অন্যদিকে একথা খুবই স্বাভাবিক একজন পুষ্টিহীন মা অপুষ্ঠ শিশুরই জন্ম দেবেন। এজন্য মায়ের পুষ্টির ব্যাপারে অতিরিক্ত যত্ন নেয়া প্রয়োজন। গর্ভের শিশু সঠিক গঠন ও বৃদ্ধির জন্য সুষম বাড়তি খাবার দিতে হবে। এ বাড়তি খাবার মায়ের স্বাভাবিক খাদ্য হতে ২০০-৩০০ ক্যালোরী বেশী শক্তি যোগাবার উপযোগী হবে। নীচে একজন সাধারন কর্মক্ষম স্বাভাবিক মহিলা ও গর্ভবতী মহিলা কতখানি খাদ্য গ্রহন করা উচিত তার একটা তালিকা দেয়া হল।





সুতরাং এ কথা দ্বিধাহীন চিত্তে বলা যায় একটি কর্মক্ষম, দক্ষ ও সুস্থ মানব সম্পদ হিসেবে নারীকে গড়ে তুলতে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গর্ভবতী মহিলার পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।





মানব সম্পদ উন্নয়নে শিশু অধিকার ও শিশু পরিচর্যাও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বস্ত্তত ইসলাম চৌদ্দশ বছরের অধিককাল যাবত শিশুদের বিষয় গুরত্বারোপ করে অসছে এবং শিশুদের পরিচর্যার বিষয়টিকে ইসলামের মৌলিক নীতিমালার অন্তর্ভূক্ত করত তাকে একটি সার্বক্ষনিক পালনীয় বিধানে পরিণত করেছে।[24] ইসলাম যে শিশুর জন্ম মুহুর্ত থেকেই তার অধিকারসমূহ চিহ্নিত করে ক্ষান্ত হয়েছে তা নয়, ববং তার জন্মের পূর্ব থেকেই ইসলাম তার অধিকার সমূহ নির্ধারণ করে দিয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে শৈশব হচেছ সৌন্দর্য, আনন্দ, স্বপন, সৌভাগ্য ও ভালবাসায় পরিপূর্ণ এক চমৎকার জগত।





কোরআনে বিধৃত শৈশব সম্পর্কিত সমস্ত আলোচনাই ভালবাসা ও মহত্বে পরিপূর্ণ। আল্লাহ নিজেই শৈশব নামে শপথ করেছেন এভাবে-





﴿ لَآ أُقۡسِمُ بِهَٰذَا ٱلۡبَلَدِ ١ وَأَنتَ حِلُّۢ بِهَٰذَا ٱلۡبَلَدِ﴾ [البلد : 1-3 ]





না আমি এ নগরীর নামে শপথ করে বলছি যখন তুমি এ নগরীতে অবস্থান করছো। আরো শপথ করছি জন্মদাতার নামে ও যা সে (তার ঔরসে) জন্ম দিয়েছো[25] (সন্তানের নামে) শিশু জীবনের সৌন্দর্য আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেছেন





﴿ٱلۡمَالُ وَٱلۡبَنُونَ زِينَةُ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا﴾ [الكهف : 46 ]





সম্পদ ও পুত্র সন্তান হচেছ পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য বিশেষ।[26]





সুতরাং পার্থিব জীবনের সুখ শান্তি ও সৌন্দর্য এ শিশুদের ভবিষতে সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা করা একান্ত প্রয়োজন। পিতা মাতার উপর সন্তানের দশটি অধিকার রয়েছে।[27] যা নিম্নরূপঃ





১. বংশগত ও জন্মগত পবিত্রতা ও সুস্থতার অধিকার : প্রত্যেক মানব শিশু বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে জন্মগত পবিত্রতা ও সুস্থ শরীর নিয়ে জন্মগ্রহণের অধিকার রাখে। এ ক্ষেত্রে অবৈধ অথবা মাত্রাতিরিক্ত যৌন মিলনের অসুস্থতার সময়ে ও যৌন মিলনের ফলে শিশু অধিকার যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।





» تخيروا لنطفكم فإن العرق دساس أو نزاع«





কোথায় তোমার বীর্য স্থাপন করবে তা চিন্তা ভাবনা করে স্থির করে নাও। বংশধারা যেন সঠিক হয়।[28]





২. বেঁচে থাকার অধিকার: দারিদ্রতার ভয়, পরিাবারিক সুনাম রক্ষার্থে অথবা অন্য যে কোন কারণে শিশু হত্যাকে ইসলাম কঠোরভাবে নিন্দা করেছে।





﴿وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَوۡلَٰدَكُم مِّنۡ إِمۡلَٰقٖ نَّحۡنُ نَرۡزُقُكُمۡ وَإِيَّاهُمۡۖ﴾[الأنعام : 151 ]





দরিদ্রতার কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না আমি তোমাদের এবং তাদের রিযিক দিয়ে থাকি।[29]





৩. মাতৃদুগ্ধ পান আশ্রয়, প্রতিপালন ও স্বাস্থসেবার অধিকার : আল কোরআনে বলা হয়েছে।





﴿وَٱلۡوَٰلِدَٰتُ يُرۡضِعۡنَ أَوۡلَٰدَهُنَّ حَوۡلَيۡنِ كَامِلَيۡنِۖ لِمَنۡ أَرَادَ أَن يُتِمَّ ٱلرَّضَاعَةَۚ﴾ [البقرة : 233 ]





যে স্তন্য পানকাল পূর্ণ করতে চান, তাদের জন্য জননীগণ সন্তানগণকে পূর্ণ দু বছরের স্তন্যপান করাবেন।[30]





৪. জন্মগত বৈধতা এবং ভাল নামের অধিকার: বৈধ পন্থায় পৃথিবীতে আসবারও সন্দেহ মুক্ত পিতৃত্বের পরিচয় প্রদানের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে এবং শিশুর সুন্দর নাম রাখতে হবে। আল্লাহর নবী বলেছেন- الولد للفراش যে (পিতার) শয্যায় সন্তান জন্মগ্রহণ করে শিশু সেই শয্যারই[31] তোমরা সুন্দর নাম রাখ।[32]





৫. পৃথক শয্যায় নিদ্রা যাবার অধিকার: প্রত্যেক শিশুকেই পৃথক একক শয্যায় নিদ্রা যাবার অধিকার রয়েছে। রাসূল(স:) এরশাদ করেন-





«مروا أولادكم بالصلاة وهم أبناء سبع واضربوهم عليها وهم أبناء عشر وفرقوا بينهم في المضاجع «





৭ বছর বয়সে শিশুকে নামাজ পড়ার নির্দেশ দাও, ১০ বছর হয়ে গেলে তাদেরকে নামাজ না পড়লে শাস্তি দাও এবং তাদের জন্য পৃথক পৃথক শয্যার ব্যবস্থা কর।[33]





৬. ধর্মীয় শিক্ষা ও আখলাক উন্নয়নের অধিকার : শিশুদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধ সৃষ্টি করা পিতা মাতার নৈতিক দায়িত্ব। হযরত লোকমান (আঃ) যে ভাষায় স্বীয় পুত্রকে নির্দেশ দিয়েছেন তার উল্লেখ কোরানুল কারীমে রয়েছে।





﴿يَٰبُنَيَّ أَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَٱنۡهَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَٱصۡبِرۡ عَلَىٰ مَآ أَصَابَكَۖ إِنَّ ذَٰلِكَ مِنۡ عَزۡمِ ٱلۡأُمُورِ ١٧﴾[لقمان : 17 ]





হে আমার পুত্র সালাত কায়েম কর, সৎ কর্মের নির্দেশ দাও, অসৎ কর্মে নিষেধ কর এবং বিপদে আপদে ধৈর্য্য ধারন কর। ইহাই দৃঢ় সংকল্প পূর্ণ হৃদয়ের কাজ।[34]





৭. ভবিষৎ আর্থিক নিরাপত্তা: আল্লাহর নবী বলেছেন





«لأن تذر ورثتك أغنياء خير من أن تذرهم عالة يتكففون الناس»





নিজের সন্তানকে অন্যের দয়া দাক্ষিণ্যের উপর ফেলে যাবার চেয়ে অভাবমুক্ত রেখে যাওয়া ভাল[35]





৮. শিক্ষা প্রশিক্ষন, খেলাধুলা ও আত্মরক্ষার অধিকার: সন্তানকে লেখাপড়া, পারিবারিক, বৈষয়িক ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করতে হবে। হাদীস শরীফে এসেছে-





পিতামাতা নিকট সন্তানের অধিকার হলো তাঁর সন্তানকে লিখতে শিক্ষা দেবে, সাতাঁর শিক্ষা দেবে এবং তীরন্দাজ হতে শিক্ষা দেবে। তারা এমন কিছু শিক্ষা দেবেন না যা সন্তানকে ন্যায়নিষ্ঠ করে না।[36]





৯. লিংগভেদে সমব্যবহারের অধিকার: আল্লাহর নবী বলেছেন





»اعدلوا بين أولادكم«





তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে ইনসাফ কায়েম করো[37],





যেমন তোমরা তোমাদের সংগে আচরণেও ইনসাফ কামনা করে থাকো।





১০. বৈধ আয় থেকে প্রতিপালিত হবার অধিকার : সুতরাং পিতা-মাতাকে সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে বৈধ আয় খরচ করতে হবে।





উপরে বর্ণিত অধিকার গুলো সন্তান যদি সুষ্ঠ ভাবে পায় তাহলে প্রতিটি মানুষ সম্পদে পরিণত হবে এবং তাঁর জীবন, দেশও জাতীর কল্যাণে আসবে। আল্লাহ্ রাববুল আলামীন এ বিশ্ব জগত এক সুন্দর পরিকল্পনা অনুযায়ী সৃষ্টি করেছেন। তাই ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের প্রত্যেক বিষয়েই পরিকল্পিত উপায়ে কাজ করা বাঞ্চনীয়। পরিকল্পনা বিহীন কাজ উত্তম ফলায়ক হতে পারে না। এমনকি পরিকল্পনা ব্যতীত কোন গঠন মুলক কাজ সম্ভবই নয়।[38] আল্লাহ্র কর্মে পরিকল্পনা পরিলক্ষিত হয়।





﴿َمَا خَلَقۡنَا ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ وَمَا بَيۡنَهُمَا لَٰعِبِينَ ٣٨ مَا خَلَقۡنَٰهُمَآ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ ٣٩﴾. [الدخان : 38-39 ]





আমি আকাশ মন্ডলী, পৃথিবী এবং উভয়ের মধ্যকার কোন কিছুই খেলাচছলে সৃষ্টি করনি। আমি তো আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছি। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।[39]





﴿إِنَّا كُلَّ شَيۡءٍ خَلَقۡنَٰهُ بِقَدَرٖ ٤٩﴾ [القمر : 49 ]





আমি সব কিছু এক সুনিদিষ্ট পরিমাপে সৃষ্টি করেছি।[40]





সুতারং মানব সম্পদ উন্নয়নে পরিকল্পিত পরিবারের প্রয়োজনীয়তা অনীস্বীকার্য। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত একটি জন বহুল দেশে। এ দেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং বৃদ্ধির হার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশী। এশিয়া ইউকের ২০০০ সালের মে মাসের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৩ কোটি লোক এবং বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২.২ শতাংশ। ১৯৯৯ সনে প্রতি হাজারে স্থুল জন্মহার প্রায় ২৩.৬ এবং স্থুল মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৮ জন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ হার অব্যাহত থাকলে ১৪৮.৩৯৩ ব;কি; আয়তন বিশিষ্ট এ দেশের জনসংখ্যা চলতি শতাব্দীর প্রথম ৫বছরে অনুমানিক ১৪ কোটি হতে পারে বলে বিশেষদের ধারনা।[41] তবে এদেশের বৃহত জনগোষ্ঠীকে যদি সুস্থ, শিক্ষিত, দক্ষ, অভিজ্ঞ করে গড়ে তোলা যায় তাহলে এ জনসংখ্যা বিশাল মানব সম্পদে পরিনত হতে পারে।





অন্যথা এদের দ্বারা অশান্তি বিশৃংখলা হত্যা সন্ত্রাস, ধর্ষণের, মত প্রভৃতি অপর্কম সংগঠিত হওয়াই স্বাভাবিক। আল্লাহ্ তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান সন্ততি তোমাদের জন্য পরীক্ষাস্বরুপ[42] আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন





﴿وَلۡيَخۡشَ ٱلَّذِينَ لَوۡ تَرَكُواْ مِنۡ خَلۡفِهِمۡ ذُرِّيَّةٗ ضِعَٰفًا خَافُواْ عَلَيۡهِمۡ فَلۡيَتَّقُواْ ٱللَّهَ وَلۡيَقُولُواْ قَوۡلٗا سَدِيدًا٩ ﴾ [النساء : 9 ]





তাদের ভয় করা উচিত তারা যদি অসহায় সন্তান রেখে দুনিয়া থেকে সচলে যায় তবে মৃত্যুর সময় সন্তানদের সম্পর্কে তাকে আশংকা ও উদ্বিগ্ন করবে।[43] অতএব পরিবার পরিকল্পিত ভাবে গড়ে তুলতে হবে। কেননা পরিকল্পনা ও পরিণাম চিন্তা না করে বিবাহ, বাল্যবিবাহ ও বাহুবিবাহের কারনে বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় মহিলার সংখ্যা বাড়ছে তেমনি ঘন ঘন সন্তান জন্ম দেবার কারনে সদ্য ভুমিষ্ট শিশু অপুষ্টি, রাতকানা, লেংড়া ও দুর্বল হিসেবে দুনিয়াতে আগমন করছে। যারা পরবর্তীতে সমাজে বেকারত্বের কষাঘাতে ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারনে সমাজে সংঘটিত নানাবিধি অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। যা ইসলাম,মেডিকেল সাইনন্স ও সুস্থ বিবেক কোন ভাবে সমর্থন করে না। সুতরাং বলা যায় মানুষ সম্পদ উন্নয়নে পরিকল্পিত পরিবার গঠনের প্রয়োজনীয় অনস্বীকার্য। অপরিকল্পিত জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপটা যখন সহ্যের বাইরে চলে যায় তখনই দেখা যায় ক্ষুধার জ্বালায় একজন স্নেহময়ী মাকে তার সন্তানকে গলা টিপে মারতে উদ্যত হতে। দেখা যায় কোলের সন্তানকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে নিজেকে ভারমুক্ত করে একজন গর্ভধারিনী মাকে পালিয়ে যেতে।[44] এ নিমর্ম বাস্তবতা অতীত ও বর্তমান সব সময় পরিলক্ষিত হচেছ। অথচ পবিত্র কোরআন শরীফে পরিকল্পিত পরিবার গঠনের ব্যাপারে অনেক উদাহরন বিদ্যামান। যারা পরিকল্পনাহীন ভাবে ঘন ঘন সন্তান জন্ম দিচেছন তারা কি ভাবছেন না আল্লাহ তা'আলা প্রতিটি শিশুকে দুই থেকে আড়াই বছর মাতৃদুগ্ধপানের অধিকার দিয়েছেন





﴿وَٱلۡوَٰلِدَٰتُ يُرۡضِعۡنَ أَوۡلَٰدَهُنَّ حَوۡلَيۡنِ كَامِلَيۡنِۖ ﴾ [البقرة : 233 ]





মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুবছর দুধ পান করাবে।[45]





আল্লাহ তা'আলা অন্যত্র এরশাদ করেছেন





﴿ وَفِصَٰلُهُۥ ثَلَٰثُونَ شَهۡرًاۚ﴾ [الأحقاف : 15 ]





তার দুধপান করানোর সময়কাল ত্রিশ মাস।[46] আল্লাহর এ বানী দ্বারা শিশুর মাতৃদুগ্ধ পানের অধিকার ও দুধ পানের সময়সীমা বর্ননা করা হয়েছে। পরোক্ষভাবে এটাও বুঝানো উদ্দেশ্য যে মাতৃদুগ্ধ পানকালীন সময়ে সন্তান ধারণকারা উচিত হবে না। কারণ মাতৃগর্ভে সন্তান আসলে স্বাভাবিক নিয়মেই মায়ের দুধ বন্দ হয়ে যায়। ফলে শিশু দুধ পানের অধিকার হতে বঞ্চিত হয়। আল্লাহ্র এ নিদের্শনার দ্বারা আমরা পরিকল্পনার আভাস পাই। তাছাড়া ইসলামী শরীয়ত মা ও শিশু স্বাস্থ রক্ষার্থে সাময়িক জন্ম নিয়ন্ত্র বৈধ বলেছে। মহান আল্লাহ্ বলেন





আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার উপাদান হতে অতঃপর আমি উহাকে শুক্রবিন্দু রূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে, পরে শুক্র বিন্দুকে পরিনত করি আলাক এ অতঃপর আলাককে পরিনত করি পিন্ডে এবং পিন্ডকে পরিণত করি অস্থি পঞ্জরে অতঃপর অস্থি পঞ্জরকে ঢেকে দেয় গোসত দ্বারা অবশেষ উহাকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে অতঃপর সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ্ কত মহান[47]। এখানে আমরা মানুষ সৃষ্টির ক্ষেত্রে আল্লাহর পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে পাই। এছাড়া পবিত্র কোরআন ও হাদীসে এর অসংখ্য প্রমান রয়েছে। তাই একথা দ্বীধাহীন চিত্তে বলা যায় পরিকল্পনা বৈধই নয় বরং প্রতিটি ব্যক্তির জন্য আবশ্যক। তবে এর দ্বারা শুধুমাত্র জন্ম নিয়ন্ত্রন বুঝলে ভুল হবে। এর সাথে এটাও প্রমানিত হলো যে মানব সম্পদ উন্নয়নে পরিকল্পিত পরিবার গঠণের ভূমিকা অত্যাধিক।





জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে শিশু বলতে ১৮ বছরের কম বয়সী প্রতিটি মানব সন্তান যদিও শিশুদের জন্য প্রযোজ্য আইনের আওতায় আরো কম বয়সে সাবালকত্ব নির্ধারিত হয়ে থাকে।[48]





 



Recent Posts

সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ...

সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ক্ষেত্রে করণীয়

প্রতিবেশীর অধিকার ...

প্রতিবেশীর অধিকার

ঈদুল ফিতরের আনন্দ ও আ ...

ঈদুল ফিতরের আনন্দ ও আমাদের করণীয়

হজ-উমরার ফাযাইল ও উপক ...

হজ-উমরার ফাযাইল ও উপকারিতা