অনুবাদ: জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদনা: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
الحجاب لماذا؟
محمد بن أحمد بن إسماعيل المقدم
সূচীপত্র
ক্র
শিরোনাম
পৃষ্ঠা
১
ভূমিকা
২
পর্দার ফযীলত
৩
পর্দা করা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আনুগত্য ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ
৪
পর্দা নারীদের জন্য পবিত্রতা
৫
পর্দা নারীর আবরণ
৬
পর্দা করা ‘তাকওয়া’
৭
পর্দা লজ্জা
৮
পর্দা নারীদের জন্য আত্মমর্যাদা ও সম্মান
৯
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতার ক্ষতি
১০
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা মহাবিধ্বংসী কবিরা গুনাহ
১১
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা জাহান্নামীদের চরিত্র
১২
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা মুনাফেকি
১৩
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা আল্লাহর মাঝে ও বান্দার মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করে ও নারীদের জন্য অপমান
১৪
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা অশ্লীলতা
১৫
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা শয়তানের আদর্শ
১৬
সৌন্দর্য প্রদর্শন করা ইয়াহুদীদের সুন্নত
১৭
পর্দাহীনতা ও সৌন্দর্য প্রদর্শন নিকৃষ্ট জাহিলিয়্যাত
১৮
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা অধঃপতন ও পশ্চাদপরণ
১৯
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতার ক্ষতি ব্যাপক
২০
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতার ভয়াবহ পরিণতিসমূহ
২১
শরয়ী পর্দা অবলম্বন বিষয়ে যে সব শর্তাবলী একত্র হওয়া জরুরি
২২
আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম
ভূমিকা
الحمد لله رب العالمين, الرحمن الرحيم, مالكِ يوم الدين, والعاقبة للمتقين, ولا عدوان إلا على الظالمين.
اللَّهم صلِّ وسلِّم وبارِك على عبدك ورسولك محمد, وعلى آله وصحبه أجمعين.
সমস্ত প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীনের জন্য, যিনি অতিশয় দয়ালু ও পরম করুণাময় এবং যিনি বিচার দিনের মালিক। আর উত্তম পরিণতি কেবলই মুত্তাকীদের জন্য। একমাত্র যালিম ছাড়া আর কারো জন্য কোনো প্রকার শত্রুতা নেই। হে আল্লাহ! তুমি সালাত ও সালাম নাযিল কর এবং বরকত দান কর তোমার বান্দা ও তোমার রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এবং তার পরিবার-পরিজন ও তার সমস্ত সাহাবীদের ওপর। ‘আমীন’।
ইসলামী শরী‘আতের মাধ্যমে নারীরা অনেক বড় নি‘আমত, দয়া, সহানুভূতি ও উপকার লাভ করেছে। যেমন, ইসলাম নারীদের ইজ্জত-সম্মান ও পাক-পবিত্রতা রক্ষা করেছে এবং তাদের সম্ভ্রম রক্ষার গ্যারান্টি দিয়েছে। ইসলাম নারীদের উচ্চ মর্যাদার আসন দিয়েছে, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু নারীদের জন্য ইসলাম লেবাস-পোশাক, সৌন্দর্য প্রদর্শন ও চলা ফেরা ইত্যাদির ক্ষেত্রে যেসব বিধি-নিষেধ ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে, তা শুধু সামাজিক অনিষ্টতা ও ফিতনা-ফাসাদ থেকে বাঁচার যাবতীয় উপায় উপকরণের পথকে বন্ধ করার নিমিত্তেই করেছে। নারীদের প্রতি অবিচার কিংবা কোনো প্রকার বৈষম্য সৃষ্টির জন্য করে নি। ইসলাম তাদের জন্য বিধি-নিষেধ আরোপ করে তাদের স্বাধীনতা হরণ করা কিংবা তাদের গৃহবন্দী করার জন্য করে নি; বরং তারা যাতে তাদের জীবনে চলার পথে চরম অবনতি ও অপমানের খপ্পরে না পড়ে এবং তারা যাতে মানুষের দৃষ্টির লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত না হয়, তা থেকে বাঁচানোর জন্য ইসলাম বিধি-নিষেধ ও পর্দা করার বিধান নাযিল করেন।
আমরা আমাদের এ সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে পর্দার ফযিলত সম্পর্কে আলোচনা করব, যাতে পর্দার প্রতি নারীদের আগ্রহ তৈরি হয়। এ ছাড়াও পর্দার সৌন্দর্য, উত্তম পরিণতি ও ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করব, যাতে পর্দার প্রতি আগ্রহ থাকে। তারপর আলোচনা করব সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দা না করার ভয়াবহ পরিণতি, দুনিয়া ও আখিরাতে সৌন্দর্য প্রদর্শন বা পর্দাহীনতার কুফল। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের ইচ্ছার নিত্য সঙ্গী, তিনিই আমাদের সবকিছু এবং উত্তম অভিভাবক।
পর্দার ফযীলত
পর্দা করা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আনুগত্য ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার আনুগত্য করা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুকরণ করাকে মুমিনদের জন্য ওয়াজিব করেছেন[1]। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে করীমে বলেন,
“আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো নির্দেশ দিলে কোনো মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৬]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [النساء: ٦٥]
“অতএব, তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোনো দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৫]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নারীদেরকে পর্দা করার নির্দেশ দেন এবং বলেন,
“আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জা-স্থানের হিফাজত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ﴾ [الاحزاب: ٣٣]
“আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক- জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَإِذَا سَأَلۡتُمُوهُنَّ مَتَٰعٗا فَسَۡٔلُوهُنَّ مِن وَرَآءِ حِجَابٖۚ ذَٰلِكُمۡ أَطۡهَرُ لِقُلُوبِكُمۡ وَقُلُوبِهِنَّۚ﴾ [الاحزاب: ٥٣]
“আর যখন নবী-পত্নীদের কাছে তোমরা কোনো সামগ্রী চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে; এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৩]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ﴾ [الاحزاب: ٥٩]
“হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিল-বাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« المرأة عورة »
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নারীরা হলো, সতর। অর্থাৎ নারীদের জন্য পর্দা করা ওয়াজিব। [হাদীসটি সহীহ]
পর্দা নারীদের জন্য পবিত্রতা:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পর্দা করাকে পবিত্রতার শিরোনাম হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাব্বুল আলামীন বলেন,
“হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেওয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৪৯]
যাতে তারা তা ডেকে রাখতে পারে। কারণ, তারা হলো, সতী ও পবিত্রা নারী। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বাণী فَلَا يُؤۡذَيۡنَ ‘ফলে তাদেরকে কষ্ট দেওয়া হবে না’ এ কথা দ্বারা বুঝা যায়, নারীদের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানা দ্বারা তাদের কষ্ট দেওয়া এবং যারা দেখে তাদের ফিতনা ও অপরাধে জড়িত হওয়া।
আর বৃদ্ধ নারী যাদের যৌবনের হ্রাস পেয়েছে এবং তারা বিবাহের আশা করে না, তাদের জিলবাব ব্যবহার না করা, চেহারা ও কবজিদ্বয় খোলা রাখা দ্বারা ফিতনার আশংকা থাকে না তাদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পর্দা করার ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শনের অনুমতি দিয়েছেন। তাদের বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَٱلۡقَوَٰعِدُ مِنَ ٱلنِّسَآءِ ٱلَّٰتِي لَا يَرۡجُونَ نِكَاحٗا فَلَيۡسَ عَلَيۡهِنَّ جُنَاحٌ أَن يَضَعۡنَ ثِيَابَهُنَّ غَيۡرَ مُتَبَرِّجَٰتِۢ بِزِينَةٖۖ﴾ [النور: ٦٠]
“আর বৃদ্ধা নারীরা, যারা বিয়ের প্রত্যাশা করে না, তাদের জন্য কোনো দোষ নেই, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের কিছু পোষাক খুলে রাখে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬০]
আয়াতের ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলার বাণী أَن يَضَعۡنَ ثِيَابَهُنَّ غَيۡرَ مُتَبَرِّجَٰتِۢ بِزِينَةٖۖ–যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের কিছু পোশাক খুলে রাখে- এখানে তাদের জন্য কোনো দোষ নেই এ কথার অর্থ হলো, কোনো গুনাহ নেই। অর্থাৎ বয়স্ক বা বৃদ্ধা নারীরা যদি তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে পোশাক খুলে রাখে, তাতে তাদের কোনো গুনাহ হবে না। এ কথা বলার পরপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, وَأَن يَسۡتَعۡفِفۡنَ خَيۡرٞ لَّهُنَّۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٞ ‘আর যদি এ থেকে বিরত থাকে তবে তাদের জন্য অতি উত্তম’। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হিজাবকে বৃদ্ধা ও বয়স্ক নারীদের জন্য উত্তম বলে ঘোষণা করেন। সুতরাং যুবতী নারীদের জন্য পর্দা করা কত যে গুরুত্বপূর্ণ তা একটু চিন্তা করলেই আমরা বুঝতে পারব।
পর্দা নারীদের পবিত্রতা :
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِذَا سَأَلۡتُمُوهُنَّ مَتَٰعٗا فَسَۡٔلُوهُنَّ مِن وَرَآءِ حِجَابٖۚ ذَٰلِكُمۡ أَطۡهَرُ لِقُلُوبِكُمۡ وَقُلُوبِهِنَّۚ﴾ [الاحزاب: ٥٣]
“আর যখন নবী-পত্নীদের কাছে তোমরা কোনো সামগ্রী চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে; এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৩]
আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পর্দাকে মুমিন নারী ও মুমিন পুরুষের পবিত্রতা বলে আখ্যায়িত করেন। কারণ, যখন চোখ কোনো কিছু না দেখে, তখন তার প্রতি আকৃষ্ট হয় না। আর যখন চোখ দেখে, তখন অন্তর তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। তবে কোনো কোনো সময় নাও হতে পারে। এ কারণে যখন তারা নারীদের দেখবে না, তখন তাদের অন্তর পবিত্র থাকবে। তাদের মধ্যে কোনো ফিতনার আশঙ্কা দেখা যাবে না। কারণ, যখন নারীরা পর্দা করবে এবং পুরুষদের সামনে প্রকাশ্য হবে না তখন যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, তাদের আশা নিরাশায় পরিণত হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿فَلَا تَخۡضَعۡنَ بِٱلۡقَوۡلِ فَيَطۡمَعَ ٱلَّذِي فِي قَلۡبِهِۦ مَرَضٞ﴾ [الاحزاب: ٣٢]
“তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বল না, তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩২]
পর্দা নারীর আবরণ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إن الله تعالى حيِيٌّ سِتِّيرٌ يحب الحياء والستر»
মহান আল্লাহ লাজুক, গোপনকারী। তিনি লজ্জা ও গোপনীয়তা তথা পর্দা-শীলতাকে পছন্দ করেন। [হাদীসটি বিশুদ্ধ]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«أيما امرأةٍ نزعت ثيابها في غير بيتها خَرَقَ الله عز وجل عنها سِتْرَهُ»
“যদি কোনো নারী তার ঘরের বাহিরে স্বীয় কাপড় খুলে উলঙ্গ হয় এবং সতর খুলে ফেলে, মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার থেকে তার কাপড় খুলে ফেলবে”। [হাদীসটি বিশুদ্ধ]
আমলের বিনিময় আমলের মতোই হয়ে থাকে[2]।
পর্দা করা ‘তাকওয়া’
পর্দার অপর নাম তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়[3]। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ قَدۡ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكُمۡ لِبَاسٗا يُوَٰرِي سَوۡءَٰتِكُمۡ وَرِيشٗاۖ وَلِبَاسُ ٱلتَّقۡوَىٰ ذَٰلِكَ خَيۡرٞۚ﴾ [الاعراف: ٢٦]
“হে বনী আদম, আমরা তো তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকবে এবং যা সৌন্দর্যস্বরূপ। আর তাকওয়ার পোশাক, তা উত্তম”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৬২]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিন নারীদেরকে সম্বোধন করে পর্দা করার নির্দেশ দেন এবং বলেন,
﴿وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ﴾ [النور: ٣١]
“হে রাসূল আপনি মুমিন নারীদের বলে দিন।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]
অনুরূপভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অপর এক আয়াতে আরও বলেন,
﴿وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ﴾ [الاحزاب: ٥٩]
“হে মুমিনদের স্ত্রীগণ!”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯]
হাদীসে একটি ঘটনা বর্ণিত। বনী তামিম গোত্রের নারীরা একবার পাতলা কাপড় (যে কাপড়ে শরীর দেখা যায়) পরিধান করে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে প্রবেশ করল, তাদের দেখে তিনি বললেন,
«إن كنتن مؤمنات فليس هذا بلباس المؤمنات وإن كنتن غير مؤمناتٍ فتمتعن به»
“যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক, তবে তোমরা যে পোশাক পরিধান করেছ, তা কোনো মুমিন নারীদের পোশাক হতে পারে না। আর যদি তোমরা মুমিন না হয়ে থাক তবে তা উপভোগ করতে থাক”।
পর্দা লজ্জা
(পর্দা করা লজ্জার লক্ষণ, যাদের মধ্যে লজ্জা নেই, তাদের নিকট পর্দার কোনো গুরুত্ব নেই।) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إن لكل دين خُلُقًا وخُلُقُ الإسلام الحياء.»
“প্রতিটি দীনের একটি চরিত্র আছে, আর ইসলামের চরিত্র হলো, লজ্জা”। [হাদীসটি বিশুদ্ধ]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«الحياءُ من الإيمان والإيمان في الجنة»
“লজ্জা ঈমানের অঙ্গ আর ঈমানের গন্তব্য হলো জান্নাত”। [হাদীসটি বিশুদ্ধ]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«الحياء والإيمان قُرِنا جميعاً فإذا رُفِعَ أحدُهما, رُفِعَ الآخرُ»
“লজ্জা ও ঈমান উভয়টি একটি অপরটির সম্পূরক। যদি একটি শূন্য হয়, তখন অপরটিও শূন্য হয়ে যায়”। [হাদীসটি বিশুদ্ধ]
উম্মুল মুমীনিন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আমার পিতা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যে ঘরে দাফন করা হয়েছে, সে ঘরে আমি আমার কাপড় (ওড়না) খুলে প্রবেশ করতাম, আমি মনে মনে বলতাম, এরা আমার স্বামী ও পিতা। এখানে পর্দা করার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু যখন ওমর রা. কে একই ঘরে দাফন করা হলো, তখন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর লজ্জায় আমি সে ঘরে কাপড়কে শক্ত করে পেঁচিয়ে ও কঠিন পর্দা করে প্রবেশ করতাম। (হাদীসটিকে হাকিম সহীহ আখ্যায়িত করেন এবং হাদীসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক)
এতে একটি কথা প্রমাণিত হয়, নারীদের জন্য পর্দা শুধু শরিয়তের বিধানের ওপর নির্ভর নয়। বরং পর্দা হলো, নারীদের স্বভাবের সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নারীদের সৃষ্টিই করেছেন, লজ্জাবতী ও কোমলমতী করে। ফলে তাদেরকে তাদের স্বভাবই লজ্জা করতে অনেক সময় বাধ্য করে।
পর্দা নারীদের জন্য আত্মমর্যাদা ও সম্মান:
আত্ম-মর্যাদা ও আত্ম-সম্মানের সাথে পর্দার সম্পর্ক নিবীড় ও গভীর। মানব জাতিকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আত্ম-সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যার কারণে দেখা যায়, একজন মানুষ তার মেয়ে, বোন ও স্ত্রীদের প্রতি কোনো লম্পট বা চরিত্রহীন লোকের কু-দৃষ্টিকে বরদাশত করতে পারে না। তাদের সম্মানহানি হয়, এমন কোনো কাজ বা কর্মকে তারা কোনো ক্রমেই মেনে নিতে পারে না। ইসলাম পূর্ব যুগে এবং ইসলামের যুগে অনেক যুদ্ধ বিদ্রোহ ও হানাহানি নারীদের ইজ্জত সম্মান রক্ষার কারণেই সংঘটিত হয়েছিল। আলি ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
«بلغني أن نسائكم يزاحمن العُلُوجَ – أي الرجال الكفار من العَجَم – في الأسواق ألا تَغارون ؟ إنه لا خير فيمن لا يَغار»
“আমার নিকট সংবাদ পৌঁছেছে, তোমাদের নারীরা বাজারে পুরুষদের সাথে অবাধ মেলা-মেশা ও চলা-ফেরা করে। এতে কি তোমরা একটুও অপমান বোধ করো না, মনে রাখবে, যে ব্যক্তি এতে অপমানবোধ করে না, তার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই”।
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতার ক্ষতি :
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নাফরমানি ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবাধ্যতা:
যারা আল্লাহর নাফরমানি করে এবং আল্লাহর রাসূলের অবাধ্য হয়, তারা তাদের নিজেদের ক্ষতি করল। তারা আল্লাহর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«كل أمتي يدخلون الجنة إلا من أبى فقالوا : يا رسول الله من يأبى ؟ قال : من أطاعني دخل الجنة ومن عصاني فقد أبى».
“আমার সব উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে, তবে যারা অস্বীকার করে তারা ছাড়া। সাহাবী এ কথা শুনে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! যারা অস্বীকার করে তারা কারা? রাসূল বললেন, যে আমার অনুকরণ করল সে জান্নাতে প্রবেশ করল, আর যে আমার নাফরমানি করল, সে অস্বীকার করল”। (সহীহ বুখারী)
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা মহাবিধ্বংসী কবিরা গুনাহ:
হাদীসে বর্ণিত, উমাইমা বিনতে রাকিকাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আসল, ইসলামের ওপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করে বলল,