Articles




﴿ وَقُلۡنَا يَٰٓـَٔادَمُ ٱسۡكُنۡ أَنتَ وَزَوۡجُكَ ٱلۡجَنَّةَ وَكُلَا مِنۡهَا رَغَدًا حَيۡثُ شِئۡتُمَا وَلَا تَقۡرَبَا هَٰذِهِ ٱلشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٣٥ ﴾ [البقرة: ٣٥]





৩৫. আর আমি বললাম, ‘হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং তা থেকে আহার কর স্বাচ্ছন্দ্যে, তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী এবং এ গাছটির নিকটবর্তী হয়ো না,৪০ তাহলে তোমরা যালিমদের৪১ অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’।





৪০. পৃথিবীতে পাঠানোর আগে প্রথম মানব-মানবীকে জান্নাতে রেখে তাদের মানসিক প্রবণতা উন্মোচিত করার উদ্দেশ্যে এ পরীক্ষা। এতে একটি গাছ নির্দিষ্ট করে তার কাছে যেতে নিষেধ করা হয়। আর তা অমান্যের পরিণামও জানিয়ে দেওয়া হয়। সে গাছটি কি, তার ফলের নাম কি, তাতে কি প্রাকৃতিক দোষ ছিল ইত্যাদি এখানে গৌণ। মূলতঃ এটি ছিল একটি নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে পরীক্ষা।





আর এখানে জান্নাতকে পরীক্ষাক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেওয়ার উদ্দেশ্য হলো মানুষকে একথা বুঝিয়ে দেওয়া যে, মানবিক মর্যাদার প্রেক্ষিতে জান্নাতই তাদের উপযোগী স্থায়ী বাসস্থান; কিন্তু অভিশপ্ত শয়তান নিরবচ্ছিন্ন প্ররোচনার মাধ্যমে মানুষকে তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ও বিমুখ করে জান্নাত থেকে বের করে জাহান্নামে তার সঙ্গী করার চেষ্টায় রত। তাই পরম করুণাময়ের ক্ষমা ও জান্নাত লাভের জন্য মানুষকে সজাগ থেকে সে কুমন্ত্রণাদানকারী শয়তানের সফল মোকাবিলা করতে হবে।





৪১. 'যালিম' শব্দটি গভীর অর্থবোধক। 'যুলুম' বলা হয়, কোনো জিনিসকে তার নির্ধারিত জায়গায় না রেখে ভিন্ন জায়গায় রাখা। সে হিসেবে সকল অন্যায়-অনাচার-অধিকার হরণকে যুলুম বলা হয়। অতঃপর যে ব্যক্তি কারো অধিকার হরণ করে সে যালিম। যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশনাবলী অমান্য করে এবং সীমালংঘনে সক্রিয় হয়, সে আসলে ৩টি বড় বড় মৌলিক অধিকার হরণ করে:





ক. প্রথমত সে আল্লাহর অধিকার হরণ করে। কারণ আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালনকারী আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালন করতে হবে, এটা আল্লাহর অধিকার।





খ. দ্বিতীয়ত আল্লাহর নির্দেশনাবলী অমান্য করতে গিয়ে সে যেসব উপকরণ ব্যবহার করে তাদের সবার অধিকার ক্ষুন্ন করে। কারণ তার বিবেক-বুদ্ধি, যোগ্যতা, ক্ষমতা, দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, তার সাথে বসবাসকারী সমাজের অন্যান্য লোক, তার ইচ্ছা ও সংকল্প পূর্ণ করার ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ফিরিশতাগণ এবং যে সব বস্তু-সামগ্রী সে তার কাজে ব্যবহার করে – এদের সবার ওপর তার অধিকার ছিল যে, এদেরকে কেবলমাত্র এদের মালিক তথা আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী ব্যবহার করবে; কিন্তু তাঁর নির্দেশনার বিরুদ্ধে এসব ব্যবহার করায় তাদের ওপর যুলুম করা হয়।





গ. তৃতীয়ত সে তার নিজের অধিকার হরণ করে। কারণ তার নিজের সত্ত্বাকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করা তার দায়িত্ব; কিন্তু অমান্যকারী ও বিদ্রোহী হয়ে যখন সে নিজেকে আল্লাহর শাস্তিলাভের যোগ্য করে তোলে, তখন সে আসলে তার আপন ব্যক্তিসত্ত্বার ওপরই যুলুম করে।





এসব কারণে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে 'গুনাহ' শব্দটির জন্য 'যুলুম' আর 'গুনাহগার' শব্দটির জন্য 'যালিম' পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে।





﴿ فَأَزَلَّهُمَا ٱلشَّيۡطَٰنُ عَنۡهَا فَأَخۡرَجَهُمَا مِمَّا كَانَا فِيهِۖ وَقُلۡنَا ٱهۡبِطُواْ بَعۡضُكُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوّٞۖ وَلَكُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ مُسۡتَقَرّٞ وَمَتَٰعٌ إِلَىٰ حِينٖ ٣٦ ﴾ [البقرة: ٣٦]





৩৬. অতঃপর শয়তান তাদেরকে জান্নাত থেকে স্খলিত করল। অতঃপর তারা যাতে ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে দিল, আর আমি বললাম, ‘তোমরা নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রু৪২। আর তোমাদের জন্য যমীনে রয়েছে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আবাস ও ভোগ-উপকরণ’।





৪২. অর্থাৎ মানুষের শত্রু শয়তান এবং শয়তানের শত্রু মানুষ। শয়তান মানুষের শত্রু, একথা সুস্পষ্ট। কারণ সে মানুষকে আল্লাহর নির্দেশনার পথ থেকে সরিয়ে অজ্ঞতা ও ধ্বংসের পথে পরিচালনা করার চেষ্টা করে; কিন্তু শয়তানের শত্রু মানুষ – একথার অর্থ কি? বস্তুতঃ মানুষের সঠিক পথে অবিচল থাকার স্বার্থে তাকে শয়তানের প্রতি শত্রুতার মনোভাব পোষণ করা অপরিহার্য। কারণ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার সামনে শয়তান যে সব আকর্ষণীয় প্রলোভন অথবা ভয়-ভীতি বা ক্ষয়-ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে, মানুষ তাতে প্রতারিত হয়ে তাকে নিজের বন্ধু ভেবে বসে। ফলে ক্ষেত্রবিশেষে আপাতঃ দৃষ্টিতে যৌক্তিক কিন্তু প্রকৃত বিবেচনায় সত্য ও সুন্দর থেকে বিচ্যুত বা আরেকটু অগ্রসর হয়ে সে সত্য-বিমুখ হয়ে পড়ে। যা তাকে ঈমান, জ্ঞান ও সততার আলোকিত রাজপথ থেকে সরিয়ে অন্ধকার অলি-গলিতে চলতে তৃপ্তি দেয় তথা ধ্বংসের মুখোমুখি এনে দাঁড় করায়। তাই সত্যপন্থীদেরকে তাদের আত্মরক্ষার লক্ষ্যেই শয়তান, তার কুমন্ত্রণা, তার উৎস এবং সহযোগীদের থেকে সচেতনভাবে দূরে থেকে তার বিরোধিতা করে যেতে হবে আর সব সময় চাইতে হবে আল্লাহর সাহায্য। (দেখুন: সূরা আন-নাস)





﴿ فَتَلَقَّىٰٓ ءَادَمُ مِن رَّبِّهِۦ كَلِمَٰتٖ فَتَابَ عَلَيۡهِۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ ٣٧ ﴾ [البقرة: ٣٧]





৩৭. অতঃপর আদম তার রবের পক্ষ থেকে কিছু বাণী পেলো৪৩ ফলে আল্লাহ তার তাওবা৪৪ কবুল করলেন। নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুলকারী, অতি দয়ালু।৪৫





৪৩. দয়াময় আল্লাহ আদম ‘আলাইহিস সালামকে তাওবার বা অনুশোচনার যে বাক্যগুলো শিখিয়ে দেন তা রয়েছে সূরা আল-আ'রাফের ২৩ নং আয়াতে –





﴿ رَبَّنَا ظَلَمۡنَآ أَنفُسَنَا وَإِن لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَتَرۡحَمۡنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٢٣ ﴾ [الاعراف: ٢٣]





হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিজেদের ওপর যুলুম করেছি। এখন যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি রহম না করেন, তাহলে নিঃসন্দেহে আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো।





৪৪. 'তাওবা' অর্থ প্রত্যাবর্তন করা, ফিরে আসা। কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং প্রকৃত আত্মোপলব্ধি ও বাস্তব কর্ম-সংশোধন, ভবিষ্যতে পাপ না করার সংকল্পের সাথে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা।





৪৫. 'পাপের পরিণামে শাস্তি অবশ্যম্ভাবী এবং মানুষকে তা যে কোনো অবস্থাতেই ভোগ করতে হবে, ক্ষমার কোন সুযোগ তার নেই' – এটি মানুষের স্বকল্পিত ভ্রষ্টকারী মতবাদের একটি। কেননা যে ব্যক্তি একবার পাপ-পঙ্কিল জীবনে প্রবেশ করে, এ মতবাদ তাকে চিরদিনের জন্য নিরাশ করে দেয়।





এক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। এখানে যে কোনো মুহূর্তে ভুল বুঝতে পারলে তার স্বীকৃতি দিয়ে, লজ্জিত হয়ে, তাৎক্ষণিকভাবে তা পরিত্যাগ করে, অনুশোচনা করে এবং অমান্য, অবহেলা আর বিদ্রোহের পথ ত্যাগ করে করুণাময় আল্লাহর আনুগত্য, নৈকট্য ও ক্ষমার দিকে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে উন্মুক্ত ও অবারিত। তবে অবশ্যই তা হতে হবে আন্তরিকতাপূর্ণ ও কার্যকরী।





আরেকটি বিষয় হলো, কোনো ভুল উপলব্ধির পরও নিস্ক্রিয় থেকে – সময় ক্ষেপণ করে – তা থেকে ফিরে আসার শুধু পরিকল্পনা করতে থাকা এক ধরনের নির্বুদ্ধিতা ও ক্ষতিকারক প্রবৃত্তি। কারণ 'ভবিষ্যতে' তাওবা করার উপযুক্ত 'সময় ও সুযোগ' পাওয়া সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। তাই যখনই বিচ্যুতি বা ভুল করে ফেলা বা বুঝতে পারা – অনুতাপের সময় তখনই, সংশোধিত হতে হবে অনতিবিলম্বে, দয়াময় আল্লাহর করুণা, ক্ষমা ও রহমত লাভের মাধ্যমে ফিরে আসতে হবে সত্য, সুন্দর আর সাফল্যের পথে।





﴿ قُلۡنَا ٱهۡبِطُواْ مِنۡهَا جَمِيعٗاۖ فَإِمَّا يَأۡتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدٗى فَمَن تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ٣٨ ﴾ [البقرة: ٣٨]





৩৮. আমি বললাম, ‘তোমরা সবাই তা থেকে নেমে যাও।৪৮ অতঃপর যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে কোনো হিদায়াত৪৯ আসবে, তখন যারা আমার হিদায়াত অনুসরণ করবে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না’।৫০





৪৮. এ বাক্যটির পুনরাবৃত্তি তাৎপর্যপূর্ণ। ৩৬নং আয়াতেও ছিল একই বাণী। সেখানে 'জান্নাত থেকে নেমে যাও' অর্থ মানুষকে তার কর্মস্থল তথা পৃথিবীতে চাষাবাদ ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে ইবাদত-দাসত্বের দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করা হলো। আর সে মিশনে সার্বক্ষণিক প্ররোচক ও শত্রু হিসেবে ধৃষ্টতা প্রদর্শনকারী শয়তানকে পরিচিত করে দেওয়া হলো। এরপর (৩৭নং আয়াত) আদম ‘আলাইহিস সালাম তাওবা করলেন এবং মহান আল্লাহ তা কবুল করে নিলেন। এখন আর কোনো তিরস্কার না, বরং তাঁকে মহান নবুওয়াতের দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হলো। কাজেই একটি ভুলের কারণে পৃথিবীতে মানুষকে আসতে হলো– এটি নিরেট ভ্রান্ত ধারণা।





৪৯. যুগে যুগে আল্লাহর মনোনীত শ্রেষ্ঠতম মানুষদের মাধ্যমে বিশ্বমানবতার কাছে পৌঁছে গেছে সে সব পথ-নির্দেশ। সে ধারাবাহিকতার সর্বশেষ নির্দেশনা হলো আল-কুরআন।





৫০. দুনিয়া ও আখিরাতে সুখ, শান্তি, স্বস্তি, প্রকৃত সাফল্য ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা।





﴿ وَٱلَّذِينَ كَفَرُواْ وَكَذَّبُواْ بِ‍َٔايَٰتِنَآ أُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلنَّارِۖ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٣٩ ﴾ [البقرة: ٣٩]





৩৯. আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।





﴿ يَٰبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ ٱذۡكُرُواْ نِعۡمَتِيَ ٱلَّتِيٓ أَنۡعَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ وَأَوۡفُواْ بِعَهۡدِيٓ أُوفِ بِعَهۡدِكُمۡ وَإِيَّٰيَ فَٱرۡهَبُونِ ٤٠ ﴾ [البقرة: ٤٠]





৪০. হে বনী ইসরাঈল৫১! তোমরা আমার নিয়ামতকে স্মরণ কর, যে নিয়ামত আমি তোমাদেরকে দিয়েছি এবং তোমরা আমার অঙ্গীকার পূর্ণ কর, তাহলে আমি তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করব। আর কেবল আমাকেই ভয় কর।





৫১. 'ইসরাঈল' শব্দের অর্থ আব্দুল্লাহ বা আল্লাহর বান্দাহ। এটি ইয়াকুব ‘আলাইহিস সালামের আল্লাহ-প্রদত্ত উপাধি। তিনি ইসহাক ‘আলাইহিস সালামের পুত্র ও ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের প্রপুত্র। তাঁরই বংশধরকে বলা হয় বনী ইসরাঈল। এ জাতিধারায় মনোনীত হয়ে এসেছেন অগণিত নবী ও রাসূলগণ। ইউসুফ, ইউনুস, আইউব, দাউদ, সোলাইমান, যাকারিয়া, ইয়াহহিয়া, মূসা, হারূন আ'লাইহিমুস সালামসহ আমাদের অজানা আরো অনেক নবী-রাসূলগণের ধারাবাহিকতায় ঐ বংশ-ধারার শেষে আগমন করেছেন ঈসা ‘আলাইহিস সালাম। আর ইসমাঈল ‘আলাইহিস সালামের বংশ-ধারায় আগমন করেন বিশ্ব-জাহানের সর্বশেষ নবী রাহমাতুল্লিল আ'লামীন মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম।





﴿ وَءَامِنُواْ بِمَآ أَنزَلۡتُ مُصَدِّقٗا لِّمَا مَعَكُمۡ وَلَا تَكُونُوٓاْ أَوَّلَ كَافِرِۢ بِهِۦۖ وَلَا تَشۡتَرُواْ بِ‍َٔايَٰتِي ثَمَنٗا قَلِيلٗا وَإِيَّٰيَ فَٱتَّقُونِ ٤١ ﴾ [البقرة: ٤١]





৪১. আর তোমাদের সাথে যা আছে তার সত্যায়নকারীস্বরূপ আমি যা নাযিল করেছি তার প্রতি তোমরা ঈমান আন।৫২ এবং তোমরা তা প্রথম অস্বীকারকারী হয়ো না। আর তোমরা আমার আয়াতসমূহ সামান্যমূল্যে বিক্রি করো না৫৩ এবং কেবল আমাকেই ভয় কর।





৫২. বনী ইসরাঈলের সাথে মহান রাব্বুল আ'লামীনের যে অঙ্গীকারগুলো ছিলো, আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় তার বর্ণনা চলছে।





৫৩. 'সামান্য দাম' বলে দুনিয়ার স্বার্থ ও লাভের কথা বুঝানো হয়েছে। এ অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী ও সাময়িক অর্জনের ধোঁকায় পড়ে মানুষ শয়তানের প্ররোচনায় মহান আল্লাহর আদেশ-নিষেধ ও উপদেশকে সুকৌশলে পাশ কাটিয়ে বা আরেকটু অগ্রসর হয়ে প্রত্যাখ্যান করার চেষ্টায় লিপ্ত হয় এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভের সত্য ও সুন্দরের পথ থেকে দূরে চলে যায়।





এক্ষেত্রে সাধারণের চেয়ে সমাজে যারা বিভিন্নভাবে দিক-নির্দেশনা ও নেতৃত্ব দানের সাথে জড়িত, তাদের যথেষ্ট উপলব্ধির ও সতর্ক হবার অবকাশ রয়েছে। কোনো কিছুর স্পষ্টকরণ বা ব্যাখ্যা প্রদানে অযাচিত ও অন্যায়ভাবে কারো পক্ষ নেওয়া, কারো মনোতুষ্টি বা বিরাগভাজন হওয়া, জনপ্রিয়তা ও পদ-পদবীলাভ বা তা সংরক্ষণ অথবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো বৈষয়িক অর্জনকে সচেতনভাবে পরিহার করতে হবে। শুধুমাত্র মহান অন্তর্যামী আল্লাহ ও তাঁর ক্রোধকে ভয় করে, তাঁর নিষ্ঠাবান প্রতিনিধির উপযুক্ত মেজাজ ও দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে রেখে একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টি ও নৈকট্যলাভের কথা বিবেচনা করে আল্লাহ-প্রদত্ত নির্দেশনাবলীর অনুসরণ করে যেতে হবে।





﴿ وَلَا تَلۡبِسُواْ ٱلۡحَقَّ بِٱلۡبَٰطِلِ وَتَكۡتُمُواْ ٱلۡحَقَّ وَأَنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٤٢ ﴾ [البقرة: ٤٢]





৪২. আর৫৪ তোমরা হককে বাতিলের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে-বুঝে হককে গোপন করো না।৫৫





৫৪. বনী ইসরাঈলের সাথে মহান রাব্বুল আ'লামীনের যে অঙ্গীকারগুলো ছিলো, আগের আয়াতসমূহের ধারাবাহিকতায় তার বর্ণনা চলছে।





৫৫. তৎকালীন আরববাসীদের মধ্যে খ্রিস্টান বিশেষতঃ ইয়াহূদীরা যথেষ্ট শিক্ষিত ছিল। ফলে সাধারণ আরবরা মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নবুয়ত প্রসঙ্গে শিক্ষিত ইয়াহূদী পুরোহিতদের কাছে জানতে চাইত; কিন্তু তাদের আসমানী কিতাবের ভবিষ্যতবাণী অনুযায়ী সুস্পষ্ট ও নির্ভুল বৈশিষ্ট্য ও প্রমাণাদি লক্ষ্য করেও তারা সত্য-মিথ্যাকে মিশ্রিত করে বা গোপন করে প্রিয়নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি ও সন্দেহ সঞ্চার করতে থাকে।





আরো জানতে দেখুন:





সূরা নং- ২ আল-বাকারা: ১১১, ১১৩, ১৩৫, ১৪০





সূরা নং- ৩ আলে-ইমরান: ৬৭





সূরা নং- ৪ আন-নিসা: ৪৬





সূরা নং- ৫ আল-মায়িদা: ১৮, ৪১, ৪৪, ৬৪, ৮২





সূরা নং- ৭ আল-আ’রাফ: ১৬৭





সূরা নং- ৬১ আস-সাফ্‌: ৫-৬





এছাড়া মহান আল্লাহ তা‘আলার চিরন্তন এ বাণী থেকে আমরা সত্য ও মিথ্যার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ কি হওয়া উচিত সে নির্দেশনাও পাই।





﴿ وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱرۡكَعُواْ مَعَ ٱلرَّٰكِعِينَ ٤٣ ﴾ [البقرة: ٤٣]





৪৩. আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর৫৭ এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ কর।৫৮





৫৬. বনী ইসরাঈলের প্রতি মহান রাব্বুল আ'লামীনের যে নির্দেশনাগুলো ছিলো, সে আলোচনাই এখানে চলমান।





৫৭. সালাত ও যাকাত প্রতি যুগে যুগে দ্বীন ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত হয়ে এসেছে; কিন্তু ইয়াহূদীরা এ ব্যাপারে অনীহা প্রদর্শন করে জামা‘আতে সালাত পড়ার ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত প্রায় বিলুপ্ত করে বেশির ভাগ লোক ব্যক্তিগত পর্যায়ে সালাত ছেড়ে দেয়। আর যাকাত দেয়ার পরিবর্তে তারা অভ্যস্ত ছিলো সুদের ব্যবসায়।





এখানে আমাদেরও ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায়ে সালাত ও যাকাত অনুশীলনে উপলব্ধির অবকাশ রয়েছে।





৫৮. পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতগুলো জামা‘আতে আদায় করার তাকিদ।





﴿ ۞أَتَأۡمُرُونَ ٱلنَّاسَ بِٱلۡبِرِّ وَتَنسَوۡنَ أَنفُسَكُمۡ وَأَنتُمۡ تَتۡلُونَ ٱلۡكِتَٰبَۚ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ ٤٤ ﴾ [البقرة: ٤٤]





৪৪. তোমরা কি মানুষকে ভালো কাজের আদেশ দিচ্ছ আর নিজেদেরকে ভুলে যাচ্ছ? অথচ তোমরা কিতাব তিলাওয়াত কর।৫৯ তোমরা কি বুঝো না?





৫৯. হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা এমন কথা কেন বলো, যা কার্যতঃ করো না? আল্লাহর কাছে এটি অত্যন্ত ক্রোধ উদ্রেককারী ব্যাপার যে, তোমরা বলবে এমন কথা, যা করো না। [সূরা আস-সাফ, আয়াত: ২-৩]





﴿ وَٱسۡتَعِينُواْ بِٱلصَّبۡرِ وَٱلصَّلَوٰةِۚ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى ٱلۡخَٰشِعِينَ ٤٥ ﴾ [البقرة: ٤٥]





৪৫. আর তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় তা বিনয়ী ছাড়া অন্যদের ওপর কঠিন।





﴿ ٱلَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُم مُّلَٰقُواْ رَبِّهِمۡ وَأَنَّهُمۡ إِلَيۡهِ رَٰجِعُونَ ٤٦ ﴾ [البقرة: ٤٦]





৪৬. যারা বিশ্বাস করে যে, তারা তাদের রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে এবং তারা তাঁর দিকে ফিরে যাবে।





﴿ يَٰبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ ٱذۡكُرُواْ نِعۡمَتِيَ ٱلَّتِيٓ أَنۡعَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ وَأَنِّي فَضَّلۡتُكُمۡ عَلَى ٱلۡعَٰلَمِينَ ٤٧ ﴾ [البقرة: ٤٧]





৪৭. হে বনী ইসরাঈল, তোমরা আমার নি‘আমতকে স্মরণ কর, যে নি‘আমত আমি তোমাদেরকে দিয়েছি এবং নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে বিশ্ববাসীর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।৬০





৬০. এখানে সে যুগের কথা বলা হয়েছে, যখন দুনিয়ার সব জাতির মধ্যে একমাত্র বনী ইসরাঈল বা ইয়াহূদীদের কাছে আল্লাহ-প্রদত্ত সত্যজ্ঞান ছিল এবং তাদেরকেই বিশ্বের জাতিসমূহের নেতৃত্বের পদে অধিষ্ঠিত করা হয়েছিল। অন্যান্য জাতিদেরকে আল্লাহর বন্দেগী ও দাসত্বের পথে আহবান করা ছিল তাদের দায়িত্ব।





﴿ وَٱتَّقُواْ يَوۡمٗا لَّا تَجۡزِي نَفۡسٌ عَن نَّفۡسٖ شَيۡ‍ٔٗا وَلَا يُقۡبَلُ مِنۡهَا شَفَٰعَةٞ وَلَا يُؤۡخَذُ مِنۡهَا عَدۡلٞ وَلَا هُمۡ يُنصَرُونَ ٤٨ ﴾ [البقرة: ٤٨]





৪৮. আর তোমরা সে দিনকে ভয় কর, যেদিন কেউ কারো কোনো কাজে আসবে না। আর কারো পক্ষ থেকে কোনো সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না এবং কারো কাছ থেকে কোনো বিনিময় নেওয়া হবে না। আর তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। ৬১





৬১. 'জবাবদিহির দিনের' কথা ভুলে যাওয়ার ফলেই বনী ইসরাঈলের মাঝে চরম পদস্খলন ঘটেছিল। বস্তুতঃ আখিরাত তথা মৃত্যু পরবর্তী অবস্থা, কিয়ামত, পুনরুত্থান, হাশর, জবাবদিহি ও অনন্তকালের জীবন সম্পর্কিত সুস্পষ্ট ধারণা, বিশ্বাস ও প্রত্যয়ের ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি বা দুর্বলতাই মানুষের চরিত্র ও জীবনধারায় বিকৃতির অন্যতম প্রধান কারণ। তাই তো মানুষের প্রকৃত কল্যাণকামী প্রতিপালক আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন পবিত্র কুরআনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জুড়ে বর্ণনা করেছেন আখিরাতের কথা।





﴿ وَإِذۡ نَجَّيۡنَٰكُم مِّنۡ ءَالِ فِرۡعَوۡنَ يَسُومُونَكُمۡ سُوٓءَ ٱلۡعَذَابِ يُذَبِّحُونَ أَبۡنَآءَكُمۡ وَيَسۡتَحۡيُونَ نِسَآءَكُمۡۚ وَفِي ذَٰلِكُم بَلَآءٞ مِّن رَّبِّكُمۡ عَظِيمٞ ٤٩ ﴾ [البقرة: ٤٩]





৪৯. আর স্মরণ কর,৬২ যখন আমি তোমাদেরকে ফিরআউনের দল থেকে রক্ষা করেছিলাম। তারা তোমাদেরকে কঠিন আযাব দিত। তোমাদের পুত্র সন্তানদেরকে যবেহ করত এবং তোমাদের নারীদেরকে বাঁচিয়ে রাখত। আর এতে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে ছিল মহা পরীক্ষা।





৬২. এখান থেকে পরবর্তী কয়েক রুকূ ক্রমাগতভাবে বনী ইসরাঈলের ইতিহাসের বিশেষ বিশেষ অংশ তুলে ধরা হয়েছে। এখানে একদিকে তাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত দয়া-অনুগ্রহ, অপরদিকে তার বিপরীতে তাদের সীমাহীন অকৃতজ্ঞতা ও দুষ্কর্মের সারাংশ বর্ণনা করা হয়েছে।





﴿ وَإِذۡ فَرَقۡنَا بِكُمُ ٱلۡبَحۡرَ فَأَنجَيۡنَٰكُمۡ وَأَغۡرَقۡنَآ ءَالَ فِرۡعَوۡنَ وَأَنتُمۡ تَنظُرُونَ ٥٠ ﴾ [البقرة: ٥٠]





৫০. আর যখন তোমাদের জন্য আমি সমুদ্রকে বিভক্ত করেছিলাম, অতঃপর তোমাদেরকে নাজাত দিয়েছিলাম এবং ফির‘আউন দলকে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম, আর তোমরা দেখছিলে।





﴿ وَإِذۡ وَٰعَدۡنَا مُوسَىٰٓ أَرۡبَعِينَ لَيۡلَةٗ ثُمَّ ٱتَّخَذۡتُمُ ٱلۡعِجۡلَ مِنۢ بَعۡدِهِۦ وَأَنتُمۡ ظَٰلِمُونَ ٥١ ﴾ [البقرة: ٥١] ﴾





৫১. আর যখন আমি মূসাকে চল্লিশ রাতের ওয়াদা দিয়েছিলাম,৬৪ অতঃপর তোমরা তার যাওয়ার পর বাছুরকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করেছিলে,৬৫ আর তোমরা ছিলে যালিম।





৬৪. মিশর থেকে মূসা ‘আলাইহিস সালামের নেতৃত্বে মুক্তি লাভের পর বনী ইসরাঈল বা ইয়াহূদীরা যখন সাইনা (সিনাই) উপত্যকায় পৌঁছে, তখন মহান আল্লাহ তাঁকে ৪০ দিন-রাতের জন্য তূর পাহাড়ে ডেকে নেন। ফিরাউনের দাসত্ব থেকে এখন মুক্ত জাতিটির জন্য জীবন-যাপনের বিধান দান করাই ছিল এর উদ্দেশ্য।





৬৫. সিনাই উপত্যকায় বনী ইসরাঈলের বসবাসের স্থানে প্রতিবেশি গোত্রদের মধ্যে গাভী ও ষাঁড় পূজার প্রথা বিদ্যমান ছিল। তা থেকে প্রভাবিত হয়ে এবং শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে তারা মূসা ‘আলাইহিস সালাম-এর অনুপস্থিতিতে এবং হারুন ‘আলাইহিস সালামকে অগ্রাহ্য করে বাছুর আকৃতির মূর্তি নির্মাণ করে তার পূজা করতে শুরু করে।





﴿ ثُمَّ عَفَوۡنَا عَنكُم مِّنۢ بَعۡدِ ذَٰلِكَ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ٥٢ ﴾ [البقرة: ٥٢]





৫২. অতঃপর আমি তোমাদেরকে এ সবের পর ক্ষমা করেছি, যাতে তোমরা শোকর আদায় কর।





﴿ وَإِذۡ ءَاتَيۡنَا مُوسَى ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡفُرۡقَانَ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُونَ ٥٣ ﴾ [البقرة: ٥٣]





৫৩. আর যখন আমি মূসাকে দিয়েছিলাম কিতাব ও ফুরকান৬৭ যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।





৬৭. ফুরকান হচ্ছে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য সুস্পষ্টকারী 'মানদণ্ড'। এর মর্মার্থ হলো দ্বীনের এমন জ্ঞান, বোধ (perception) ও উপলব্ধি যার মাধ্যমে মানুষ সঠিক ও সত্য এবং মিথ্যা ও বিকৃতিকে পৃথক করে চিনে নিতে পারে।





﴿ وَإِذۡ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوۡمِهِۦ يَٰقَوۡمِ إِنَّكُمۡ ظَلَمۡتُمۡ أَنفُسَكُم بِٱتِّخَاذِكُمُ ٱلۡعِجۡلَ فَتُوبُوٓاْ إِلَىٰ بَارِئِكُمۡ فَٱقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ عِندَ بَارِئِكُمۡ فَتَابَ عَلَيۡكُمۡۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ ٥٤ ﴾ [البقرة: ٥٤]





৫৪. আর যখন মূসা তার কওমকে বলেছিল, ‘হে আমার কওম, নিশ্চয় তোমরা বাছুরকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করে নিজদেরকে যুলুম করেছ। সুতরাং তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে তাওবা কর। অতঃপর তোমরা নিজেদেরকে হত্যা কর।৬৮ এটি তোমাদের জন্য তোমাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট উত্তম। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের তাওবা কবুল করলেন। নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।





৬৮. অর্থাৎ তাদের মধ্যে যেসব লোক গো-শাবককে উপাস্য বানিয়ে তার পূজা করেছে তাদেরকে হত্যা করো।





﴿ وَإِذۡ قُلۡتُمۡ يَٰمُوسَىٰ لَن نُّؤۡمِنَ لَكَ حَتَّىٰ نَرَى ٱللَّهَ جَهۡرَةٗ فَأَخَذَتۡكُمُ ٱلصَّٰعِقَةُ وَأَنتُمۡ تَنظُرُونَ ٥٥ ﴾ [البقرة: ٥٥]





৫৫. আর যখন তোমরা বললে, ‘হে মূসা, আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনব না, যতক্ষণ না আমরা প্রকাশ্যে আল্লাহকে দেখি’। ফলে বজ্র তোমাদেরকে পাকড়াও করল আর তোমরা তা দেখছিলে।





﴿ ثُمَّ بَعَثۡنَٰكُم مِّنۢ بَعۡدِ مَوۡتِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ٥٦ ﴾ [البقرة: ٥٦]





৫৬. অতঃপর আমি তোমাদের মৃত্যুর পর তোমাদেরকে পুনর্জীবন দান করলাম, যাতে তোমরা শোকর আদায় কর।৬৯





৬৯. এখানে ইঙ্গিতকৃত ঘটনাটি হলো, মূসা ‘আলাইহিস সালাম ৪০ দিনের জন্য তূর পাহাড়ে গমনের সময় মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী বনী ইসরাঈল থেকে ৭০জন বাছাইকৃত ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে যান। অতঃপর তাঁকে সেখানে 'কিতাব ও ফুরকান' দেওয়া হলে (দেখুন: আল-বাকারা, আয়াত: ৫৩) তিনি সেগুলো উক্ত ব্যক্তিদেরকে প্রদর্শন করেন। তখন এসবের মধ্য থেকে কিছু দুষ্ট প্রকৃতির লোক ধৃষ্টতার সাথে একথা বলতে থাকে যে, আল্লাহকে দৃশ্যমান আকারে আমাদেরকে দেখাও। তাদের ঐ আচরণের প্রেক্ষিতে তাদের ওপর আল্লাহর গযব নাযিল হয়।





আরো জানতে দেখুন: সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত: ১৫৫।





﴿ وَظَلَّلۡنَا عَلَيۡكُمُ ٱلۡغَمَامَ وَأَنزَلۡنَا عَلَيۡكُمُ ٱلۡمَنَّ وَٱلسَّلۡوَىٰۖ كُلُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا رَزَقۡنَٰكُمۡۚ وَمَا ظَلَمُونَا وَلَٰكِن كَانُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ يَظۡلِمُونَ ٥٧ ﴾ [البقرة: ٥٧]





৫৭. আর আমি তোমাদের ওপর মেঘের ছায়া দিলাম৭০ এবং তোমাদের প্রতি নাযিল করলাম ‘মান্না’ ও ‘সালওয়া’।৭১ তোমরা সে পবিত্র বস্তু থেকে আহার কর, যা আমি তোমাদেরকে দিয়েছি। আর তারা আমার প্রতি যুলুম করেনি, বরং তারা নিজেদেরকেই যুলুম করত।





৭০. মিশর থেকে প্রস্থানকালে বনী ইসরাঈলের সংখ্যা ছিল এক লাখের মত। আর সিনাই উপদ্বীপে ঘর-বাড়ী তো দূরের কথা, মাথা গোঁজার কোনো ঠাঁই পর্যন্ত ছিল না। তখন মহান আল্লাহ যদি দীর্ঘকাল পর্যন্ত আকাশকে মেঘাচ্ছন্ন না রাখতেন, তাহলে এ জাতি প্রখর রোদে ধ্বংস হয়ে যেতো।





৭১. 'মান্না' এক প্রকার আঠা জাতীয় মিষ্টি খাদ্য (sweet gum), কুয়াশার মত এগুলো বর্ষিত হতো। আর 'সালওয়া' ছিল কোয়েলের মত এক প্রকার ছোট পাখী (quails)। সিনাই উপদ্বীপের প্রতিকূল পরিবেশে (severely adverse topography & terrain) এক লাখ লোকের ৪০ বছরের উদ্বাস্তু জীবনে এভাবেই দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন বিনা শ্রমে রিযিকের সংস্থান করেছিলেন (আরো জানতে দেখুন: সহীহ আল-বুখারী, ৪র্থ খণ্ড, হাদীস নং-৪১২০)।





﴿ وَإِذۡ قُلۡنَا ٱدۡخُلُواْ هَٰذِهِ ٱلۡقَرۡيَةَ فَكُلُواْ مِنۡهَا حَيۡثُ شِئۡتُمۡ رَغَدٗا وَٱدۡخُلُواْ ٱلۡبَابَ سُجَّدٗا وَقُولُواْ حِطَّةٞ نَّغۡفِرۡ لَكُمۡ خَطَٰيَٰكُمۡۚ وَسَنَزِيدُ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٥٨ ﴾ [البقرة: ٥٨]





৫৮. আর স্মরণ কর, যখন আমি বললাম, ‘তোমরা প্রবেশ কর এ জনপদে। আর তা থেকে আহার কর তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী, স্বাচ্ছন্দ্যে এবং দরজায় প্রবেশ কর মাথা নীচু করে। আর বল ‘ক্ষমা’। তাহলে আমি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং নিশ্চয় আমি সৎকর্মশীলদেরকে বাড়িয়ে দেব’।





﴿ فَبَدَّلَ ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ قَوۡلًا غَيۡرَ ٱلَّذِي قِيلَ لَهُمۡ فَأَنزَلۡنَا عَلَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ رِجۡزٗا مِّنَ ٱلسَّمَآءِ بِمَا كَانُواْ يَفۡسُقُونَ ٥٩ ﴾ [البقرة: ٥٩]





৫৯. কিন্তু যালিমরা পরিবর্তন করে ফেলল সে কথা তাদেরকে যা বলা হয়েছিল, তা ভিন্ন অন্য কথা দিয়ে। ফলে আমি তাদের ওপর আসমান থেকে আযাব নাযিল করলাম, কারণ তারা পাপাচার করত।





﴿ ۞وَإِذِ ٱسۡتَسۡقَىٰ مُوسَىٰ لِقَوۡمِهِۦ فَقُلۡنَا ٱضۡرِب بِّعَصَاكَ ٱلۡحَجَرَۖ فَٱنفَجَرَتۡ مِنۡهُ ٱثۡنَتَا عَشۡرَةَ عَيۡنٗاۖ قَدۡ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسٖ مَّشۡرَبَهُمۡۖ كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ مِن رِّزۡقِ ٱللَّهِ وَلَا تَعۡثَوۡاْ فِي ٱلۡأَرۡضِ مُفۡسِدِينَ ٦٠ ﴾ [البقرة: ٦٠]





৬০. আর স্মরণ কর, যখন মূসা তার কওমের জন্য পানি চাইল, তখন আমি বললাম, ‘তুমি তোমার লাঠি দ্বারা পাথরকে আঘাত কর’। ফলে তা থেকে উৎসারিত হল বারটি ঝরনা;৭৬ প্রতিটি দল তাদের পানি পানের স্থান জেনে নিল।৭৭ তোমরা আল্লাহর রিযিক থেকে আহার কর ও পান কর এবং ফাসাদকারী হয়ে যমীনে ঘুরে বেড়িয়ো না।





৭৬. ঐ পাথর গুলোর অস্তিত্ব এখনো মিসরের সিনাই উপদ্বীপ এলাকায় বিদ্যমান।





৭৭. বারোটি ঝরনার উদ্ভবের কারণ, বনী ইসরাঈলে ছিল ১২টি গোত্র, যাতে পানি নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো বিবাদ না হয়।





দেখুন: সূরা আল-আ’রাফ, আয়াত: ১৬০





 



Recent Posts

সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ...

সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ক্ষেত্রে করণীয়

প্রতিবেশীর অধিকার ...

প্রতিবেশীর অধিকার

ঈদুল ফিতরের আনন্দ ও আ ...

ঈদুল ফিতরের আনন্দ ও আমাদের করণীয়

হজ-উমরার ফাযাইল ও উপক ...

হজ-উমরার ফাযাইল ও উপকারিতা