কুরবানির দিনের ফযীলত
[১] এ দিনের একটি নাম হলো ইয়াওমুল হাজ্জিল আকবর বা শ্রেষ্ঠ হজের দিন। যে দিনে হাজীগণ তাদের পশু যবেহ করে হজকে পূর্ণ করেন। হাদীসে এসেছে: ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত,
«أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال يوم النحر: [أي يوم هذا]؟ قالوا: يوم النحر، قال: «هذا يوم الحج الأكبر».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানির দিন জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোন দিন? সাহাবীগণ উত্তর দিলেন এটা ইয়াওমুন্নাহার বা কুরবানির দিন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এটা হলো ইয়াওমুল হাজ্জিল আকবর বা শ্রেষ্ঠ হজের দিন"।[14]
[২] কুরবানির দিনটি হলো বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। হাদীসে এসেছে: আব্দুল্লাহ ইবন কুরত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল
কুরবানির পশু যবেহ করার নিয়মাবলি:
কুরবানি দাতা নিজের কুরবানির পশু নিজেই যবেহ করবেন, যদি তিনি ভালোভাবে যবেহ করতে পারেন। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে যবেহ করেছেন। আর যবেহ করা আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য অর্জনের একটি মাধ্যম। তাই প্রত্যেকের নিজের কুরবানি নিজে যবেহ করার চেষ্টা করা উচিৎ।
ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন: 'আবূ মূসা আশ'আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজের মেয়েদের নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন নিজ হাতে নিজেদের কুরবানির পশু যবেহ করেন।' তার এ নির্দেশ দ্বারা প্রমাণিত হয় মেয়েরা কুরবানির পশু যবেহ করতে পারেন। তবে কুরবানি পশু যবেহ করার দায়িত্ব অন্যকে অর্পণ করা জায়েয আছে। কেননা সহীহ মুসলিমের হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তেষট্টিটি কুরবানির পশু নিজ হাতে যবেহ করে বাকিগুলো যবেহ করার দায়িত্ব আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে অর্পণ করেছেন।
যবেহ করার সময় যে সকল বিষয় লক্ষণীয়:
[১] যা যবেহ করা হবে তার সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে, তাকে আরাম দিতে হবে। যাতে সে কষ্ট না পায় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। হাদীসে এসেছে: শাদ্দাদ ইবন আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن الله كتب الإحسان على كل شيء، فإذا قتلتم فأحسنوا القتل، وإذا ذبحتم، فأحسنوا الذبح، وليحد أحدكم شفرته، فليرح ذبيحته ».
“আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকল বিষয়ে সকলের সাথে সুন্দর ও কল্যাণকর আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব, তোমরা যখন হত্যা করবে তখন সুন্দরভাবে করবে আর যখন যবেহ করবে তখনও তা সুন্দরভাবে করবে। তোমাদের একজন যেন ছুরি ধারালো করে নেয় এবং যা যবেহ করা হবে তাকে যেন প্রশান্তি দেয়"।[32]
[২] যদি উট যবেহ করতে হয় তবে তা নহর করবে। নহর হলো উটটি তিন পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকবে আর সম্মুখের বাম পা বাধা থাকবে। তার বুকে ছুরি চালানো হবে। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন:
﴿فَٱذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ عَلَيۡهَا صَوَآفَّۖ ٣٦﴾ [الحج : ٣٦]
“সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায় তাদের ওপর তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর।" [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৩৬]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এর অর্থ হলো তিন পায়ে দাঁড়িয়ে থাকবে আর সামনের বাম পা বাধা থাকবে।
উট ছাড়া অন্য জন্তু হলে তা তার বাম কাতে শোয়াবে। ডান হাত দিয়ে ছুরি চালাবে। বাম হাতে জন্তুর মাথা ধরে রাখবে। মোস্তাহাব হলো যবেহকারী তার পা জন্তুটির ঘারে রাখবে। যেমন ইতোপূর্বে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত বুখারীর হাদীসে আলোচনা করা হয়েছে।
[৩] যবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ বলতে হবে। কারণ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿فَكُلُواْ مِمَّا ذُكِرَ ٱسۡمُ ٱللَّهِ عَلَيۡهِ إِن كُنتُم بَِٔايَٰتِهِۦ مُؤۡمِنِينَ ١١٨﴾ [الانعام: ١١٨]
“যার ওপর আল্লাহর নাম (বিসমিল্লাহ) উচ্চারণ করা হয়েছে তা থেকে তোমরা আহার কর।" [সূরা আল-আন'আম, আয়াত: ১১৮] যবেহ করার সময় তাকবীর বলা মোস্তাহাব। যেমন হাদীসে এসেছে: জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
«... وأتى بكبش ذبحه رسول الله صلى الله عليه وسلم بيده وقال: «بِسْمَ اللهِ وَاللهُ أَكْبَرُ، اَللهُمَّ هَذَا عَنِّيْ وَعَمَّنْ لَمْ يُضَحِّ مِنْ أُمَّتِيْ».
“...একটি দুম্বা আনা হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে যবেহ করলেন এবং বললেন 'বিসমিল্লাহ ওয়া আল্লাহু আকবর, হে আল্লাহ! এটা আমার পক্ষ থেকে এবং আমার উম্মতের মাঝে যারা কুরবানি করতে পারে নি তাদের পক্ষ থেকে।" [33] অন্য হাদীসে এসেছে:
«ضحى رسول الله- صلى الله عليه وسلم- بكبشين أملحين أقرنين، ويسمى ويكبر».
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'টি শিং ওয়ালা ভেড়া যবেহ করলেন, তখন বিসমিল্লাহ ওয়া আল্লাহু আকবার বললেন।"[34] যবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবর পাঠের পর—اللّهُمَّ هَذَا مِنْكَ وَلَكَ—[হে আল্লাহ এটা তোমার তরফ থেকে, তোমারই জন্য] বলা যেতে পারে। যার পক্ষ থেকে কুরবানি করা হচ্ছে তার নাম উল্লেখ করে দো'আ করা জায়েয আছে। এ ভাবে বলা -'হে আল্লাহ তুমি অমুকের পক্ষ থেকে কবুল করে নাও।' যেমন হাদীসে এসেছে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানির দুম্বা যবেহ করার সময় বললেন:
«بِسْمِ اللهِ، اَللّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ، وَآلِ مُحَمَّدٍ، وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ»
“আল্লাহ নামে, হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার-পরিজন এবং তার উম্মতের পক্ষ থেকে কবুল করে নিন।"[35]
কুরবানির গোশত কারা খেতে পারবেন:
কুরবানির গোসত কুরবানি দাতা নিজে খাবেন, ফকির মিসকিনকে দান করবেন এবং আত্মীয় স্বজনদের উপহার হিসেবে দিতে পারবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿فَكُلُواْ مِنۡهَا وَأَطۡعِمُواْ ٱلۡبَآئِسَ ٱلۡفَقِيرَ ٢٨ ﴾ [الحج : ٢٨]
“অতঃপর তোমরা উহা হতে আহার কর এবং দুস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।" [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ২৮] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানির গোশত সম্পর্কে বলেছেন:
«كلوا وأطعموا وادخروا».
“তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ কর।"[36]
'আহার করাও' বাক্য দ্বারা অভাবগ্রস্তকে দান করা ও ধনীদের উপহার হিসেবে দেওয়াকে বুঝায়। কতটুকু নিজেরা খাবে, কতটুকু দান করবে আর কতটুকু উপহার হিসেবে প্রদান করবে এর পরিমাণ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও হাদীসে কিছু বলা হয় নি। তাই ওলামায়ে কেরাম বলেছেন: কুরবানির গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজেরা খাওয়া, এক ভাগ দরিদ্রদের দান করা ও এক ভাগ উপহার হিসেবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের দান করা মোস্তাহাব।
কুরবানির গোশত যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে। 'কুরবানির গোশত তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে না' -বলে যে হাদীস রয়েছে তার হুকুম রহিত হয়ে গেছে। তাই যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়।
তবে ইমাম ইবন তাইমিয়া রহ. এ বিষয়ে একটা সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন: সংরক্ষণ নিষেধ হওয়ার কারণ হলো দুর্ভিক্ষ। দুর্ভিক্ষের সময় তিন দিনের বেশি কুরবানির গোশত সংরক্ষণ করা জায়েয হবে না। তখন 'সংরক্ষণ নিষেধ' সম্পর্কিত হাদীস অনুযায়ী আমল করতে হবে। আর যদি দুর্ভিক্ষ না থাকে তবে যতদিন ইচ্ছা কুরবানি দাতা কুরবানির গোশত সংরক্ষণ করে খেতে পারেন। তখন 'সংরক্ষণ নিষেধ রহিত হওয়া' সম্পর্কিত হাদীস অনুযায়ী আমল করা হবে।
কুরবানির পশুর গোশত, চামড়া, চর্বি বা অন্য কোনো কিছু বিক্রি করা জায়েয নয়। কসাই বা অন্য কাউকে পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানির গোশত দেওয়া জায়েয নয়। হাদীসে এসেছে:
«ولا يعطى في جزارتها شيئا».
“তার প্রস্তুত করণে তার থেকে কিছু দেওয়া হবে না।"[37] তবে দান বা উপহার হিসেবে কসাইকে কিছু দিলে তা না-জায়েয হবে না।
আইয়ামুত-তাশরীক ও তার করণীয়:
আইয়ামুত-তাশরীক বলা হয় কুরবানির পরবর্তী তিন দিনকে অর্থাৎ যিলহজ মাসের এগারো, বারো ও তেরো তারিখকে আইয়ামুত-তাশরীক বলা হয়। তাশরীক শব্দের অর্থ শুকানো। মানুষ এ দিনগুলোতে গোশত শুকাতে দিয়ে থাকে বলে এ দিনগুলোর নাম 'আইয়ামুত-তাশরীক' বা 'গোশত শুকানোর দিন' নামে নামকরণ করা হয়েছে।
আইয়ামুত তাশরীক এর ফযীলত:
এ দিনগুলোর ফযীলত সম্পর্কে যে সকল বিষয় এসেছে তা নিচে আলোচনা করা হলো:
[১] এ দিনগুলো ইবাদত-বন্দেগি, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জিকির ও তার শুকরিয়া আদায়ের দিন। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡدُودَٰتٖۚ ٢٠٣﴾ [البقرة: ٢٠٣]
“তোমরা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ করবে।" [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২০৩] এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বুখারী রহ. বলেন, ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
«الأيام المعدودات: أيام التشريق».
“নির্দিষ্ট দিনগুলো বলতে আইয়ামুত-তাশরীককে বুঝানো হয়েছে।" [38]
ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন: ইবন আব্বাসের এ ব্যাখ্যা গ্রহণে কারো কোনো দ্বি-মত নেই। আর মূলত এ দিনগুলো হজের মওসুমে মিনাতে অবস্থানের দিন। কেননা হাদীসে এসেছে:
«...أيام منى ثلاثة: فمن تعجل في يومين فلا إثم عليه ومن تأخر فلا إثم عليه».
“মিনায় অবস্থানের দিন হলো তিন দিন। যদি কেউ তাড়াতাড়ি করে দু দিনে চলে আসে তবে তার কোনো পাপ নেই। আর যদি কেউ বিলম্ব করে তবে তারও কোনো পাপ নেই"।[39] হাদীসে এসেছে: নাবীশা হাজালী থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أيام التشريق أيام أكل وشرب وذكر الله»
“আইয়ামুত-তাশরীক হলো খাওয়া-দাওয়া ও আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যিকিরের দিন।"[40]
ইমাম ইবন রজব রহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় চমৎকার কথা বলেছেন। তিনি বলেন: আইয়ামুত-তাশরীক এমন কতগুলো দিন যাতে ঈমানদারদের দেহের নি'আমত ও স্বাচ্ছন্দ্য এবং মনের নি'আমত তথা স্বাচ্ছন্দ্য একত্র করা হয়েছে। খাওয়া-দাওয়া হলো দেহের খোরাক আর আল্লাহর যিকির ও শুকরিয়া হলো হৃদয়ের খোরাক। আর এভাবেই নি'আমতের পূর্ণতা লাভ করল এ দিনসমূহে।
[২] আইয়ামুত-তাশরীকের দিনগুলো ঈদের দিন হিসেবে গণ্য। যেমন হাদীসে এসেছে: উকবাহ ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«يوم عرفة، ويوم النحر، وأيام منى عيدنا أهل الإسلام، وهي أيام أكل وشرب».
“আরাফা দিবস, কুরবানির দিন ও মিনার দিনসমূহ (কুরবানি পরবর্তী তিন দিন) আমাদের ইসলাম অনুসারীদের ঈদের দিন।"[41]
[৩] এ দিনসমূহ যিলহজ মাসের প্রথম দশকের সাথে লাগানো। যে দশক খুবই ফযীলতপূর্ণ। তাই এ কারণেও এর যথেষ্ট মর্যাদা রয়েছে।
[৪] এ দিনগুলোতে হজের কতিপয় আমল সম্পাদন করা হয়ে থাকে। এ কারণেও এ দিনগুলো ফযীলতের অধিকারী।
আইয়ামুত তাশরীকে করণীয়:
এ দিনসমূহ যেমনি ইবাদত-বন্দেগি, যিকির-আযকারের দিন তেমনি আনন্দ-ফুর্তি করার দিন। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: 'আইয়ামুত-তাশরীক হলো খাওয়া-দাওয়া ও আল্লাহর যিকিরের দিন।'
এ দিনগুলোতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দেওয়া নি'আমত নিয়ে আমোদ-ফুর্তি করার মাধ্যমে তার শুকরিয়া ও যিকির আদায় করা। যিকির আদায়ের কয়েকটি পদ্ধতি হাদীসে এসেছে।
[১] সালাতের পর তাকবীর পাঠ করা। এবং সালাত ছাড়াও সর্বদা তাকবীর পাঠ করা। এ তাকবীর আদায়ের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ দিতে পারি যে এ দিনগুলো আল্লাহর যিকিরের দিন। আর এ যিকিরের নির্দেশ যেমন হাজীদের জন্য তেমনই যারা হজ পালনরত নন তাদের জন্যও।
[২] কুরবানি ও হজের পশু যবেহ করার সময় আল্লাহ তা'আলার নাম ও তাকবীর উচ্চারণ করা।
[৩] খাওয়া-দাওয়ার শুরু ও শেষে আল্লাহ তা'আলার জিকির করা। আর এটা তো সর্বদা করার নির্দেশ রয়েছে তথাপি এ দিনগুলোতে এর গুরুত্ব বেশি দেওয়া। এমনিভাবে সকল কাজ ও সকাল-সন্ধ্যার যিকিরগুলোর প্রতি যতœবান হওয়া।
[৪] হজ পালন অবস্থায় কঙ্কর নিক্ষেপের সময় আল্লাহ তা'আলার তাকবীর পাঠ করা।
[৫] এ গুলো ছাড়াও যে কোনো সময় ও যে কোনো অবস্থায় আল্লাহর যিকির করা।
ঈদুল আজহার বিধান:
মুসলিম ভাই, আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করছি যে, তিনি তোমাকে দীর্ঘজীবি করেছেন, যার ফলে তুমি আজকের এ দিনগুলোতে উপনীত হওয়ার সুযোগ লাভ করেছে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য ইবাদত ও নেক আমল করার সুযোগ পেয়েছ।
ঈদ এ উম্মতের বৈশিষ্ট্য এবং দীনের একটি উজ্জ্বল নিদর্শন। তোমার দায়িত্ব এটা গুরুত্ব ও সম্মানসহ গ্রহণ করা। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
﴿ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ ٣٢﴾ [الحج : ٣٢]
“এটাই হলো আল্লাহর বিধান; যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে। নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাকওয়া থেকেই"। [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৩২]
ঈদের ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত কিছু আদব ও আহকাম:
১. তাকবীর: 'আরাফার দিনের ফজর থেকে শুরু করে তাশরীকের দিনের শেষ পর্যন্ত, তথা যিলহজ মাসের তেরো তারিখ আসর পর্যন্ত তাকবীর বলা। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡدُودَٰتٖۚ ٢٠٣﴾ [البقرة: ٢٠٣]
“আর তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর নির্দিষ্ট দিনসমূহে।" [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২০৩] তাকবীর বলার পদ্ধতি:
الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله والله أكبر، الله أكبر ولله الحمد
আল্লাহর যিকির বুলন্দ ও সর্বত্র ব্যাপক করার নিয়তে পুরুষদের জন্য মসজিদ, বাজার, বাড়িতে ও সালাতের পশ্চাতে উচ্চ স্বরে তাকবীর পাঠ করা সুন্নত।
২. কুরবানি করা: ঈদের দিন ঈদের সালাতের পর কুরবানি করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من ذبح قبل أن يصلي فليعد مكانها أخرى، ومن لم يذبح فليذبح»
“যে ব্যক্তি ঈদের আগে যবেহ করল, তার উচিৎ তার জায়গায় আরেকটি কুরবানি করা। আর যে এখনো কুরবানি করে নি, তার উচিৎ এখন কুরবানি করা।"[42]
কুরবানি করার সময় চার দিন। অর্থাৎ নহরের দিন এবং তার পরবর্তী তাশরীকের তিন দিন। যেহেতু রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«كل أيام التشريق ذبح»
“তাশরীকের দিন কুরবানির দিন"।[43]
৩. পুরুষদের জন্য গোসল করা ও সুগন্ধি মাখা: সুন্দর কাপড় পরিধান করা, টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান না করা, কাপড়ের ক্ষেত্রে অপচয় না করা। দাঁড়ি না মুণ্ডানো, এটা হারাম। নারীদের জন্য ঈদগাহে যাওয়া বৈধ, তবে আতর ও সৌন্দর্য প্রদর্শন পরিহার করবে। মুসলিম নারীদের জন্য কখনো শোভা পায় না যে, সে আল্লাহর ইবাদতের জন্য তাঁরই গুনাহতে লিপ্ত হয়ে ধর্মীয় কোনো ইবাদতে অংশ গ্রহণ করবে। যেমন, সৌন্দর্য প্রদর্শন, সুগন্ধি ব্যবহার ইত্যাদি করে ঈদগাহে উপস্থিত হওয়া।
বস্তুত ঈদের দিন গোসল করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা মোস্তাহাব। কেননা এ দিনে সকল মানুষ সালাত আদায়ের জন্য মিলিত হয়। যে কারণে জুমু'আর দিন গোসল করা মোস্তাহাব সে কারণেই ঈদের দিন ঈদের সালাতের পূর্বে গোসল করাও মোস্তাহাব। হাদীসে এসেছে: ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত,
«أنه كان يغتسل يوم الفطر قبل أن يغدوا إلى المصلى. رواه الإمام مالك في أول كتاب العيدين وقال سعيد بن المسيب سنة الفطر ثلاث: المشي إلى المصلى، والأكل قبل الخروج، والاغتسال».
“তিনি ঈদুল-ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন।[44] সায়ীদ ইবন মুসাইয়াব রহ. বলেন: ঈদুল ফিতরের সুন্নাত তিনটি: ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া, ঈদগাহের দিকে রওয়ানার পূর্বে কিছু খাওয়া, গোসল করা। এমনিভাবে সুগন্ধি ব্যবহার ও উত্তম পোশাক পরিধান করা মোস্তাহাব"।[45]
৪. কুরবানির গোস্ত ভক্ষণ করা। ঈদুল আজহার দিন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খানা খেতেন না, যতক্ষণ না তিনি ঈদগাহ থেকে ফিরে আসতেন, অতঃপর তিনি কুরবানি গোস্ত থেকে ভক্ষণ করতেন।
তাই সুন্নাত হলো ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে খাবার গ্রহণ করা। আর ঈদুল আজহাতে ঈদের সালাতের পূর্বে কিছু না খেয়ে সালাত আদায়ের পর কুরবানির গোশত খাওয়া সুন্নাত। হাদীসে এসেছে: বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
«كان النبي صلى الله عليه وسلم لا يخرج يوم الفطر حتى يأكل، ولا يأكل يوم الأضحى حتى يرجع، فيأكل من أضحيته».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের সালাতের পূর্বে খেতেন না। সালাত থেকে ফিরে এসে কুরবানির গোশত খেতেন"।[46]
৫. সম্ভব হলে পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া: ঈদগাহতেই সালাত আদায় করা সুন্নত। তবে বৃষ্টি বা অন্য কোনো কারণে মসজিদে পড়া বৈধ, যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পড়েছেন।
ঈদগাহে তাড়াতাড়ি যাওয়া উচিৎ। যাতে ইমাম সাহেবের নিকটবর্তী স্থানে বসা যায় ও ভালো কাজ অতি তাড়াতাড়ি করার সাওয়াব অর্জন করা যায়, সাথে সাথে সালাতের অপেক্ষায় থাকার সাওয়াব পাওয়া যাবে। ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া হলো মোস্তাহাব। হাদীসে এসেছে: আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
من السنة أن تخرج إلى العيد ماشيا. رواه الترمذي وحسنه وقال: والعمل على هذا عند أكثر أهل العلم: يستحبون أن يخرج الرجل إلى العيد ماشيا، وأن لا يركب إلا بعذر.
“সুন্নাত হলো ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া। ইমাম তিরমিযি হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন হাদীসটি হাসান। তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ আলেম এ অনুযায়ী আমল করেন। এবং তাদের মত হলো পুরুষ ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাবে, এটা মোস্তাহাব। আর গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ছাড়া যানবাহনে আরোহণ করবে না।[47]
৬. মুসলিমদের সাথে সালাত আদায় করা এবং খুতবায় অংশ গ্রহণ করা: ওলামায়ে কেরামদের প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে, ঈদের সালাত ওয়াজিব। এটাই ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন, যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ٢ ﴾ [الكوثر: ٢]
“অতএব তোমরা রবের উদ্দেশ্যেই সালাত পড় এবং নহর কর"। [সূরা আল-কাউসার, আয়াত: ২]
উপযুক্ত কোনো কারণ ছাড়া ঈদের সালাতের ওয়াজিব রহিত হবে না। মুসলিমদের সাথে নারীরাও ঈদের সালাতে হাজির হবে। এমনকি ঋতুমতী নারী ও যুবতী মেয়েরাও। তবে ঋতুমতী নারীরা ঈদগাহ থেকে দূরে অবস্থান করবে।
৭. রাস্তা পরিবর্তন করা: এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া ও অপর রাস্তা দিয়ে ঈদগাহ থেকে বাড়ি ফেরা মোস্তাহাব। যেহেতু তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম করেছেন।
আর একটি সুন্নাত হলো যে পথে ঈদগাহে যাবে সে পথে না ফিরে অন্য পথে ফিরে আসবে। যেমন হাদীসে এসেছে: জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كان النبي إذا كان يوم العيد خالف الطريق.
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিনে পথ বিপরীত করতেন।"[48] অর্থাৎ যে পথে ঈদগাহে যেতেন সে পথে ফিরে না এসে অন্য পথে আসতেন।
৮. ঈদের সুভেচ্ছা জানানো: ঈদের দিন একে অপরকে সুভেচ্ছা বিনিময় করা, যেমন বলা:
تقبل الله منا ومنكم. أو تقبل الله منا ومنكم صالح الأعمال.
অর্থ: আল্লাহ আমাদের থেকে ও তোমাদের থেকে নেক আমলসমূহ কবুল করুন। বা এ ধরনের অন্য কিছু বলা।
একে অপরকে শুভেচ্ছা জানানো, অভিবাদন করা মানুষের সুন্দর চরিত্রের একটি দিক। এতে খারাপ কিছু নেই, বরং এর মাধ্যমে একে অপরের জন্য কল্যাণ কামনা ও দো'আ করা যায়। পরস্পরের মাঝে বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়।
ঈদ উপলক্ষে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানানো শরী'আত অনুমোদিত একটি বিষয়। বিভিন্ন বাক্য দ্বারা এ শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। যেমন,
[ক] হাফেজ ইবন হাজার রহ. বলেছেন: 'যুবাইর ইবন নফীর থেকে সঠিক সূত্রে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ ঈদের দিন সাক্ষাৎকালে একে অপরকে বলতেন:
تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ
“আল্লাহ তা'আলা আমাদের ও আপনার ভালো কাজগুলো কবুল করুন।"
[খ] ঈদ মুবারক বলে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়।
[গ] প্রতি বছরই আপনারা ভালো থাকুন:
كُلُّ عَامٍ وَأَنْتُمْ بِخَيْرٍ
-বলা যায়।
এ ধরনের সকল মার্জিত বাক্যের দ্বারা শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। তবে প্রথমে উল্লিখিত বাক্য:
تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ
-দ্বারা শুভেচ্ছা বিনিময় করা উত্তম। কারণ, সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম এ বাক্য ব্যবহার করতেন ও এতে পরস্পরের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে দো'আ রয়েছে। আর যদি কেউ সব বাক্যগুলো দ্বারা শুভেচ্ছা বিনিময় করতে চায় তাতে অসুবিধা নেই। যেমন, ঈদের দিন দেখা হলে বলবে:
تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ ، كُلُّ عَامٍ وَأَنْتُمْ بِخَيْرٍ، عِيْدُكَ مُبَارَكٌ
“আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমার ও আপনার সৎ কর্মসমূহ কবুল করুন। সারা বছরই আপনারা সুখে থাকুন। আপনাকে বরকতময় ঈদের শুভেচ্ছা।"
এ দিনগুলোতে সাধারণ ঘটে যাওয়া কিছু বিদ'আত ও ভুল ভ্রান্তি থেকে সকলের সতর্ক থাকা জরুরী। যেমন,
১. সম্মিলিত তাকবীর বলা: এক আওয়াজে অথবা একজনের বলার পর সকলে সমস্বরে বলা থেকে বিরত থাকা।
২. ঈদের দিন হারাম-নিষিদ্ধ কর্মে লিপ্ত হওয়া: গান শোনা, ফিল্ম দেখা, বেগানা নারী-পুরুষের সাথে মেলামেশা করা ইত্যাদি পরিত্যাগ করা।
৩. কুরবানির পশু যবেহ করার পূর্বে চুল, নখ ইত্যাদি কর্তন করা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানি দাতাকে যিলহজ মাসের আরম্ভ থেকে কুরবানি করা পর্যন্ত তা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।
৪. ঈদের দিনে কবর যিয়ারত করা: কবর যিয়ারত করা শরী'আত সমর্থিত একটি নেক আমল। কিন্তু ঈদের দিনে কবর যিয়ারত করার কোনো বিশেষত্ব নেই। ঈদের দিন কবর যিয়ারত করাতে বিশেষ সাওয়াব আছে বলে বিশ্বাস করা বা ঈদের দিনে কবর যিয়ারতকে অভ্যাসে পরিণত করা বা একটা প্রথা বানিয়ে নেওয়া শরী'আতসম্মত নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لا تجعلوا قبري عيداً »...
“তোমরা আমার কবরে ঈদ উদযাপন করবে না বা ঈদের স্থান বানাবে না..."।[49]
৫. গান-বাদ্য: ঈদের দিনে এ গুনাহের কাজটাও বেশি হতে দেখা যায়। গান ও বাদ্যযন্ত্র যে শরিয়তে নিষিদ্ধ এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আবার যদি হয় অশ্লীল গান তাহলে তো তা হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোনো ভিন্নমত নেই। হাদীসে এসেছে:
«قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ليكون أقواما من أمتي يستحلون الحر والحرير والخمر والمعازف».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমার উম্মতের মাঝে এমন একটা দল পাওয়া যাবে যারা ব্যভিচার, রেশমি পোশাক, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল [বৈধ] মনে করবে।"[50]
৬. পুরুষ কর্তৃক মহিলার বেশ-ধারণ করা ও মহিলা কর্তৃক পুরুষের বেশ ধারণ:
পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন ও সাজ-সজ্জার ক্ষেত্রে পুরুষের মহিলার বেশ ধারণ ও মহিলা পুরুষের বেশ ধারণ করা হারাম। ঈদের দিনে এ কাজটি অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। হাদীসে এসেছে: ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত,
«أنه لعن المتشبهات من النساء بالرجال والمتشبهين من الرجال بالنساء».
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সকল মহিলাকে অভিসম্পাত করেছেন যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে এবং ঐ সকল পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন যারা মহিলার বেশ ধারণ করে"।[51]
৭. অপচয় ও সীমালঙ্ঘন করা: এমন খরচ করা, যার পিছনে কোনো উদ্দেশ্য নেই, যার কোনো ফায়দা নেই, আর না আছে যার কোনো উপকার। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:
﴿وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ ١٤١ ﴾ [الانعام: ١٤١]
“আর তোমরা অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।" [সূরা আল-আন'আম, আয়াত: ১৪১]
মুসলিম ভাইদের প্রতি আহ্বান:
আপনারা উপরে বর্ণিত নেক আমল ছাড়াও অন্যান্য নেক আমলের প্রতি যত্নশীল হোন। যেমন, আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা-সাক্ষাত করা, হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করা, একে অপরকে মহব্বত করা এবং গরীব ও ফকীরদের ওপর মেহেরবান হওয়া এবং আনন্দ উৎসবকে তাদের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়া ইত্যাদি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি আমাদেরকে তাঁর পছন্দনীয় কথা, কাজ ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
সমাপ্ত