১২৯. ইয়াহূদীরা কেবল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর ওপর যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকেই গালমন্দ করত না, বরং তারা আল্লাহর প্রিয় মহান ফিরিশতা জিবরাঈল আলাইহিসসালামকেও শত্রু বলে গালি দিত।
১৩০. এ জন্যেই তাদের গালমন্দ জিবরাঈল আলাইহিস সালামের ওপর নয়, আল্লাহর মহান সত্তার ওপর আরোপিত হয়।
১৩১. জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এ কুরআন মাজীদ বহন করে এনেছেন বলেই তারা তাকে গালমন্দ করে। অথচ কুরআন সরাসরি তাওরাতের সত্যতা সমর্থন করছে। ফলে তাদের এ বিষোদগার তাওরাতের বিরুদ্ধেও উচ্চারিত হচ্ছে।
১৩২. এখানে সূক্ষ্মভাবে একটি আক্ষেপের ব্যাপার তুলে ধরা হয়েছে যে, ইয়াহূদীদের সব অসন্তুষ্টি হচ্ছে হিদায়াত ও সত্য-সহজ পথের বিরুদ্ধে। নির্বোধের মতো তারা লড়ছে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালতের বিরুদ্ধে। অথচ এই রিসালত মেনে নেওয়ার মধ্যেই নিহিত ছিল তাদের ইহ-পরকালীন মুক্তি ও কল্যাণ।
﴿مَن كَانَ عَدُوّٗا لِّلَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَرُسُلِهِۦ وَجِبۡرِيلَ وَمِيكَىٰلَ فَإِنَّ ٱللَّهَ عَدُوّٞ لِّلۡكَٰفِرِينَ ٩٨ ﴾ [البقرة: ٩٨]
৯৮. ‘যে শত্রু হবে আল্লাহর, তাঁর ফিরিশতাদের, তাঁর রাসূলগণের, জিবরীলের ও মীকাঈলের, তবে নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদের শত্রু’।
﴿وَلَقَدۡ أَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ءَايَٰتِۢ بَيِّنَٰتٖۖ وَمَا يَكۡفُرُ بِهَآ إِلَّا ٱلۡفَٰسِقُونَ ٩٩ ﴾ [البقرة: ٩٩]
৯৯. আর আমরা অবশ্যই তোমার প্রতি সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নাযিল করেছি, ফাসিকরা ছাড়া১৩৩ অন্য কেউ তা অস্বীকার করে না।
১৩৩. আল্লাহর আদেশ-নিষেধ ও পথ-নির্দেশসমূহ অগ্রাহ্য ও অমান্যকারী।
﴿أَوَ كُلَّمَا عَٰهَدُواْ عَهۡدٗا نَّبَذَهُۥ فَرِيقٞ مِّنۡهُمۚ بَلۡ أَكۡثَرُهُمۡ لَا يُؤۡمِنُونَ ١٠٠ ﴾ [البقرة: ١٠٠]
১০০. তবে কি যখনই তারা কোন ওয়াদা করেছে, তখনই তাদের মধ্য থেকে কোনো এক দল তা ছুড়ে মেরেছে? বরং তাদের অধিকাংশ ঈমান রাখে না।
﴿وَلَمَّا جَآءَهُمۡ رَسُولٞ مِّنۡ عِندِ ٱللَّهِ مُصَدِّقٞ لِّمَا مَعَهُمۡ نَبَذَ فَرِيقٞ مِّنَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ كِتَٰبَ ٱللَّهِ وَرَآءَ ظُهُورِهِمۡ كَأَنَّهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ ١٠١﴾ [البقرة: ١٠١]
১০১. আর যখন তাদের নিকট আল্লাহর কাছ থেকে একজন রাসূল আসল, তাদের সাথে যা আছে তা সমর্থন করে, তখন আহলে কিতাবের১৩৪ একটি দল আল্লাহর কিতাবকে তাদের পেছনে ফেলে দিল, (এভাবে যে) মনে হয় যেন তারা জানে না।
১৩৪. পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহ তথা তাওরাত ও ইঞ্জিলের অনুসারীবৃন্দ।
﴿وَٱتَّبَعُواْ مَا تَتۡلُواْ ٱلشَّيَٰطِينُ عَلَىٰ مُلۡكِ سُلَيۡمَٰنَۖ وَمَا كَفَرَ سُلَيۡمَٰنُ وَلَٰكِنَّ ٱلشَّيَٰطِينَ كَفَرُواْ يُعَلِّمُونَ ٱلنَّاسَ ٱلسِّحۡرَ وَمَآ أُنزِلَ عَلَى ٱلۡمَلَكَيۡنِ بِبَابِلَ هَٰرُوتَ وَمَٰرُوتَۚ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنۡ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَآ إِنَّمَا نَحۡنُ فِتۡنَةٞ فَلَا تَكۡفُرۡۖ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنۡهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِۦ بَيۡنَ ٱلۡمَرۡءِ وَزَوۡجِهِۦۚ وَمَا هُم بِضَآرِّينَ بِهِۦ مِنۡ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمۡ وَلَا يَنفَعُهُمۡۚ وَلَقَدۡ عَلِمُواْ لَمَنِ ٱشۡتَرَىٰهُ مَا لَهُۥ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنۡ خَلَٰقٖۚ وَلَبِئۡسَ مَا شَرَوۡاْ بِهِۦٓ أَنفُسَهُمۡۚ لَوۡ كَانُواْ يَعۡلَمُونَ ١٠٢ ﴾ [البقرة: ١٠٢]
১০২. আর তারা১৩৫ অনুসরণ করেছে, যা শয়তানরা১৩৬ সুলাইমানের রাজত্বে পাঠ করত। আর সুলাইমান কুফুরী করে নি; বরং শয়তানরা কুফুরী করেছে। তারা মানুষকে যাদু শিখাত১৩৭ এবং (তারা অনুসরণ করেছে) যা নাযিল করা হয়েছিল বাবেলের দুই ফিরিশতা হারূত ও মারূতের ওপর। আর তারা কাউকে (যাদু) শেখাত না যে পর্যন্ত না বলত যে, ‘আমরা তো পরীক্ষা, সুতরাং তোমরা কুফুরী করো না’।১৩৮
এরপরও তারা এদের কাছ থেকে শিখত, যার মাধ্যমে তারা পুরুষ ও তার স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাত।১৩৯ অথচ তারা তার মাধ্যমে কারো কোন ক্ষতি করতে পারত না আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। আর তারা শিখত যা তাদের ক্ষতি করত, তাদের উপকার করত না এবং তারা নিশ্চয় জানত যে, যে ব্যক্তি তা ক্রয় করবে, আখিরাতে তার কোন অংশ থাকবে না। আর তা নিশ্চিতরূপে কতই-না মন্দ, যার বিনিময়ে তারা নিজদেরকে বিক্রয় করেছে। যদি তারা বুঝত।
১৩৫. বনী ইসরাঈল বা ইসরাঈল প্রজন্ম।
১৩৬. এখানে ‘শায়াতীন’ বলতে জিন্ন ও মানুষ উভয়েই অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
১৩৭. ইসরাঈল গোত্রের মধ্যে যখন চরম নৈতিক অধঃপতন দেখা দিল; গোলামি, মূর্খতা, অজ্ঞতা, দারিদ্র, লাঞ্ছনা ও হীনতার ফলে যখন তাদের জাতিগত মনোবল ও উচ্চাকাঙ্খার বিলুপ্তি ঘটল, তখন তারা যাদু-টোনা, তাবীজ-তুমার, টোটকা ইত্যাদির প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকল। তারা এমন সব পন্থার অনুসন্ধান করতে লাগল যাতে কোনো পরিশ্রম ও সংগ্রাম-সাধনা ছাড়াই ঝাড়-ফুঁক ও তন্ত্র-মন্ত্রের জোরে সাফল্য লাভ করা যায়। তখন শয়তানরা তাদেরকে প্ররোচনা দিতে লাগল। তাদেরকে বুঝাতে থাকলো যে, সুলাইমান আলাইহিস সালামের বিশাল রাজত্ব ও তার বিস্ময়কর ক্ষমতা তো আসলে কিছু মন্ত্র-তন্ত্র ও কয়েকটা আঁচড়, নকশা তথা তাবীজের ফল। তারা তাদেরকে সেগুলো শিখিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিল। আর বনী ইসরাঈল জাতি প্রত্যাশিত মহামূল্যবান সম্পদ মনে করে এতে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
১৩৮. সমগ্র বনী ইসরাঈল জাতি যখন ব্যাবিলনে বন্দী ও গোলামির জীবন যাপন করছিল, মহান আল্লাহ তখন তাদের পরীক্ষার উদ্দেশ্যে দু'জন ফিরিশতাকে মানুষের বেশে পাঠিয়েছিলেন। লূত জাতির কাছে যেমন ফিরিশতারা গিয়েছিলেন সুদর্শন বালকের বেশে তেমনি বনী ইসরাঈলের কাছে হয়তো তারা দরবেশ ও ফকীরের ছদ্মবেশে হাযির হয়ে থাকবেন। তারা তাদের ফিরিশতাসুলভ বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রেখেই সেখানে মানুষকে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী জ্ঞান দান করেছিলেন। তাদের শিখানো জ্ঞান ছিল নিঃসন্দেহে জায়েয, উপকারী এবং কার্যকরী। তারা লোকদের এই মর্মে সতর্কও করে দিয়েছেন যে, দেখো, আমরা কিন্তু তোমাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। কাজেই নিজেদের পরকাল নষ্ট করো না, অর্থাৎ কোনরূপ অসৎ ও ক্ষতিকর উদ্দেশ্যে এর ব্যবহার করো না। কিন্তু ইয়াহূদীরা তাদের চরম চারিত্রিক বিকৃতি নিয়ে তা শিখেছিল খারাপ উদ্দেশ্যে এবং তার প্রয়োগও করতো নিকৃষ্টতম লক্ষ্যে। ফলে সেই উপকারী জ্ঞান তাদের কাছে যাদু ও যাদুকরী বিদ্যায় পরিণত হলো। আর এর প্রতি তারা এতই ঝুঁকে পড়ল যে, আল্লাহর কিতাবের সাথে তাদের আর কোনো সম্পর্কই রইল না। আর যাদের সাথে নামমাত্র সম্পর্ক ছিল, তাও শুধুমাত্র ‘আমল ও তাবীজ’ পর্যায়ে সীমিত ছিল।
১৩৯. অর্থাৎ সেই বাজারে সব থেকে বেশি চাহিদা ছিল এমন জাদু-টোনার, যার সাহায্যে এক ব্যক্তি অন্য একজনের স্ত্রীকে তার স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারে। তাদের মধ্যে যে নৈতিক পতন দেখা দিয়েছিল এটি ছিল তার নিকৃষ্টতম পর্যায়।
﴿وَلَوۡ أَنَّهُمۡ ءَامَنُواْ وَٱتَّقَوۡاْ لَمَثُوبَةٞ مِّنۡ عِندِ ٱللَّهِ خَيۡرٞۚ لَّوۡ كَانُواْ يَعۡلَمُونَ ١٠٣ ﴾ [البقرة: ١٠٣]
১০৩. আর যদি তারা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত, তবে অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে (তাদের জন্য) প্রতিদান উত্তম হত। যদি তারা জানত।
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَقُولُواْ رَٰعِنَا وَقُولُواْ ٱنظُرۡنَا وَٱسۡمَعُواْۗ وَلِلۡكَٰفِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٞ ١٠٤ ﴾ [البقرة: ١٠٤]
১০৪. হে মুমিনগণ,১৪০ তোমরা ‘রাইনা’ বলো না; বরং বল, ‘উনজুরনা’১৪২ আর শোন,১৪৩ কাফিরদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
১৪০. এই আয়াতটির মর্মার্থ বুঝতে সংক্ষেপে সেই প্রেক্ষাপটটি সামনে রাখা দরকার যে, যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় আগমন করলেন এবং মদীনার চারপাশে ইসলামের আহ্বান ছড়িয়ে পড়তে লাগল, তখন ইয়াহূদীরা স্থানে স্থানে মুসলিমদেরকে ধর্মীয় বিতর্কে জড়িয়ে তাদেরকে ব্যস্ত রাখার অপচেষ্টা অব্যাহত রাখল। তাদের উল্লেখযোগ্য বাধা-দানকারী কার্যক্রমগুলো ছিল নিম্নরূপ:
ক. তুচ্ছ ব্যাপারকে কেন্দ্র করে তুলকালাম কাণ্ড ঘটানো
খ. গুরুত্বহীন বিষয়কে অধিক গুরুত্ব দিয়ে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ের অবতারণা করা
গ. অপপ্রচারের মাধ্যমে নব্য মুমিনদের অন্তরে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করার চেষ্টা
ঘ. প্রশ্নের ওপর অনর্থক প্রশ্ন করে কুরআন ও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্যকে দূর্বোধ্য করে তোলা
ঙ. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসে বসে প্রতারণামূলক কথাবার্তা বলে গোলযোগ সৃষ্টি করা
এই রুকু হতে পরবর্তী রুকুগুলোতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী তথা মুমিনদেরকে এসব অনিষ্টকর কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে, যা তাদের বিরুদ্ধে ইয়াহূদীরা করছিল। সেসব সন্দেহ-সংশয়ের জবাবও দেওয়া হয়েছে, যেগুলো তারা মুসলিমদের অন্তরে সৃষ্টির চেষ্টা করছিল।
১৪১. এ শব্দটির অর্থ ‘আমাদের একটু সুযোগ দিন’। কিন্তু ইয়াহূদীদের ভাষায় এর অর্থ ‘শোনো, তুমি বধির হয়ে যাও’। ইয়াহূদীরা যখন মুসলিমদেরকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ভালো করে বুঝে নেওয়ার উদ্দেশে ব্যবহার করতে দেখল, তখন তারা এটাকে সুযোগ হিসেবে গণ্য করে তাদের ভাষায় ব্যবহৃত গালির অর্থে শব্দটিকে প্রয়োগ করতে লাগল। আবার কখনো বা তারা শব্দটির উচ্চারণ একটু টেনে ‘রাইনা’ (رَاعِيَنَا)ও বলার চেষ্টা করতে লাগল, যার অর্থ ‘ওহে আমাদের রাখাল’! এর সবকিছুর মূল উদ্দেশ্য ছিল রাহমাতুল্লিল আলামীনকে তুচ্ছজ্ঞান ও অপদস্ত করা। ইয়াহূদীদের এই ছলচাতুরি বন্ধ করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে ‘রাইনা’ বর্জন করতে বললেন। এর একার্থবোধক শব্দ ‘উনযুরনা’ অর্থাৎ আমাদের প্রতি নজর দিন বলতে নির্দেশ দিলেন। শব্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে সাবধানতার বিষয়টি আমরা এ আয়াত থেকে বুঝতে পাচ্ছি।
১৪২. তাই মুমিনদেরকে যথাযথ কুলুষমুক্ত শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়ে নির্দেশ দেওয়া হলো ঐ শব্দটি বলো না, বরং বলো ‘উনযুরনা’। যার অর্থ ‘আমাদের প্রতি লক্ষ্য করুন’ বা ‘আমাদের প্রতি দৃষ্টি দিন’ অথবা ‘আমাদেরকে একটু বুঝতে দিন’।
১৪৩. কারণ মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আলোচনা শৈথিল্যের সাথে শোনার প্রশ্নই উঠে না, তাতে বরং কথা শোনার মাঝখানে সম্ভাবনা থাকে নিজেদের চিন্তাজালে বার বার জড়িয়ে পড়ার। ফলে ভুল বুঝার এবং প্রশ্নের পর প্রশ্ন করার অবকাশ সৃষ্টি হয়, যা প্রায়ই ঘটত ইয়াহূদীদের ক্ষেত্রে। তাই মুমিনদের ব্যাপার সম্পূর্ণ ভিন্ন, তাদেরকে আলোর পথে চলার পাথেয় শুনতে হবে স্বতঃস্ফুর্ত আগ্রহ ও গভীর মনোযোগের সাথে, আর মানতে হবে খুশি মনে, তৃপ্তির সাথে।
﴿مَّا يَوَدُّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۡ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِ وَلَا ٱلۡمُشۡرِكِينَ أَن يُنَزَّلَ عَلَيۡكُم مِّنۡ خَيۡرٖ مِّن رَّبِّكُمۡۚ وَٱللَّهُ يَخۡتَصُّ بِرَحۡمَتِهِۦ مَن يَشَآءُۚ وَٱللَّهُ ذُو ٱلۡفَضۡلِ ٱلۡعَظِيمِ ١٠٥ ﴾ [البقرة: ١٠٥]
১০৫. আহলে কিতাব১৪৪ ও মুশরিকদের১৪৫ মধ্য থেকে যারা কুফুরী করেছে, তারা চায় না যে, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের উপর কোন কল্যাণ নাযিল হোক। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে তাঁর রহমত দ্বারা খাস করেন এবং আল্লাহ মহান অনুগ্রহের অধিকারী।
১৪৪. পূর্বে অবতীর্ণ আসমানী কিতাবসমূহের অনুসারী।
১৪৫. যারা আল্লাহর সাথে অন্যকাউকে শরীক করে অথবা আল্লাহর ইবাদাতের সাথে অন্য কারও ইবাদাত করে।
﴿مَا نَنسَخۡ مِنۡ ءَايَةٍ أَوۡ نُنسِهَا نَأۡتِ بِخَيۡرٖ مِّنۡهَآ أَوۡ مِثۡلِهَآۗ أَلَمۡ تَعۡلَمۡ أَنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٌ ١٠٦ ﴾ [البقرة: ١٠٦]
১০৬. আমরা যে আয়াত রহিত করি কিংবা ভুলিয়ে দেই, তার চেয়ে উত্তম কিংবা তার মতো১৪৬ আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
১৪৬. এখানে একটি বিশেষ সন্দেহের জবাব দেওয়া হয়েছে, যা মুসলিমদের অন্তরে সৃষ্টির জন্য ইয়াহূদীরা চেষ্টা চালাত। তাদের অভিযোগগুলো ছিল নিম্নরূপ:
ক. পূর্ববর্তী কিতাবগুলো যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসে থাকে এবং এ-কুরআনও তাঁর পক্ষ থেকেই এসে থাকে, তাহলে ঐ কিতাবগুলোর কিছু বিধানের ক্ষেত্রে এখানে ভিন্নতর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কেন?
খ. একই আল্লাহর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিধান কীভাবে আসতে পারে?
গ. আবার কুরআন দাবি করছে যে, ইয়াহূদী ও খৃষ্টানরা তাদেরকে দেওয়া শিক্ষার কিছু অংশ ভুলে গেছে। আল্লাহপ্রদত্ত শিক্ষা হাফেযদের মন থেকে কি করে মুছে যেতে পারে?
হিদায়াত অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে নয় বরং আল-কুরআন যে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, এ ব্যাপারে মুসলিমদের মনে সন্দেহ সৃষ্টির লক্ষ্যেই তারা এগুলো করতো।
এর জবাবে মহান আল্লাহ বলছেন, তিনিই মালিক, তাঁর ক্ষমতা সীমাহীন, তিনি তাঁর যে কোন নির্দেশকে ইচ্ছা করে রহিত করে দেন বা যে কোনো বিধানকে বিলুপ্ত করেন; কিন্তু যা তিনি রহিত বা বিলুপ্ত করেন, তার চেয়ে উওম অথবা কমপক্ষে সমতুল্য কল্যাণময় ও উপযোগী বিধান সেখানে স্থলাভিষিক্ত করেন। আর বিধান প্রদানে মূল লক্ষ্য হলো আনুগত্যের পরীক্ষা নেওয়া। তাই তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিধান দিয়ে বান্দাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন। এতে সন্দেহ করার কিছুই নেই।
﴿ أَلَمۡ تَعۡلَمۡ أَنَّ ٱللَّهَ لَهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۗ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ مِن وَلِيّٖ وَلَا نَصِيرٍ ١٠٧ ﴾ [البقرة: ١٠٧]
১০৭. তুমি কি জান না যে, নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহর। আর আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী নেই।
﴿ أَمۡ تُرِيدُونَ أَن تَسَۡٔلُواْ رَسُولَكُمۡ كَمَا سُئِلَ مُوسَىٰ مِن قَبۡلُۗ وَمَن يَتَبَدَّلِ ٱلۡكُفۡرَ بِٱلۡإِيمَٰنِ فَقَدۡ ضَلَّ سَوَآءَ ٱلسَّبِيلِ ١٠٨ ﴾ [البقرة: ١٠٨]
১০৮. নাকি তোমরা চাও তোমাদের রাসূলকে প্রশ্ন করতে, যেমন পূর্বে মূসাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল?১৪৭ আর যে ঈমানকে কুফরে পরিবর্তন করবে, সে নিশ্চয় সোজা পথ বিচ্যুত হলো।
১৪৭. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের উদ্দেশ্যে এক ভাষণে বললেন: ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য হজ ফরয করেছেন’। তখন সে উপস্থিতি থেকে একজন (আকরা ইবন হাবেস) দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন: ‘হে আল্লাহর রাসূল! প্রতি বছরই কি হজ ফরয’? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথার উত্তর না দিয়ে চুপ থাকলেন। এমনকি লোকটি তিনবার এ প্রশ্ন করল। পরে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘আমি যদি হ্যাঁ বলতাম তাহলে তোমাদের জন্য অবশ্যই প্রতি বছর হজ্জ ফরয হয়ে যেত। তখন তা তোমরা পালন করতে সক্ষম হতে না’। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘আমি যতক্ষন কিছু না বলি, ততক্ষণ তোমরাও আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করো না। অতিরিক্ত প্রশ্ন করে শরী‘আতকে কঠিন করো না। তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিরাও এভাবে তাদের নবীদেরকে অধিক প্রশ্ন করে এবং সে ব্যাপারে নিজেরা মতানৈক্য করে ধ্বংস হয়েছে। সুতরাং যখন আমি তোমাদেরকে কিছু করার নির্দেশ দেই, সাধ্যানুসারে তা পালন করো; আর যখন কিছু থেকে বিরত থাকতে বলি, তা তোমরা পরিত্যাগ করো’। (সহীহ মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘মুসলিমদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অপরাধী ঐ ব্যক্তি, যে এমন জিনিস সম্পর্কে প্রশ্ন করল যা হারাম ছিল না, কিন্তু তার প্রশ্নের কারণে তা হারাম হয়ে গেল’। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন: ‘তোমরা বাজে কথা, সম্পদ বিনষ্ট করা এবং বেশি প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকো’। (সহীহ আল-বুখারী)
﴿وَدَّ كَثِيرٞ مِّنۡ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِ لَوۡ يَرُدُّونَكُم مِّنۢ بَعۡدِ إِيمَٰنِكُمۡ كُفَّارًا حَسَدٗا مِّنۡ عِندِ أَنفُسِهِم مِّنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ ٱلۡحَقُّۖ فَٱعۡفُواْ وَٱصۡفَحُواْ حَتَّىٰ يَأۡتِيَ ٱللَّهُ بِأَمۡرِهِۦٓۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ١٠٩ ﴾ [البقرة: ١٠٩]
১০৯. আহলে কিতাবের অনেকেই চায়, যদি তারা তোমাদেরকে ঈমান আনার পর কাফির অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারত! সত্য স্পষ্ট হওয়ার পর তাদের পক্ষ থেকে হিংসাবশত (তারা এরূপ করে থাকে)। সুতরাং তোমরা ক্ষমা কর এবং এড়িয়ে চল,১৪৮ যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁর নির্দেশ দেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
১৪৮. বিরোধীদের হিংসা-বিদ্বেষ দেখে মুমিন ব্যক্তিরা উত্তেজিত হয়ে পড়বে না, ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে না। ধৈর্য্যের সাথে আল্লাহর স্মরণ, তাঁর ওপর তাওয়াক্কুল (ভরসা) ও সৎকর্মে তৎপর থাকবে। বিরোধীদের কথায় উৎকন্ঠিত না হয়ে তা বরং এড়িয়ে যাবে।
মহান আল্লাহ বলেন: নিশ্চয় তারা ভীষণ কৌশল করছে। আর আমিও ভীষণ কৌশল করছি। অতএব, কাফিরদেরকে কিছুটা অবকাশ দাও, কিছু সময়ের তাদেরকে অবকাশ দাও। (দেখুন: সূরা আত-তারিক, আয়াত ১৫-১৭)
﴿وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَمَا تُقَدِّمُواْ لِأَنفُسِكُم مِّنۡ خَيۡرٖ تَجِدُوهُ عِندَ ٱللَّهِۗ إِنَّ ٱللَّهَ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٞ ١١٠ ﴾ [البقرة: ١١٠]
১১০. আর তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও এবং যে নেক আমল তোমরা নিজদের জন্য আগে পাঠাবে, তা আল্লাহর নিকট পাবে।১৪৯ তোমরা যা করছ নিশ্চয় আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।
১৪৯. পরকালের প্রস্তুতি সম্পর্কে আরো পড়তে ক্লিক করুন নিম্নের দুটি লিংক:
http://www.islamhouse.com/p/41497 http://www.islamhouse.com/p/41478
﴿وَقَالُواْ لَن يَدۡخُلَ ٱلۡجَنَّةَ إِلَّا مَن كَانَ هُودًا أَوۡ نَصَٰرَىٰۗ تِلۡكَ أَمَانِيُّهُمۡۗ قُلۡ هَاتُواْ بُرۡهَٰنَكُمۡ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ١١١ ﴾ [البقرة: ١١١]
১১১. আর তারা বলে, ইয়াহূদী কিংবা নাসারা ছাড়া অন্য কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এটা তাদের মিথ্যা আশা।১৫০ বল, ‘তোমরা তোমাদের প্রমাণ নিয়ে আস, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক’।
১৫০. এটি মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের আরেকটি প্ররোচনা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে যে, নাজাত তথা পরকালে মুক্তির পথ হলো ইয়াহূদী অথবা খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করা। তাদের দাবি অনুযায়ী এ দু’টিই আল্লাহ প্রদত্ত এবং তা বিদ্যমান থাকা অবস্থায় নতুন কোনো জীবন-ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই।
এখানে লক্ষ্যণীয় যে, তারা পরস্পর চরম শত্রু হওয়া সত্ত্বেও ইসলামের বিরোধীতায় তারা ঐক্যবদ্ধ, যা মুসলিমদের বিরোধীদের চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য।
﴿بَلَىٰۚ مَنۡ أَسۡلَمَ وَجۡهَهُۥ لِلَّهِ وَهُوَ مُحۡسِنٞ فَلَهُۥٓ أَجۡرُهُۥ عِندَ رَبِّهِۦ وَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ١١٢ ﴾ [البقرة: ١١٢]
১১২. হ্যাঁ, যে নিজকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করেছে এবং সে সৎকর্মশীলও, তবে তার জন্য রয়েছে তার রবের নিকট প্রতিদান। আর তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।১৫১
১৫১. অর্থাৎ পরকালে মুক্তি ও জান্নাত প্রাপ্তির জন্য ইয়াহূদী বা খৃষ্টান নয়, বরং প্রকৃত অর্থে আল্লাহর জন্য হতে হবে সমর্পিত, মুসলিম। সাথে থাকতে হবে ইহসান অর্থাৎ:
ক. পূর্ণ নিষ্ঠা, সততা ও মহান আল্লাহর ভয় এবং আশা বুকে ধারণ করে শরী‘আতের বিধি-নিষেধ পালনে সচেষ্ট হওয়া।
খ. লোক-দেখানো কোনো উদ্দেশ্যে নয়, বরং শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যেই কেবল ইবাদাত-বন্দেগী আদায় করা।
গ. প্রিয়নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রদর্শিত সুন্নাহ অনুসরণ করে সকল কর্ম যথার্থরূপে সম্পাদন করা।
যারা এভাবে ইবাদাত ও আনুগত্যের জীবনধারা গড়ে তুলবে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে নিশ্চিত প্রতিদান। তাদের কোনো শঙ্কা বা ভয়ের কারণ নেই।
মহান আল্লাহ বলেন:
(নিশ্চয় যারা বলে, ‘আল্লাহই আমাদের রব’ অতঃপর অবিচল থাকে, ফিরিশতারা তাদের কাছে নাযিল হয় (এবং বলে,) ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর তোমাদেরকে যার ওয়াদা দেওয়া হয়েছিল’।
আমরা দুনিয়ার জীবনে তোমাদের বন্ধু এবং আখিরাতেও। সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে যা তোমাদের মন চাইবে এবং সেখানে তোমাদের জন্য আরো থাকবে যা তোমরা দাবি করবে।) (দেখুন: সূরা হা-মীম আস-সাজ্দাহ, আয়াত ৩০-৩১)
﴿وَقَالَتِ ٱلۡيَهُودُ لَيۡسَتِ ٱلنَّصَٰرَىٰ عَلَىٰ شَيۡءٖ وَقَالَتِ ٱلنَّصَٰرَىٰ لَيۡسَتِ ٱلۡيَهُودُ عَلَىٰ شَيۡءٖ وَهُمۡ يَتۡلُونَ ٱلۡكِتَٰبَۗ كَذَٰلِكَ قَالَ ٱلَّذِينَ لَا يَعۡلَمُونَ مِثۡلَ قَوۡلِهِمۡۚ فَٱللَّهُ يَحۡكُمُ بَيۡنَهُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ فِيمَا كَانُواْ فِيهِ يَخۡتَلِفُونَ ١١٣ ﴾ [البقرة: ١١٣]
১১৩. আর ইয়াহূদীরা বলে, ‘নাসারাদের কোনো ভিত্তি নেই’ এবং নাসারারা বলে ‘ইয়াহূদীদের কোনো ভিত্তি নেই’। অথচ তারা কিতাব পাঠ করে। এভাবেই, যারা কিছু জানে না,১৫২ তারা তাদের কথার মতো কথা বলে। সুতরাং আল্লাহ কিয়ামতের দিন যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করত সে বিষয়ে তাদের মধ্যে ফয়সালা করবেন।
১৫২. মুশরিক (অংশীবাদী) ও নাস্তিকেরা।
﴿وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ أَن يُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ وَسَعَىٰ فِي خَرَابِهَآۚ أُوْلَٰٓئِكَ مَا كَانَ لَهُمۡ أَن يَدۡخُلُوهَآ إِلَّا خَآئِفِينَۚ لَهُمۡ فِي ٱلدُّنۡيَا خِزۡيٞ وَلَهُمۡ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٞ ١١٤ ﴾ [البقرة: ١١٤]
১১৪. আর তার চেয়ে অধিক যালেম কে, যে আল্লাহর মাসজিদসমূহে তাঁর নাম স্মরণ করা থেকে বাধা প্রদান করে এবং তা বিরাণ করতে চেষ্টা করে? তাদের তো উচিৎ ছিল ভীত হয়ে তাতে প্রবেশ করা।১৫৩ তাদের জন্য দুনিয়ায় রয়েছে লাঞ্ছনা আর আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে মহা আযাব।
১৫৩. ইবাদাতগৃহগুলো কখনো যালেম (অধিকার হরণকারী)-দের কর্তৃত্ব ও পরিচালনাধীনে থাকতে পারে না। বরং ঐ বিশেষ দীনী প্রতিষ্ঠানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও শাসন-কর্তৃত্বে থাকতে হবে এমন সব লোক, যারা মহান আল্লাহকে ভয় করে এবং সর্বোতভাবে তাঁর প্রতি অনুগত। তাহলে দুষ্কৃতিকারীরা সেখানে উপস্থিত হলেও দুষ্কর্ম করার সাহস পাবে না। কারণ তারা জানবে, সেখানে গিয়ে কোনো যুলুমের কাজ করলে তাদের শাস্তি পেতে হবে।
মহান আল্লাহ আল-কুরআনের অপর স্থানে বলেন: “মুশরিকদের অধিকার নেই যে, তারা আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করবে, নিজদের উপর কুফুরীর সাক্ষ্য দেওয়া অবস্থায়। এদেরই আমলসমূহ বরবাদ হয়েছে এবং আগুনেই তারা স্থায়ী হবে।” (দেখুন: সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১৭-১৮)
﴿وَلِلَّهِ ٱلۡمَشۡرِقُ وَٱلۡمَغۡرِبُۚ فَأَيۡنَمَا تُوَلُّواْ فَثَمَّ وَجۡهُ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ وَٰسِعٌ عَلِيمٞ ١١٥ ﴾ [البقرة: ١١٥]
১১৫. ১৫৪আর পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। সুতরাং তোমরা যে দিকেই মুখ ফিরাও, সে দিকেই আল্লাহর চেহারা।১৫৫ নিশ্চয় আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।১৫৬
১৫৪. এ আয়াতটি ‘কিবলা পরিবর্তন’ তথা বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে বায়তুল্লাহ (কা‘বা শরীফ)-এর দিকে কিবলা পরিবর্তনের পর অবতীর্ণ হয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় হিযরতের ১৬/১৭ মাস পর এই নির্দেশ দেওয়া হয় এভাবে:
(আকাশের দিকে বার বার তোমার মুখ ফিরানো আমি অবশ্যই দেখছি। অতএব, আমরা অবশ্যই তোমাকে এমন কিবলার দিকে ফিরাব, যা তুমি পছন্দ কর। সুতরাং তোমরা চেহারা মাসজিদুল হারামের দিকে ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাক, তার দিকেই তোমাদের চেহারা ফিরাও। আর নিশ্চয় যারা কিতাবপ্রাপ্ত হয়েছে, তারা অবশ্যই জানে যে, তা তাদের রবের পক্ষ থেক সত্য এবং তারা যা করে, সে ব্যাপারে আল্লাহ গাফিল নন।) (দেখুন: সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৪৪)
কিবলা পরিবর্তনের এ ব্যাপারটিকে নিয়ে বিরোধী-অবিশ্বাসীরা যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছিল, তার জবাবে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (আরো জানতে দেখুন: সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৪২, ১৪৫; সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৬-৯৭; সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৯৭)
১৫৫. অর্থাৎ মহান আল্লাহ সব দিক ও স্থানের মালিক। কাজেই তাঁর নির্দেশ মতো যে কোনো দিকে মুখ করে ইবাদাত করলে তাঁর উদ্দেশেই ইবাদত সমর্পিত হবে।
১৫৬. অর্থাৎ মহান আল্লাহ সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত, তিনি অসীম, অনন্ত। কোনো কোনো বিভ্রান্ত মানুষ তাঁকে নিজেদের মতো ভেবে থাকতে পারে! কিন্তু সর্বশক্তিমান আল্লাহর কর্তৃত্ব বিশাল ও বিস্তৃত এবং তাঁর অনুগ্রহ দানের ক্ষেত্র অত্যন্ত ব্যাপক। তাঁর কোনো বান্দা কোথায় কোন সময় কি উদ্দেশ্যে তাঁকে স্মরণ করছে, তা তিনি সার্বক্ষণিকভাবে জানেন।
﴿وَقَالُواْ ٱتَّخَذَ ٱللَّهُ وَلَدٗاۗ سُبۡحَٰنَهُۥۖ بَل لَّهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ كُلّٞ لَّهُۥ قَٰنِتُونَ ١١٦ ﴾ [البقرة: ١١٦]
১১৬. আর তারা বলে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। তিনি পবিত্র মহান; ১৫৭ বরং আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তা তাঁরই। সব তাঁরই অনুগত।