ইসলামী মিডিয়ার উৎস, মূলনীতি ও ভিত্তিসমূহ
[ বাংলা – Bengali – بنغالي ]
ড. মো: আব্দুল কাদের
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
2012 - 1434
الإعلام الإسلامي : المصادر والأصول والأسس
« باللغة البنغالية »
د. محمد عبد القادر
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا
2012 - 1434
ইসলামী মিডিয়ার উৎস, মূলনীতি ও ভিত্তিসমূহ
ইসলামী মিডিয়া একটি বিশেষায়িত মিডিয়া। যার উৎসমূল অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এর মূলভিত্তি প্রধান দু'টি বিষয়ের দিকে নিবদ্ধ। আর তা হল, কুরআনুল কারীম ও রাসূলের সুন্নাহ্। মিডিয়া মানুষের এক ধরনের প্রচেষ্টা ও তৎপরতা, যা যোগাযোগের সকল মাধ্যমকে অন্তর্ভুক্ত করে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালার উপর ভিত্তি করে এটি পরিচালিত হয়। যেসব মৌলিক নীতিমালার উপর ভিত্তি করে ইসলামী মিডিয়া পরিচালিত হবে, তা-ই ইসলামী মিডিয়ার ভিত্তি। নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হল:
ক.ইসলামী মিডিয়ার উৎসমূহ
প্রত্যেক মিডিয়ার উৎসমূল রয়েছে যার দ্বারা মিডিয়া পরিচালিত হয়। ইসলামী মিডিয়াও অনুরূপ উৎসের অধিকারী। এর উৎসসমূহ ইসলামের উৎসের মত। আর এটি একটি বিশেষায়িত মিডিয়া। নিম্নে এর উৎসসমূহ বিস্তারিত আলোকপাত করা হল:
প্রথমত: কুরআনুল কারীম
মহাগ্রন্থ আল্-কুরআন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির হেদায়েতের জন্য প্রেরিত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। এর অলৌকিকত্ব অত্যন্ত ব্যাপক, ভাষা উচ্চারণ, বর্ণনা ভঙ্গিমা,
অর্থ প্রভৃতি ক্ষেত্রে এটি অসাধারণ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। যেহেতু এটি মানবজাতির হেদায়াতের নিমিত্তে নাযিলকৃত, সেহেতু এতে দুনিয়া ও আখেরাতের সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿مَّا فَرَّطۡنَا فِي ٱلۡكِتَٰبِ مِن شَيۡءٖۚ ٣٨ ﴾ [الانعام: ٣٨]
''এ কিতাবে আমরা কোন কিছুই বাদ দেইনি।'' [1]
অতএব, আল-কুরআন রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে প্রেরিত রিসালাত যা মানবজাতির পূর্ণ হিদায়াতের জন্য অবতীর্ণ হয়েছে। ফলে এটি মিডিয়া বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও প্রভাবিত একটি গ্রন্থ। যাতে মানুষের মাঝে প্রভাব সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন মাধ্যম ও পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। আর মুসলিমগণ মানুষের পরস্পরের মাঝে যে কোনো সংবাদ বা ইসলামী দা'ওয়াতী মেসেজ পৌঁছে দিতে কুরআন থেকেই উপর্যুক্ত পদ্ধতি ও মাধ্যম অন্বেষণ করে। কুরআনুল কারীম বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের অন্তরের গভীরে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। ইসলামী মিডিয়াও মানব অন্তরের গভীরে যেতে চায় তার স্বাতন্ত্রতা বজায় রেখে। সুতরাং এর মূলভিত্তি প্রধান দু'টি বিষয়ের দিকে নিবদ্ধ। আর তা হল, কুরআনুল কারীম ও রাসূলের সুন্নাহ্। বিদায় হজ্জের ভাষণে এ দু'টি বিষয়কে আঁকড়ে ধরার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তৎকালীন অন্যতম গণমাধ্যম বক্তৃতার মাধ্যমে লাখ জনতার উপস্থিত শ্রোতামণ্ডলী ও অনুপস্থিত সকল মুসলিমকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন -
«تَركْتُ فيكُمْ أَمْرَيْنِ لنْ تَضِلُّوا ما تَمسَّكْتُمْ بهما: كتابَ الله وسنّة رسولِهِ»
''আমি তোমাদের কাছে দু'টি বিষয় রেখে যাচ্ছি, তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না যতক্ষণ সেগুলো আঁকড়ে ধরে রাখ- আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাত[2]।''
ইসলামী মিডিয়ার অবশ্য কর্তব্য হলো উপর্যুক্ত দু'টি বিষয়কে আবশ্যক করে নেয়া, চাই তা তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে হোক অথবা বাস্তবিক অনুশীলনের ক্ষেত্রে হোক। অন্যথায় এটি ইসলামী মিডিয়া বলে গণ্য হবে না। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٖ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمۡرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُ مِنۡ أَمۡرِهِمۡۗ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلٗا مُّبِينٗا ٣٦ ﴾ [الاحزاب: ٣٦]
''আর আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল কোনো বিষয়ের ফয়সালা দিলে কোনো মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য সে বিষয়ে তাদের কোনো (ভিন্ন সিদ্ধান্তের) ইখতিয়ার সংগত নয়। আর যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট হবে।''[3]
ইসলামের সকল বিধি-বিধানের প্রধান উৎস আল কুরআন। চাই তা ইবাদতের ক্ষেত্রে হোক অথবা মু'আমিলাতের ক্ষেত্রে হোক। উসূলবিদগণের নিকট কুরআন হলো,
"كلام الله تعالى المنزّل على رسول الله صلى الله عليه وسلم المنقول عنه نقلا متواترا بلا شبهة والمكتـوب في المصاحف وهو اسم للنظم والمعنى جميعا"
অর্থাৎ ''মহান আল্লাহর সে বাণী, যা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং অসংখ্য ধারাবাহিক সূত্রে সন্দেহাতীতভাবে বর্ণিত হয়েছে; আর যা সহীফাতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এটি শব্দ ও অর্থ উভয়টির নাম''।
এর তেলাওয়াত ব্যতীত সালাত শুদ্ধ হয় না। আল্লাহ বলেন,
﴿ ۞ فَٱقۡرَءُواْ مَا تَيَسَّرَ مِنۡهُۚ ٢٠ ﴾ [المزمل: ٢٠]
''তোমরা কুরআনের সহজ অংশ তেলাওয়াত কর।''[4]
কুরআনের তেলাওয়াত ইবাদাত এবং গবেষণামূলক অধ্যয়ন মানুষকে আল্লাহর নৈকট্যশীল করে। যারা তা অস্বীকার করে তারা কাফির হিসেবে সাব্যস্ত হবে। এটি ইসলামী শরীয়তের যে কোনো দলীল-প্রমাণাদির ক্ষেত্রে প্রথম উৎস। আর এটি প্রধান সংবিধান ও প্রধান উৎস হিসেবে স্বীকৃত।[5]
উপরে বর্ণিত কুরআনের সংজ্ঞা আরো স্পষ্ট করে দেয় যে, কুরআনের শব্দ ও অর্থ উভয়টি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। আর রাসূলের দায়িত্ব হলো শুধু তা পৌঁছে দেওয়া। যাকে আমরা ''الإعلام بالرسالة'' বলতে পারি।
কুরআনুল কারীম আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ قُرۡءَٰنًا عَرَبِيّٗا لَّعَلَّكُمۡ تَعۡقِلُونَ ٢ ﴾ [يوسف: ٢]
''নিশ্চয় আমরা কুরআনকে আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করেছি।'' [6]
অর্থাৎ কুরআনের অনুবাদ কুরআন নয়, আর তা দিয়ে কোনো হুকুমও সাব্যস্ত হবে না। সালাত শুদ্ধ হবে না। ইসলামী শরীয়তের এটি উৎসও হবে না। এছাড়াও কুরআনের মত ধারাবাহিক বর্ণনায় নাযিলকৃত অকাট্য বিশ্বাসসহ অবতীর্ণ কোনো কিছু এর সমান হতে পারে না । অতএব, এ অর্থে এটি সকল গবেষক, ফকীহ ও মুজতাহিদের নিকট প্রধান উৎস। পবিত্র কুরআনের বর্ণিত যাবতীয় বিধি-বিধান, শিক্ষা, শিষ্টাচার, আখলাক ইসলামী মিডিয়ার প্রধান উৎস। প্রত্যেক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব অথবা মিডিয়া সংস্থার উচিত হলো কুরআনুল কারীমের উপরোক্ত বিষয়াদির সাথে একাত্মতা পোষণ করা। ফলে ইসলামী মিডিয়ার বার্তা স্থির; যা পরিবর্তনীয় নয়। কেননা অন্যান্য মিডিয়ার উৎস মানব হওয়ায় তা পরিবর্তনীয়। কিন্তু ইসলামী মিডিয়ার উৎস কুরআন যা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। অতএব, মুসলিম মিডিয়া কর্মীর দায়িত্ব হলো- কোনো পরিবর্তন-পরিবর্ধন ব্যতিরেকে রিসালাতের প্রচার চালানো।[7]
রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রচার কাজ ও ইসলামী মিডিয়া একই সূত্রে গাঁথা। যদিও সময় ও পারিপার্শ্বিকতার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল। তথাপিও নূহ 'আলা্ইহিস সালাম, লূত 'আলা্ইহিস সালাম, ইব্রাহীম 'আলা্ইহিস সালাম, শু'আইব 'আলা্ইহিস সালাম, হুদ 'আলা্ইহিস সালাম ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-সহ নবী-রাসূলগণ মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদাতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
কুরআনুল কারীমে দা'ওয়াহ সংক্রান্ত, (إعلام) বা প্রচার-প্রোপাগান্ডা সংক্রান্ত, যোগাযোগ সংক্রান্ত অসংখ্য আয়াতের অবতারণা হয়েছে। এসব আয়াতে বর্ণিত পদ্ধতি ও বাচনভঙ্গি কুরআনের ভাষায় মিডিয়ার মডেল হিসেবে উপস্থাপিত হওয়াকে আরো সুদৃঢ় করেছে। ফলে কুরআন অধ্যয়ন ও তার যথার্থ অনুধাবন ইসলামী মিডিয়ার অন্যতম প্রধান কাজ। কুরআনুল কারীম মানুষের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। নিম্নে সেসব পদ্ধতির বর্ণনা উপস্থাপিত হল।[8]
এক. কিসসা (القصة)
পবিত্র কুরআনের এক গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনাধারা হলো কিসসা কাহিনী। মানব জীবনের বিভিন্ন অনুষঙ্গ নিয়ে এসব কিসসা বর্ণিত হয়েছে। ইউসূফ 'আলা্ইহিস সালাম এর জীবন কাহিনীকে সর্বোত্তম কিসসা হিসেবে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এগুলোর উদ্দেশ্য হলো মানুষকে শিক্ষা দেয়া। ফলে মানুষের মাঝে কুরআনের নির্দেশনা পৌঁছে দিতে এটি অন্যতম একটি পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত রয়েছে। এসব বর্ণনা ও কাহিনী সত্য। কুরআনের এসব কিসসা কাহিনী মিডিয়ার উদ্দেশ্যকে বিভিন্নভাবে সুস্পষ্ট করে তোলে। যেমন:
ক. সংবাদ (أخبار) : এক্ষেত্রে আদম 'আলা্ইহিস সালাম এর জীবনী ও এ ধরাধামে তার সন্তানদের কাহিনীও বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়াও মূসা 'আলা্ইহিস সালাম, হারূন 'আলা্ইহিস সালাম ও তাদের বিরুদ্ধাচরণকারী ফিরআউনের ঘটনাবলীসহ অনেক ঘটনা বিবৃত হয়েছে।
খ. প্রশিক্ষণ (تربية) : কুরআন কিসসা কাহিনী বর্ণনাকে তারবিয়া বা প্রশিক্ষণের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করেছে। কিভাবে মানুষ তাদের জীবন অতিবাহিত করবে এবং কিসে তাদের মুক্তি ও কিসে তাদের সফলতা রয়েছে তা উপস্থাপন করা হয় কিসসার মধ্যে। এক্ষেত্রে ইউসূফ 'আলা্ইহিস সালাম এর কাহিনী ও মিশরের রাজার স্ত্রী জোলায়খার ঘটনা অন্যতম।
গ. দৃঢ়ীকরণ (تثبيت) : কুরআনের কাহিনীর অন্যতম টার্গেট হলো মু'মিনের অন্তরকে দৃঢ় করা এবং কষ্ট ও দুঃখের কারণে মানব মনে যেসব দুশ্চিন্তা, দুঃখ, বেদনা, কষ্ট, সৃষ্টি হয় তা হতে বিরত রাখা। কুরআনুল কারীমে রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্তরকে সুদৃঢ় করার জন্য অনেক কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। যেগুলোর মাধ্যমে ইসলামী দা'ওয়াহর পথে যুদ্ধ-বিগ্রহ অশান্তি ও তার সাহাবীদের কষ্ট দেখে বিচলিত না হয়ে দ্বীনের উপর অটল অবিচল থাকতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
ঘ. শিক্ষা (تعليم) : কুরআনে বর্ণিত অধিকাংশ কিসসা-কাহিনী মানুষকে তাদের দ্বীনের মূল ভিত্তি ও শিষ্টাচার সম্পর্কে শিক্ষা দেয়। কিরূপে মানুষ তাদের সন্তানদের সাথে আচরণ করবে, কিভাবে অপরাধীর প্রতিশোধ নিবে এবং মুহসিন বা সৎ মানুষ হওয়া যাবে এসব শিক্ষা দেয়। এক্ষেত্রে হাবিল কাবিলের কাহিনী ও শু'আইব এর কন্যাদ্বয়ের সাথে মূসা 'আলা্ইহিস সালাম এর আচরণ উল্লেখযোগ্য। তাছাড়াও ইসলামী দা'ওয়াত ও আখলাকের মূলনীতি এবং পবিত্র জীবনের ভিত্তি সম্পর্কেও কিসসা ও কাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
দুই. সংলাপ (الحوار)
কুরআনের অনেক স্থানে (الحوار) সংলাপের পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে যা মিডিয়ার অন্যতম কাজ। এর নীতিমালা আমরা ইবরাহিম 'আলা্ইহিস সালাম ও তাঁর রবের মধ্যকার সংলাপের মধ্যে দেখতে পাই। যেমন আল্লাহ বলেন:
﴿ وَإِذۡ قَالَ إِبۡرَٰهِۧمُ رَبِّ أَرِنِي كَيۡفَ تُحۡيِ ٱلۡمَوۡتَىٰۖ قَالَ أَوَ لَمۡ تُؤۡمِنۖ قَالَ بَلَىٰ وَلَٰكِن لِّيَطۡمَئِنَّ قَلۡبِيۖ قَالَ فَخُذۡ أَرۡبَعَةٗ مِّنَ ٱلطَّيۡرِ فَصُرۡهُنَّ إِلَيۡكَ ثُمَّ ٱجۡعَلۡ عَلَىٰ كُلِّ جَبَلٖ مِّنۡهُنَّ جُزۡءٗا ثُمَّ ٱدۡعُهُنَّ يَأۡتِينَكَ سَعۡيٗاۚ وَٱعۡلَمۡ أَنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٢٦٠ ﴾ [البقرة: ٢٦٠]
''আর যখন ইব্রাহীম বলল, 'হে আমার রব! কিভাবে আপনি মৃতকে জীবিত করেন আমাকে দেখান', তিনি বললেন, 'তবে কি আপনি ঈমান আনেন নি?' তিনি বললেন, 'অবশ্যই হাঁ, কিন্তু আমার মন যাতে প্রশান্ত হয়!' আল্লাহ্ বললেন, 'তবে চারটি পাখি নিন এবং তাদেরকে আপনার বশীভূত করুন। তারপর সেগুলোর টুকরো অংশ এক এক পাহাড়ে স্থাপন করুন। তারপর সেগুলোকে ডাকুন, সেগুলো আপনার নিকট দৌড়ে আসবে। আর জেনে রাখুন, নিশ্চয় আল্লাহ্ প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।'' [9]
অনুরূপ ভাবে মূসা 'আলা্ইহিস সালাম ও ফির'আউনের মধ্যকার সংলাপ কুরআনে এসেছে।
﴿ قَالَ فِرۡعَوۡنُ وَمَا رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢٣ قَالَ رَبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَمَا بَيۡنَهُمَآۖ إِن كُنتُم مُّوقِنِينَ ٢٤ قَالَ لِمَنۡ حَوۡلَهُۥٓ أَلَا تَسۡتَمِعُونَ ٢٥ قَالَ رَبُّكُمۡ وَرَبُّ ءَابَآئِكُمُ ٱلۡأَوَّلِينَ ٢٦ قَالَ إِنَّ رَسُولَكُمُ ٱلَّذِيٓ أُرۡسِلَ إِلَيۡكُمۡ لَمَجۡنُونٞ ٢٧ قَالَ رَبُّ ٱلۡمَشۡرِقِ وَٱلۡمَغۡرِبِ وَمَا بَيۡنَهُمَآۖ إِن كُنتُمۡ تَعۡقِلُونَ ٢٨ قَالَ لَئِنِ ٱتَّخَذۡتَ إِلَٰهًا غَيۡرِي لَأَجۡعَلَنَّكَ مِنَ ٱلۡمَسۡجُونِينَ ٢٩ ﴾ [الشعراء: ٢٣، ٢٩]
''ফির'আউন বলল, 'সৃষ্টিকুলের রব আবার কী? মূসা বললেন, 'তিনি আসমানসমূহ ও যমীন এবং তাদের মধ্যবর্তী সব কিছুর রব, যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাসী হও। ফির'আউন তার আশেপাশের লোকদের লক্ষ্য করে বলল, 'তোমরা কি ভাল করে শুনছ না?' মূসা বললেন, 'তিনি তোমাদের রব এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও রব।' ফির'আউন বলল, 'তোমাদের প্রতি প্রেরিত তোমাদের রাসূল তো অবশ্যই পাগল।' মূসা বললেন, 'তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের এবং তাদের মধ্যবর্তী সব কিছুর রব; যদি তোমরা বুঝে থাক!' ফির'আউন বলল, 'তুমি যদি আমার পরিবর্তে অন্যকে ইলাহরূপে গ্রহণ কর আমি তোমাকে অবশ্যই কারারুদ্ধ করব'।''[10]
এছাড়াও পবিত্র কুরআনে মিডিয়ার পরিধি অত্যন্ত ব্যপক। মানব জীবনের বিভিন্ন অংশে এটি ব্যাপৃত।[11] যেমন:
আকীদা সংক্রান্ত (الإعلام عن العقيدة الربانيّة)
ইবাদাত ও মু'আমালাত (الإعلام عن العبادات والمعاملات)
চরিত্র (الإعلام عن الأخلاق)
জিহাদ (الإعلام عن الجهاد)
শাস্তির বিধান (الإعلام عن نظام الحدود والعقوبات)
পারিবারিক ব্যবস্থা (الإعلام عن نظام الأسرة)
অদৃশ্য ও পূর্ববর্তী উম্মতদের অবস্থা (الإعلام عن المغيبات وأحوال الأمم السابقة)
জীবনের বিভিন্ন দিক (الإعلام عن نواحي الحياة)
দ্বিতীয়ত:সুন্নাহ
ইসলামী শরী'আতের দ্বিতীয় উৎস হলো সুন্নাহ। আর তা হলো: রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা, কাজ ও সমর্থনের সমষ্টি। এটি তিন ভাগে বিভক্ত।
ক. সুন্নাতে মুয়াক্কিদাহ: যা পবিত্র কুরআনে বিধৃত হয়েছে। আর রাসূলের সুন্নাতে সেটাকে তাকিদ দেওয়া হয়েছে।
খ. সুন্নাতে মুবাইয়্যেনাহ: যার কিছু অংশ কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। আবার কিছু অংশ নির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং কিয়দাংশ মুতলাক। হাদীসে সেটাকে বিস্তারিত বর্ণনা করেছে। কিংবা সেটার শর্তহীনতাকে শর্তযুক্ত করেছে। অথবা সেটার সাধারণ নির্দেশকে বিশেষায়িত করেছে।
গ. সুন্নাহ মুশাররি'আহ: এমন সব বিধান যা শুধু হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে কুরআন নিরব। কিন্তু এতে কুরআনের সাথে কোনো বৈপরিত্য দেখা যায় না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দা'ওয়াতী মিশনের সাথে সংশ্লিষ্ট হল সুন্নাত। প্রত্যেক রাসূলের আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়বদ্ধতা রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَلَقَدۡ وَصَّلۡنَا لَهُمُ ٱلۡقَوۡلَ لَعَلَّهُمۡ يَتَذَكَّرُونَ ٥١ ﴾ [القصص: ٥١]
“আর অবশ্যই আমরা তাদের জন্য বাণীকে বিস্তৃত বণনা করেছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।" [12]
ফলে রাসূলগণ আল্লাহর পক্ষ থেকে, বান্দা ও আল্লাহর মাঝে দূত ছিলেন। মানুষের জন্য যা কল্যাণকর তার নির্দেশনা দান ও হেদায়াতের আলোকবর্তিকা দেখানো নবী-রাসূলের একমাত্র কাজ। আর এটি ইসলামী মিডিয়ারও অন্যতম কাজ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
রাসূলগণের এতদসংক্রান্ত কার্যাবলীকে আমরা দু'ভাগে ভাগ করতে পারি।
প্রথমতঃ আল্লাহর বাণীর প্রচার করা (إبلاغ كلمات الله)
দ্বিতীয়তঃ আল্লাহর বাণী বর্ণনা করা (بيان كلمات الله)
উপর্যুক্ত প্রথমটি দ্বিতীয়টির সাথে সম্পৃক্ত। রাসূল ও মানুষের মাঝে যে যোগাযোগ রয়েছে, সেটি যার মাধ্যমে প্রভাবিত হয় তা শুধু প্রচার দ্বারাই সম্ভব নয়। বরং একে আরো সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করা অত্যন্ত জরুরী।
দীনের আলোচ্য বিষয় মানব জাতি। আর যোগাযোগ হল দীনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহী প্রাপ্ত হয়ে দীনের এ মহান কাজে ব্রতী হয়েছিলেন। তিনি সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতঃ তাদের হেদায়াত অন্বেষণ করতেন। মক্কার মুশরিকরা রাসূলের চাচা আবু তালিবের মাধ্যমে তাঁকে এ কাজ হতে বাধা দিলেও তিনি দা'ওয়াতের এ মিশন থেকে বিরত হন নি।[13]
ইসলামী মিডিয়ার ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন এক অনুপম আদর্শ। তিনি ব্যক্তি যোগাযোগের মাধ্যমে অসংখ্য মুশরিককে ঈমানের ছায়াতলে নিয়ে এসেছিলেন। নবুওয়ত লাভের পর ইসলাম প্রচারে সকল উপকরণ কার্যত করার মাধ্যমে তিনি দীনের প্রচারে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। বিভিন্ন সীরাত গ্রন্থ ও সুন্নাত কোষ অধ্যয়নের মাধ্যমে তার এমন চারিত্রিক গুণাবলী ফুটে উঠে, যা মূলতঃ ইসলামী দা'ওয়াহ প্রচারকারী বা মিডিয়া ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি।
''তিনি নম্র প্রকৃতির ছিলেন, উত্তম কথা বলতেন, বাজে কথা পরিহার করতেন। প্রত্যেক মানুষকে তাদের জ্ঞান অনুযায়ী সম্বোধন করতেন। তিনি পরিচিত সকল গোত্রের সাথে আলাপচারিতা করতেন। তিনি কঠোর ছিলেন না, মন্দের জবাবে ভাল ব্যবহার করতেন, অধিক দানশীল ছিলেন, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে মানুষকে দেখতেন। আল্লাহকে সর্বাধিক ভালবাসতেন। সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করে কাজ করতেন। বিধবা ও মিসকীনদের প্রয়োজন মেটাতে এগিয়ে আসতেন, কষ্ট সহিষ্ণু ছিলেন। গরীব ও অভাবীদের সাথে নিয়ে পানাহার করতেন, বাজার থেকে নিজ হাতে দ্রব্যসামগ্রী বহন করে আনতেন।''[14]
উপর্যুক্ত আলোচনার মাধ্যমে একজন ইসলামী মিডিয়া কর্মীর সৃষ্টিগত, চারিত্রিক, ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিভিন্ন গুণাবলী নির্দিষ্ট করা হয়েছে।[15]
ক. সৃষ্টিগত গুণ
যেমন নম্র কথা, উত্তম শব্দ। গণ মাধ্যমের ক্ষেত্রে এ দু'টো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন দৃশ্যমান ও শ্রুত গণমাধ্যমসমূহ।
খ. চারিত্রিক গুণ
কাউকে বর্জন না করা, বাজে কথা না বলা, সহজ ও বোধগম্য শব্দ চয়ন করা এবং কঠোরতা পরিহার করা।
গ. ব্যক্তিত্ব
মন্দের বিপরীতে খারাপ কথা ও মন্দ পরিহার করা, দয়া পরবশ থাকা, বঞ্চিতকে দান করা, জালিমকে ক্ষমা করে দেওয়া, আর আল্লাহকে ভয় করা। এগুলো মুসলিম ব্যক্তিকে উত্তম সংবাদ দানে এবং সংঘাত এড়িয়ে থাকতে সাহায্য করে।
ঘ. বাস্তবিক গুণাবলী:
মুসলিমের উপর অত্যাবশ্যক হল রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গুণাবলী অর্জন করা, বিশেষতঃ মিডিয়ার ক্ষেত্রে। সর্বসাধারণ সম্পর্কে জানা, তারপর প্রত্যেকের জ্ঞান অনুযায়ী সম্বোধন করা। বর্তমান যুগের মনস্তাত্ত্বিকদের নিকট এ পদ্ধতি সাধারণের উপর প্রভাব ফেলতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে এ পদ্ধতি অনুসরণ করে আমাদের দেখিয়ে গেছেন।
ইসলামী দা'ওয়াহ ও মিডিয়ার ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন তা নিম্নরূপ:
এক. বক্তৃতা
খুতবা বা ভাষণ মিডিয়ার অন্যতম মাধ্যম। বক্তৃতার মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদানের পাশাপাশি প্রভাব সৃষ্টি করাও সম্ভব হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন অনেক বড় খতীব। যুগে যুগে তাঁর খুতবার প্রভাবে মানব সমাজে যথেষ্ট পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে দীনের দা'ওয়াত দিতে খুতবাকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন। রাসূলের জুমআর খুতবা, বিদায় হজ্বের ভাষণ সর্বস্তরের মানুষের জন্য এক নির্দেশনা।
দুই. পত্র প্রেরণ
পত্র প্রেরণের মাধ্যমে যোগাযোগ প্রক্রিয়া সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দা'ওয়াতের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে পত্র প্রেরণ করেছেন। তিনি সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের কাছে ইসলামের দা'ওয়াত দিয়ে পত্র প্রেরণ করতেন। তন্মধ্যে রোমের বাদশাহ হিরাক্লিয়াস ও পারস্যের বাদশাহ কায়সারের কাছে প্রেরিত পত্র উল্লেখযোগ্য। হিরাক্লিয়াসকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন,
«بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ مِنْ مُحَمَّدٍ عَبْدِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ إِلَى هِرَقْلَ عَظِيمِ الرُّومِ: سَلاَمٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الهُدَى أَمَّا بَعْدُ فَإِنِّي أَدْعُوكَ بِدِعَايَةِ الإِسْلاَمِ أَسْلِمْ تَسْلَمْ يُؤْتِكَ اللَّهُ أَجْرَكَ مَرَّتَيْنِ فَإِنْ تَوَلَّيْتَ فَإِنَّ عَلَيْكَ إِثْمَ الأَرِيسِيِّينَ " وَ ﴿يَا أَهْلَ الكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَنْ لاَ نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ وَلاَ نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلاَ يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ﴾»
''পরম করুণাময় আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ হতে রোমের সম্রাট হিরাক্লিয়াসের প্রতি। সৎ পথ প্রাপ্তের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তৎপর, নিশ্চয়ই আমি তোমাকে ইসলামের দিকে আহ্বান করছি। ইসলাম গ্রহণ কর, নিরাপত্তা পাবে। আল্লাহ তোমাকে দ্বিগুণ প্রতিদান দিবেন। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নাও; তবে নিশ্চয় অধীনস্থদের অপরাধও তোমার উপর বর্তাবে। আর (আল্লাহ বলেন) 'আপনি বলুন, হে আহলে কিতাবগণ! এস সে কথায়, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই; যেন আমরা একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া কারো ইবাদাত না করি, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করি এবং আমাদের কেউ আল্লাহ্ ছাড়া একে অন্যকে রব হিসেবে গ্রহণ না করি।' তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তোমরা বল, তোমরা সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম'[16]।''
তিন. সংলাপ
সংলাপ যোগাযোগ প্রক্রিয়া হিসেবে খুব প্রাচীন। আল্লাহ তা'আলা মানুষকে কথা বলার ক্ষমতা দিয়েছেন; যা সংলাপের একমাত্র উপাদান। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিক, ইয়াহূদী, নাসারা সকলের সাথে সংলাপ করেছেন। তারা তাঁকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করতেন এবং তিনি তাদের সেসব প্রশ্নের জবাব দিতেন। ইসলামী মিডিয়ায় সংলাপকে একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে ইসলামী সভ্যতার প্রচার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব। ফলে অনেক আলিম, শিক্ষাবিদ, পন্ডিত, আহলে কিতাবদের সাথে সংলাপের আয়োজন করেছেন। সকল নবী রাসূলের প্রাথমিক উপাদান ছিল সংলাপ। তাঁরা অমুসলিমদের সাথে ডায়ালগ আদান-প্রদান করেই তাদেরকে ইসলামের আদর্শে অনুপ্রাণিত করেছেন।
খ. ইসলামী মিডিয়ার মূলনীতিসমূহ
মিডিয়া মানুষের এক ধরনের প্রচেষ্টা ও তৎপরতা, যা যোগাযোগের সকল মাধ্যমকে অন্তর্ভুক্ত করে। চাই তা সরাসরি ব্যক্তিগত যোগাযোগ হোক বা সামাজিক হোক। মিডিয়া কর্মী তা পরিবেশনে কৌশল ও পদ্ধতি অবলম্বন করে যা সংশ্লিষ্ট সংবাদ পৌঁছাতে সহায়তা করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মিডিয়া পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তবে সেগুলোর জন্য নির্দিষ্ট কতিপয় নীতিমালা থাকে যার উপর ভিত্তি করে মিডিয়া পরিচালিত হয়। অনুরূপভাবে ইসলামী মিডিয়াও সুনির্দিষ্ট নীতিমালার উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়। আর সেগুলো হলো:
ক. ইসলামী আকীদা
ইসলামী মিডিয়া মানুষের এমন সব আকীদা-বিশ্বাসের সাথে সংশ্লিষ্ট যা কুরআন সুন্নাহর সাথে সংগতিপূর্ণ। এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নের আকীদা পোষণ করা আবশ্যক। যাকে তাওহীদ বা একত্ববাদ বলে। আর এটি উলূহিয়াত, রুবুবিয়াত ও আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক কেমন হবে তা নির্দেশ করে।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহর পক্ষ হতে 'ওহী' প্রাপ্ত হয়ে রিসালাতের অধিকারী হয়েছেন। আর তাঁর বড় ওহী হচ্ছে আল্-কুরআন। এতে করণীয় ও বর্জনীয় সকল কাজ সম্পর্কে নির্দেশনা রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা প্রাপ্ত হয়েছেন তা বাস্তবায়ন করা নিজের জন্য আবশ্যক করে নিয়েছিলেন। ফলে তিনি রিসালাতের দায়িত্ব পালনে ও তা প্রচার-প্রসারে জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তারপর খুলাফায়ে রাশেদীনও তাঁর অনুসৃত নীতি কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরে বাস্তবায়ন করে গেছেন। তবে তাদের সকল প্রচেষ্টা ছিল ঈমান ও আকীদা সম্পর্কে মানুষকে সজাগ করা। ইসলামী বিধি-বিধানের অনুসরণ করা এবং তার অনুগত হওয়া।
খ. স্বাধীনতা ও জবাবদিহীতা
মানুষ এক স্বাধীনসত্তা। ইসলাম তাকে আকীদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও স্বাধীনতা দিয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ যাবতীয় কাজে মানুষের অবাধ স্বাধীনতা রয়েছে। তবে এ স্বাধীনতা লাগামহীন নয়। এর রয়েছে জবাবদিহিতা, যাতে করে জনসাধারণের কল্যাণ ও ইসলামী বিধানের অনুসরণ হয়। ফলে ইসলাম প্রদত্ত স্বাধীনতায় কোনো বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘন থাকে না। এ মর্মে আল্লাহ বলেন:
﴿ وَلَا تَعۡتَدُوٓاْۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُعۡتَدِينَ ١٩٠ ﴾ [البقرة: ١٩٠]