Articles




“আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাবশার বাদশাহ নাজ্জাশীর মৃত্যুর খবর জানালেন, যেদিন তিনি মারা গেলেন, তারপর বললেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা কর’। ইবন শিহাব বলেন, সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যেব আমাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে নিয়ে মুসাল্লা বা জানাযা ও ঈদের সালাত আদায়ের স্থানে কাতার করে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলেন এবং তার ওপর চার তাকবীর দিয়ে সালাত শেষ করলেন।[50]”





চ- প্রথম তাকবীর দিয়ে আঊযুবিল্লাহ্… বিসমিল্লাহ্… পাঠ করে সূরা আল-ফাতিহা তারপর ছোট কোনো সূরা পাঠ করবে। দ্বিতীয় তাকবীর দিয়ে দুরূদে ইবরাহীম (যা সালাতে পাঠ করতে হয়) পাঠ করবে। এরপর তৃতীয় তাকবীর দিয়ে জানাযার জন্য বর্ণিত যে কোনো দো‘আ পাঠ করবে। নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করা যেতে পারে:








“ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাদের জীবিত ও মৃতদের ক্ষমা করুন। আমাদের ছোট ও বড়, পুরুষ ও স্ত্রী, উপস্থিত ও অনুপস্থিত সকলকে ক্ষমা করুন। ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাদের মাঝে যাকে জীবিত রাখেন, তাকে ঈমানের ওপর জীবিত রাখুন এবং যাকে মৃত্যু দেন, তাকে ইসলামের ওপর মৃত্যু দান করুন। ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাদের বিনিময় হতে মাহরূম করবেন না এবং এরপর আর আমাদের গুমরাহ করবেন না”।[51]





অথবা এ দো‘আটিও পড়া যেতে পারে:





 





“হে আল্লাহ! তাকে মাফ করে দাও ও তার প্রতি দয়া কর। তাকে নিরাপদ রাখ ও তার ত্রুটি মার্জনা কর। তাকে উত্তম সামগ্রী দান কর ও তার প্রবেশস্থলকে প্রশস্ত করে দাও। তাকে পানি, বরফ ও বৃষ্টি দ্বারা ধুয়ে মুছে দাও এবং গুনাহ থেকে এরূপ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে দাও যেরূপ সাদা কাপর ময়লা থেকে পরিষ্কার হয়ে যায়। তাকে তার ঘরকে উত্তম ঘরে পরিণত করে দাও, তার পরিবার থেকে উত্তম পরিবার দান কর, তার স্ত্রীর তুলনায় উত্তম স্ত্রী দান কর। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও এবং কবর ও জাহান্নামের ‘আযাব থেকে রক্ষা কর”।[52]





অথবা এ দো‘আও পড়া যায়:








“ইয়া আল্লাহ! নিশ্চয় অমুকের পুত্র অমুক আপনার যিম্মায়। আপনি তাকে কবরের ‘আযাব থেকে রক্ষা করুন”। বর্ণনাকারী আবদুর রহমান এরূপ দো‘আর কথা বলেছেন, “এ ব্যক্তি আপনার যিম্মায় এবং আপনার প্রতিবেশী। আপনি একে কবরের আযাবের ফিতনা ও জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন। আপনি ওয়াদা পূরণকারী এবং প্রশংসার প্রতীক। ইয়া আল্লাহ! আপনি একে ক্ষমা করুন এবং তার ওপর রহম করুন। আপনি মহাক্ষমাশীল, মেহেরবান”।[53]





ছ- এরপর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে সামান্য একটু চুপ থেকে ডান দিকে সালাম ফিরাবে। বাম দিকেও সালাম ফেরাতে পারে। কারো যদি জানাযার কিছু অংশ ছুটে যায়, তবে সে ইমামের অনুসরণ করবে। আর ইমামের সালাম ফিরানোর পর লাশ উঠানোর আগে যদি সম্ভব হয় তবে বাকী তাকবীর কাযা আদায় করে নিবে। সম্ভব না হলে ইমামের সাথেই সালাম ফিরিয়ে দিবে।





১০- মাইয়্যেতকে বহন করা ও দাফনের হুকুম:





মাইয়্যেতকে বহন ও তার দাফন-কাফন সম্পন্ন করা ফরযে কিফায়া। এমনকি সে কাফির হলেও।[54] এ ব্যাপারে আল্লাহর বাণী হলো,





﴿ثُمَّ أَمَاتَهُۥ فَأَقۡبَرَهُۥ ٢١﴾ [عبس : ٢١]





“তারপর তিনি তাকে মৃত্যু দেন এবং তাকে কবরস্থ করেন”। [সূরা আবাসা, আয়াত: ২১]





ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন,





«معناهُ: أكرمَهُ بدفنِهِ »





“এ আয়াতের অর্থ হলো, অতঃপর তিনি তাকে দাফনের মাধ্যমে কবরস্থ করে সম্মানিত করেছেন”।[55]





তাছাড়া মৃত্যুব্যক্তিকে ফেলে রাখা ও তার দাফন না করা মাইয়্যেতকে অসম্মান করা। তবে মাইয়্যেতকে বহন ও তার দাফন যদি মৃত্যু ব্যক্তির কাফির ওয়ারিস করেন তবে তা সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। কেননা মাইয়্যেতের এসব কাজের জন্য ইসলাম শর্ত নয়।





১১- দাফন কাজে মজুরী গ্রহণের হুকুম:





মাইয়্যেতকে বহন, দাফন, গোসল ও কাফন কাজে মজুরী গ্রহণ করা মাকরূহ। কেননা এসব কাজ হলো মুমিনের জন্য ইবাদত। আর ইবাদতের বিনিময়ে মজুরী গ্রহণ করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে না।





১২- জানাযা বহনের নিয়ম:





ক- হেটে চলা লোকজন জানাযার সামনে চলা সুন্নাত। তবে জানাযার পিছনে চলা মাকরূহ নয়। কেননা হাদীসে এসেছে, সালিম রহ. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন,





«رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ يَمْشُونَ أَمَامَ الْجَنَازَةِ»





“আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবূ বকর এবং উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে জানাযার আগে আগে যেতে দেখেছি”।[56]





ইমাম যুহুরী রহ. বলেন, সালিম রহ. তাকে বর্ণনা করেছেন যে,





«أَنَّ أَبَاهُ كَانَ يَمْشِي أَمَامَ الجَنَازَةِ».





“তার পিতা (আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু) জানাযার সামনে চলতেন”।[57]





আর আরোহীর জন্য সুন্নাত হলো জানাযার পিছনে চলা। মুগীরা ইবন শু‘বা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার ধারণা, যিয়াদের লোকেরা এরূপ বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,





 





“আরোহীর উচিৎ জানাযার পশ্চাতে পশ্চাতে গমন করা। আর পদব্রজে গমনকারী জানাযার আগে, পিছে, ডানে ও বামে যেতে পারে এবং সাথে সাথেও চলতে পারে। গর্ভপাত হওয়ার ফলে যে শিশু ভূমিষ্ঠ হয়, তার জানাযার সালাত পড়তে হবে এবং তার মাতা-পিতার জন্য মাগফিরাত ও রহমতের দো‘আ করা হবে”।[58]





তবে আরোহী ব্যক্তি জানাযার সামনে চলা মাকরূহ। কেননা সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীসে এসেছে, সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে একটি জানাযায় বের হলাম। তখন তিনি কিছু লোককে আরোহী অবস্থায় চলতে দেখে বললেন,





«أَلَا تَسْتَحْيُونَ إِنَّ مَلَائِكَةَ اللَّهِ عَلَى أَقْدَامِهِمْ وَأَنْتُمْ عَلَى ظُهُورِ الدَّوَابِّ»





“তোমাদের কি লজ্জা করে না, আল্লাহ ফিরিশতারা তো পায়ে হেটে চলছেন আর তোমরা চলছ পশুর পিঠে সাওয়ার হয়ে”।[59]





সালাতের মধ্যে যেমন ইমামের নিকটবর্তী থাকা উত্তম তেমনি জানাযার সময়ও মাইয়্যেতের নিকটবর্তী থাকা উত্তম। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,





«مَنِ اتَّبَعَ جِنَازَةً فَلْيَحْمِلْ بِجَوَانِبِ السَّرِيرِ كُلِّهَا؛ فَإِنَّهُ مِنَ السُّنَّةِ، ثُمَّ إِنْ شَاءَ فَلْيَتَطَوَّعْ، وَإِنْ شَاءَ فَلْيَدَعْ»





“যে ব্যক্তি লাশ বহন করে, সে যেন খাটের চারদিক ধারণ করে। কারণ, এটা সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর সে চাইলে আরো ধরতে পারে, আর চাইলে ত্যাগও করতে পারে”।[60]





খ- জানাযার সম্মানে দাঁড়ানো মাকরূহ। মাসউদ ইবন হাকাম আনসারী রহ. আলী ইবন আবূ তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জানাযার ব্যাপারে বলতে শুনেছেন,





«إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ، ثُمَّ قَعَدَ» وَإِنَّمَا حَدَّثَ بِذَلِكَ لِأَنَّ نَافِعَ بْنَ جُبَيْرٍ رَأَى وَاقِدَ بْنَ عَمْرٍو قَامَ، حَتَّى وُضِعَتِ الْجَنَازَةُ»





“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম দিকে দাঁড়াতেন ও পরের দিকে বসে থাকতেন”। নাফে‘ ইবন জুবায়ের কথাটা এ জন্য বর্ণনা করেছেন যে, তিনি ওয়াকিদ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে দেখলেন যে, তিনি লাশ নিচে রাখার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন”।[61]





গ- জানাযার সময় উচ্চস্বরে আওয়াজ করা, চিৎকার করা, এমনকি উচ্চস্বরে যিকির ও কুরআন তিলাওয়াত করাও মাকরূহ। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,





«لَا تُتْبَعُ الْجَنَازَةُ بِصَوْتٍ، وَلَا نَارٍ» زَادَ هَارُونُ: «وَلَا يُمْشَى بَيْنَ يَدَيْهَا»





“জানাযার পেছনে চিৎকার করতে করতে এবং আগুন নিয়ে যাবে না”। বর্ণনাকারী হারুন অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন ‘জানাযার আগে আগেও গমন করবে না”।[62]





কায়েস ইবন আব্বাদ রহ. বলেন,





«كَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكْرَهُونَ رَفْعَ الصَّوْتِ عِنْدَ الْجَنَائِزِ»





“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ জানাযার সময় উচ্চ আওয়াজ করতে অপছন্দ করতেন”।[63]





১৩- মাইয়্যেত দাফনের নিয়মাবলি:





ক- কবর গভীর ও প্রশস্ত হওয়া সুন্নাত। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের যুদ্ধের সাহাবীগণকে বলেছিলেন,





«احْفِرُوا، وَأَوْسِعُوا، وَأَحْسِنُوا، وَادْفِنُوا الِاثْنَيْنِ وَالثَّلَاثَةَ فِي قَبْرٍ وَاحِدٍ، وَقَدِّمُوا أَكْثَرَهُمْ قُرْآنًا»





“বড় এবং প্রশস্ত করে কবর খনন কর এবং সৌজন্যমূলক আচরণ কর আর এক এক কবরে দুই/তিনজন করে দাফন কর। কুরআন সম্পর্কে যে অধিক জ্ঞাত তাকে অগ্রবর্তী করবে”।[64]





এখানে (التّوسعةُ) বলতে দৈর্ঘ ও প্রস্থ প্রশস্তকে বুঝানো হয়েছে। আর দ্বারা (العمقُ) গভীরতাকে বুঝানো হয়েছে। তবে এর কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। কেননা হাদীসের অনির্দিষ্টভাবে এভাবেই এসেছে। ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রহ. বলেছেন, পুরুষ ও নারী উভয়ের কবর বুক বরাবর গভীর করা হবে। হাসান ও ইবন সিরীন রহ. কবর বুক বরাবর গভীর করা পছন্দ করতেন।





হিংস্রজন্তুর আক্রমণ ও দুর্গন্ধ দুর হয় এতটুকু গভীর হলেই যথেষ্ট। কেননা এতে মূল উদ্দেশ্য সাধিত হয়।





খ- বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া শুকনো কাঠ দিয়ে কবর দেওয়া মাকরূহ। এছাড়া যেসব জিনিস আগুনে স্পর্শ করেছে বা পোড়ানো হয়েছে, যেমন ইট (এ বিশ্বাসে যে আগুন মাইয়্যেতকে স্পর্শ করবে না) ইত্যাদি দ্বারা কবর দেওয়াও মাকরূহ। সিন্দুক বা বাক্সে দাফন করাও মাকরূহ; এমনকি মহিলা হলেও। ইবরাহীম নাখঈ‘ থেকে বর্ণিত,





«كَانُوا يَسْتَحِبُّونَ اللَّبِنَ، وَيَكْرَهُونَ الْآجُرَّ، وَيَسْتَحِبُّونَ الْقَصَبَ، وَيَكْرَهُونَ الْخَشَبَ»





“আলেমগণ কাচা ইট ও বাঁশ দিয়ে কবর দেওয়া মুস্তাহাব মনে করতেন, আর পোড়া ইট ও শুকনো কাঠ দিয়ে কবর দেওয়া অপছন্দ করতেন’।[65]





গ- মাইয়্যেতকে কবরে বিছানায় শোয়ানো বা তার মাথার নিচে বালিশ রাখাও মাকরূহ। কেননা এ ধরনের কাজ সালফদের থেকে বর্ণনা পাওয়া যায় না। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,





«أَنَّهُ كَرِهَ أَنْ يُلْقَى تَحْتَ الْمَيِّتِ فِي القَبْرِ شَيْءٌ».





“আলেমগণ কবরে মাইয়্যেতের শরীরের নিচে কিছু বিছানো মাকরূহ মনে করতেন”।[66]





ঘ- মাইয়্যেতকে কবরে নামানো ব্যক্তি এ দো‘আ পড়া সুন্নাত। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,





 





“লাশ কবরে রাখার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন: ‘‘বিসমিল্লাহ ওয়া‘আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ’’। আবূ খালিদ রহ. বলেন, লাশকে তার কবরে রাখার সময় তিনি বলতেন, ‘‘বিসমিল্লাহি ওয়া‘আলা সুন্নাতি রাসূলিল্লাহ’’। হিশাম রহ. তার হাদীসে বলেন, ‘‘বিসমিল্লাহি ওয়া ফী সাবীলিল্লাহি ওয়া‘আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ’’।[67]





ঙ- মাইয়্যেতকে কিবলামুখী করে রাখা ওয়াজিব। ‘উবায়দ ইবন ‘উমায়র রহ. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, যিনি সাহাবী ছিলেন, তিনি বলেন,





 





“একদা এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কবীরা গুনাহ কোনগুলো? তিনি বলেন, “তা নয়টি। তখন তিনি উপরোক্ত হাদীসে বর্ণিত গুনাহগুলোর কথা উল্লেখ করেন এবং অতিরিক্ত এ-ও বলেন, মুসলিম পিতা-মাতাকে কষ্ট দেওয়া এবং আল্লাহর ঘরকে অসম্মান না করা, যা তোমাদের জীবনে ও মরণে কিবলা”।[68]





তাছাড়া ডান কাতে শোয়ানো সুন্নাত, কেননা মাইয়্যেত ঘুমন্ত ব্যক্তির ন্যায়; আর ঘুমন্ত ব্যক্তি ডান কাতে শোয়া সুন্নাত। এমনকি কোনো কোনো ‘আলেমের মতে তাকে ডান কাতে শোয়ানো ওয়াজিব।





চ- বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত একই কবরে একাধিককে একসাথে কবর দেওয়াও মাকরূহ। যেমন, মৃত সংখ্যা অনেক ও কবরদানকারীর সংখ্যা কম হলে একসাথে কবর দেওয়া মাকরূহ হবে না। হিশাম ইবন আমির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা উহুদের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অভিযোগ করে বললাম,








“ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাদের পক্ষে প্রত্যেক মানুষের জন্য কবর খনন করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কবর খনন করো এবং কবরকে গভীর করো আর মৃতদের উত্তম রূপে দাফন করো এবং দু’জন, তিনজনকে এক এক কবরে দাফন করো। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কাকে প্রথমে রাখব? তিনি বললেন, যে কুরআন বেশি জানে তাকে প্রথমে রাখো। বর্ণনাকারী বলেন, এভাবে আমার পিতা একই কবরের তিনজনের অন্যতম ছিলেন”।[69]





ছ- উপস্থিত সকলের মাইয়্যেতের কবরে তিনবার করে মাটি ছিটিয়ে দেওয়া সুন্নাত। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,





«صَلَّى عَلَى جِنَازَةٍ، ثُمَّ أَتَى قَبْرَ الْمَيِّتِ، فَحَثَى عَلَيْهِ مِنْ قِبَلِ رَأْسِهِ ثَلَاثًا»





“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির জানাযার সালাত পড়লেন, অতঃপর মৃতের কবরের নিকট এসে তার মাথার দিকে তিনবার মাটি ছড়িয়ে দিলেন”।[70]





অতঃপর মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া। কেননা মাইয়্যেতকে সমাহিত করা ফরয। আর সবাই মিলে মাটি ছিটিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সমাহিত করণের উক্ত ফরযটিতে অংশীদার হওয়া যায়।





১৪- কবর খননের হুকুম ও কবরের বৈশিষ্ট্য:





ক- কবরে পানি ছিটিয়ে দেওয়া ও মাটি সংরক্ষণের জন্য ছোট ছোট পাথরের টুকরো ঢেলে দেওয়া সুন্নাত। জাফর ইবন মুহাম্মাদ তার পিতার থেকে বর্ণনা করেন,





«أنّ النّبيّ صَلَّى اللهُ عَلَيهِ وَسَلَّمَ رَشَّ عَلَى قَبْرِ ابْنِهِ إِبْرَاهِيمَ مَاءً، ووَضَعَ عَلَيْهِ حَصْبَاءَ »





“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পুত্র ইবরাহীমের কবরে পানির ছিটে দিয়েছেন ও পাথরের টুকরো বিছিয়ে দিয়েছেন”।[71]





খ- কবর এক বিঘত পরিমাণ উঁচু করা সুন্নাত। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন





«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيهِ وَسَلَّمَ رُفِعَ قَبْرُهُ مِنَ الْأَرْضِ نَحْواً مِنْ شِبْرٍ»





“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর এক বিঘত পরিমাণ উঁচু করা হয়েছে”।[72]





তবে এক বিঘতের বেশি উঁচু করা মাকরূহ। আবূ হাইয়াজ আল-আসাদী রহ. বলেন, আমাকে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,





«أَلَا أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِي عَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ «أَنْ لَا تَدَعَ تِمْثَالًا إِلَّا طَمَسْتَهُ وَلَا قَبْرًا مُشْرِفًا إِلَّا سَوَّيْتَهُ»





“আমি কি তোমাকে এমন কাজে পাঠাবো না যে কাজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পাঠিয়েছিলেন? তা হচ্ছে কোনো (জীবের) প্রতিকৃতি বা মূর্তি বা ছবি দেখলে তা চূর্ণ বিচূর্ণ না করে ছাড়বে না। আর কোনো উঁচু কবর দেখলে তা ও সমান না করে ছাড়বে না”।[73]





গ- কবরকে সুসজ্জিত করা, সৌধ বানানো, আগরবাতি বা অন্য কিছু দিয়ে ধোঁয়া দেওয়া নিষেধ। হাদীসে এসেছে, জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,





«نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ، وَأَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ، وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهِ»





“রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর পাকা করতে, কবরের উপর বসতে ও কবরের উপর গৃহ নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন”।[74]





কেননা এসব হলো দুনিয়ার সৌন্দর্য; আর মৃত্যু ব্যক্তির এসবের প্রয়োজন নেই।





ঘ- কবরে চুমো খাওয়া নিষেধ। কেননা এটা করা বিদ‘আত। জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,








“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুতবা (ভাষণ) দিতেন তখন তাঁর চক্ষুদ্বয় রক্তিম বর্ণ ধারণ করতো, কণ্ঠস্বর জোরালো হতো এবং তাঁর রোষ বেড়ে যেতো, এমনকি মনে হতো, তিনি যেন শত্রুবাহিনী সম্পর্কে সতর্ক করছেন আর বলছেন, তোমরা ভোরেই আক্রান্ত হবে, তোমরা সন্ধ্যায়ই আক্রান্ত হবে। তিনি আরও বলতেন, আমি ও কিয়ামত এই দু’টির ন্যায় প্রেরিত হয়েছি, তিনি মধ্যমা ও তর্জনী মিলিয়ে দেখাতেন। তিনি আরও বলতেন, অতঃপর, উত্তম বাণী হলো- আল্লাহর কিতাব এবং উত্তম পথ হলো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পথ। অতীব নিকৃষ্ট বিষয় হলো (দীনের মধ্যে) নতুন উদ্ভাবন (বিদ‘আত)। প্রতিটি বিদ‘আত ভ্রষ্ট। তিনি আরও বলতেন, আমি প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তির জন্য তার নিজের থেকে অধিক উত্তম (কল্যাণকামী)। কোনো ব্যক্তি সম্পদ রেখে গেলে তা তার পরিবার-পরিজনের প্রাপ্য। আর কোনো ব্যক্তি ঋণ অথবা অসহায় সন্তান রেখে গেলে সেগুলোর দায়িত্ব আমার”।[75]





ঙ- কবর ঘিরে তাওয়াফ করা হারাম। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগশয্যায় বলেন,





 





“ইয়াহূদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর লা‘নত হোক। কারণ, তারা নিজেদের নবীগণের কবরকে সাজদাহ’র স্থানে পরিণত করেছে। (বর্ণনাকারী উরওয়া বলেন) এরূপ আশংকা না থাকলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরকে (ঘরের বেষ্টনীতে সংরক্ষিত না রেখে) খোলা রাখা হতো। কিন্তু তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আশংকা করেন বা আশংকা করা হয় যে, পরবর্তীতে একে মসজিদে পরিণত করা হবে। বর্ণনাকারী হিলাল রহ. বলেন, উরওয়া আমাকে (আবূ আমর) কুনিয়াতে ভূষিত করেন আর তখন পর্যন্ত আমি কোনো সন্তানের পিতা হই নি”।[76]





চ- কবরে হেলান দিয়ে বসা নিষেধ। উমারাহ ইবন হাযম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,





«انْزِلْ مِنَ الْقَبْرِ لَا تُؤْذِ صَاحِبَ الْقَبْرِ وَلَا يُؤْذِيكَ»





“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কবরের উপর বসা দেখে বললেন, কবর থেকে নেমে পড়ো, কবরবাসীকে কষ্ট দিওনা; আর কবরবাসীও তোমাকে কষ্ট দিবে না”।[77]





ছ- কবরে রাত যাপন, হাসি তামাশা করা, দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা নিষেধ। কেননা এসব কবরের মত স্থানে সমীচীন নয়।





জ- কবরের উপর লেখা, বসা, ঘর বানানো হারাম। জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন,





«نَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تُجَصَّصَ القُبُورُ، وَأَنْ يُكْتَبَ عَلَيْهَا، وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهَا، وَأَنْ تُوطَأَ»





“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে চুনা লাগাতে এবং তাতে লিখতে, এর উপর ঘর নির্মাণ করতে ও তা পদদলিত করতে নিষেধ করেছেন”।[78]





ঝ- কবরের মাঝে জুতা পায়ে হেঁটে যাওয়াও নিষেধ; তবে কাঁটা বা ক্ষতিকর কিছুর আশঙ্কা থাকলে ভিন্ন কথা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আযাদকৃত গোলাম বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,





 





“জাহেলী যুগে তার নাম ছিল যাহম ইবন মা‘বাদ। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে হিজরত করেন। এ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করেন, “তোমার নাম কী? তখন তিনি বলেন, যাহম। এ কথা শুনে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বরং তুমি হলে বাশীর। তিনি বলেন, যখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে হাঁটছিলাম এবং তিনি মুশরিকদের কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এরা অধিক কল্যাণপ্রাপ্তির আগে চলে গেছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরূপ তিনবার বলেন। অতঃপর তিনি মুসলিমদের কবরের পাশ দিয়ে গমনকালে বলেন, এরা অধিক কল্যাণ হাসিল করেছে। ইত্যবসরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতে পান যে, এক ব্যক্তি দু’পায়ে জুতা দিয়ে কবরস্থানের মাঝে হাঁটছে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বলেন, হে দু’পায়ে জুতা পরিহিত ব্যক্তি! তোমার জন্য আফসোস, তুমি তোমার দু‘পায়ের জুতা খুলে ফেল। সে ব্যক্তি লক্ষ্য করে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিনতে পারলো, তখন সে তার দু’পায়ের জুতা খুলে দুরে নিক্ষেপ করলো”।[79]





তাছাড়া কবরে জুতা খুলে প্রবেশ করলে নম্রতা, শিষ্টাচারীতা ও মুসলিম মৃতব্যক্তিকে সম্মান প্রদর্শন করা হয়।





ঞ- কবরে বাতি জ্বালানো, মসজিদে কবর দেওয়া, কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা হারাম। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,





«لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَائِرَاتِ القُبُورِ، وَالمُتَّخِذِينَ عَلَيْهَا المَسَاجِدَ وَالسُّرُجَ»





“যে সমস্ত মহিলা কবর যিয়ারত করে এবং যে সমস্ত মানুষ কবরের উপর মসজিদ বানায় ও এতে বাতি জ্বালায় তাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নত করেছেন”।[80]





আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগশয্যায় বলেন,





«لَعَنَ اللَّهُ اليَهُودَ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ»





“ইয়াহূদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর লা‘নত হোক। কারণ, তারা নিজেদের নবীগণের কবরকে সাজদাহ’র স্থানে পরিণত করেছে”।[81]





তাছাড়া কবরে বাতি জ্বালানো অর্থ অপব্যয় এবং মূর্তিকে সম্মান দেখানোর মতো কবরকে সম্মান করা হয়।





ট- অন্যের জমিতে দাফন করা হারাম। বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত কবর খনন করে লাশ সরানোও হারাম। জনবসতিপূর্ণ স্থানে কবর দেওয়ার চেয়ে মরুভূমি বা অব্যবহৃত জায়গায় কবর দেওয়া উত্তম। কেননা এতে কবর দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের কবর বাকী‘ গোরস্থানে দিয়েছেন। সাহাবী, তাবেঈ ও পরবর্তীগণ মরুভূমিতে কবর দিয়েছেন।





১৫- গর্ভবতী নারী দাফনের বিধিবিধান:





গর্ভবতী নারী মারা গেলে সন্তান জীবিত থাকার আশঙ্কায় নারীর পেট কাটা হারাম। কেননা এতে ক্ষীণ সম্ভাবনাময় সন্তানের জন্য মাইয়্যেতের অসম্মান করা হয়। কেননা সন্তান জীবিত না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,





«كَسْرُ عَظْمِ الْمَيِّتِ كَكَسْرِهِ حَيًّا»





“মৃত ব্যক্তির হাঁড় চূর্ণ করা, জীবিত ব্যক্তির হাঁড় চূর্ণ করার মতো”।[82]





ইবন কুদামা রহ. বলেছেন, পেটের বাচ্চা জীবিত থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকলে শাফে‘ঈ মাযহাব মতে পেট কেটে বাচ্চা বের করা হবে। কেননা এতে মাইয়্যেতের আংশিক নষ্ট করে জীবিতকে বের করা হয়। তাই এটা জায়েয। যেমন কিছু অংশ জীবিত বের হলে বাকী অংশ যদি কাটা ছাড়া বের না হয় তখন কাটা জায়েয। তাছাড়া এতে তার শরীরের একটি অংশই শুধু কেটে বের করা হয়। অতএব, জীবিতকে রক্ষা করতে তার শরীরের অংশ কেটে বের করা অগ্রাধিকার প্রাপ্ত”।[83]





১৬- কবর যিয়ারত:





কবর যিয়ারত করা সুন্নাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণ কবর যিয়ারত করেছেন। কবর যিয়ারতে অনেক ফায়েদা রয়েছে, যেমন: কবর যিয়ারতের দ্বারা মৃত্যু ও আখেরাতের কথা স্মরণ হয়, কবরের আযাবের ভীতি সঞ্চারিত হয়, মানুষের হৃদয় বিগলিত হয়, চক্ষু অশ্রুসিক্ত হয়, অন্যায় কাজ থেকে তওবা এবং নেকীর প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়, পরকালীন মুক্তির প্রেরণা সৃষ্টি হয়। উপরোক্ত উদ্দেশ্যেই কেবল কবর যিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় প্রথমে কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ ছিল। পুরুষের জন্য কবর যিয়ারত করে শিক্ষাগ্রহণ করা সবার ঐকমত্যে সুন্নাত। অধিকাংশ সত্যনিষ্ঠ আলেম নারীদের উপর কবর যিয়ারত নেই বলে মত প্রকাশ করেছেন। তবে আবূ হানিফা, ইবন মুবারক, শাফে‘ঈ, আহমদ এর এক মত, কারখী ও ইবন হাযমসহ অনেক আলেমের মতে নারী-পুরুষ সবার জন্য এ অনুমতি রয়েছে।[84] কারণ হাদীসে এসেছে,





«قَدْ كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ القُبُورِ، فَقَدْ أُذِنَ لِمُحَمَّدٍ فِي زِيَارَةِ قَبْرِ أُمِّهِ، فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الآخِرَةَ»





“তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করা থেকে নিষেধ করেছিলাম। মুহাম্মাদকে তাঁর মাতার কবর যিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা কবর যিয়ারত করতে পার। কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করায়”।[85]





উপরোক্ত হাদীসে কবর যিয়ারতের নিষেধাজ্ঞা যেমন নারী পুরুষ সকলের জন্যই প্রযোজ্য ছিল, তেমনিভাবে অনুমোদনও সকলের জন্য প্রযোজ্য হবে। অবশ্য সত্যনিষ্ঠ আলেমগণ বলেন, মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারত করার ওপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে, লা‘নত এসেছে, যা থেকে বুঝা যায় যে, নারীদের জন্য কোনো কবর যিয়ারত করা জায়েয নয়। তারা কবর যিয়ারত করবে না।





কারণ, হাদীসে সেসব নারীদের লা‘নত করা হয়েছে, যারা কবর যিয়ারত করে, ও সে সময় সরবে কান্নাকাটি ও বিলাপ ধ্বনি করে এবং বেশি বেশি কবর যিয়ারত করে। হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত যে,





«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَعَنَ زَوَّارَاتِ القُبُورِ»





“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতকারী মহিলাদের লা‘নত করেছেন”।[86]





মোদ্দাকথা, যিয়ারতের সময় এমন কাজ করা যাবে না, যা করলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। যেমন, লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে বা দুনিয়াবী স্বার্থে যিয়ারত করা, সেখানে ফুল দেওয়া, কবরবাসীর নিকটে কিছু কামনা করা, সেখানে বসা, সালাত আদায় করা বা সাজদাহ করা, কবরবাসীকে আহ্বান করা, কবরবাসীর উসীলায় মুক্তি প্রার্থনা করা, সেখানে দান-সাদাকা ও মান্নত করা, গরু-ছাগল-মোরগ ইত্যাদি উৎসর্গ করা বা কুরবানী করা প্রভৃতি হারাম কাজ থেকে দূরে থাকা। এককথায় সকল প্রকারের শির্কী আকীদা ও বিদ‘আতী আমল থেকে মুক্ত মন নিয়ে কেবল মৃতের জন্য দো‘আ এবং আখেরাতকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে কবর যিয়ারত করা যাবে।





কবর যিয়ারতের সময় নিম্নোক্ত দো‘আ পড়বে,





«السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ»





“হে কবরের অধিবাসী মুমিনগণ! আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। নিশ্চয় আমরাও আপনাদের সাথে এসে মিলিত হব ইনশাআল্লাহ”।[87]





অথবা এ দো‘আ পড়বে,





«السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَإِنَّا، إِنْ شَاءَ اللهُ لَلَاحِقُونَ، أَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ»





“হে কবরের অধিবাসী মুমিনগণ! আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। নিশ্চয় আমরাও আপনাদের সাথে এসে মিলিত হব ইনশাআল্লাহ্। আমরা আমাদের জন্য ও আপনাদের জন্য আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।’[88]





অথবা এভাবে বলবে,





«السَّلَامُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَيَرْحَمُ اللهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلَاحِقُونَ »





“মুমিন ও মুসলিম কবরবাসীদের ওপরে শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের অগ্রবর্তী ও পরবর্তীদের ওপর আল্লাহ রহম করুন! আল্লাহর ইচ্ছায় তো আমরা অবশ্যই আপনাদের সাথে মিলিত হতে যাচ্ছি”।[89]





কবরবাসীর জন্য দো‘আ করলে আল্লাহ এর সাওয়াব কবরে পৌঁছে দেন। কেননা মানুষ জন্য মারা যায় তার সব আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমল জারি থাকে। তাই তারা দুনিয়াবাসীর দো‘আর দিকে তাকিয়ে থাকে। হাদীসে এসেছে,





«إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةِ أَشْيَاءَ: مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ "





“মানুষ যখন মারা যায় তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়; কিন্তু তিনটি আমলের সাওয়াব মৃত্যুর পরেও বন্ধ হবে না। সেগুলো হলো, সাদকায়ে জারিয়া, এমন ইলম যা দিয়ে মানুষের উপকার সাধিত হয় এবং এমন নেক সন্তান যে তার তার জন্য দো‘আ করে”।[90]





সমাপ্ত



Recent Posts

সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ...

সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ক্ষেত্রে করণীয়

প্রতিবেশীর অধিকার ...

প্রতিবেশীর অধিকার

ঈদুল ফিতরের আনন্দ ও আ ...

ঈদুল ফিতরের আনন্দ ও আমাদের করণীয়

হজ-উমরার ফাযাইল ও উপক ...

হজ-উমরার ফাযাইল ও উপকারিতা