আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন,
“যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যায়েদ ইবন হারিসা, জাফর ইবন আবূ তালিব ও আব্দুল্লাহ ইবন রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু আনহুমের শাহাদতের সংবাদ পৌঁছল। তখন তিনি বসে পড়লেন। তার চেহারা মুবারকে দুঃখ ও চিন্তার চিহ্ন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি দরজার ফাঁক দিয়ে দেখতে পাচ্ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জাফর রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্ত্রী ও পরিবারের মহিলারা কান্নাকাটি করছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি গিয়ে তাদেরকে নিষেধ কর। সে গেলো এবং পুনরায় ফিরে এসে বললো, তারা তার কথা শুনে নি। তিনি দ্বিতীয়বার তাকে নির্দেশ দিলেন, সে যেন গিয়ে তাদের নিষেধ করেন, সে গিয়ে পুনরায় ফিরে এসে বললো, আল্লাহর কসম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারাই আমাদের ওপর প্রবল রইলো। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, যাও, তুমি তাদের মুখে মাটি ঢুকিয়ে দাও। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি (মনে মনে) বললাম, আল্লাহ তোমার নাক ধুলি ধুসরিত করুন। আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে নির্দেশ তোমাকে দিয়েছেন তা তুমি করতেও পারবে না আর তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও বিরক্ত করতে ছাড় নি”।[19]
উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“যখন এ আয়াত নাযিল হলো, “হে নবী! মুমিন মহিলারা যখন তোমার কাছে এসে বাই‘আত করে এ মর্মে যে, তারা আল্লাহর সঙ্গে কোনো শরীক করবে না এবং সৎকার্যে তোমাকে অমান্য করবে না”... [সূরা আল-মুমতাহিনাহ, আয়াত: ১২] উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, তন্মধ্যে বিলাপও ছিল। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক পরিবার ব্যতীত। কারণ, তারা জাহেলিয়াতের যুগে আমাকে বিলাপে সহানুভূতি দেখিয়েছিল। তাই তাদের প্রতি সহানূভুতি দেখান আমার জন্য জরুরী। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “অমুক পরিবার ব্যতীত”।[20]
খ- গাল চাপড়ানো হারাম। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَطَمَ الخُدُودَ، وَشَقَّ الجُيُوبَ، وَدَعَا بِدَعْوَى الجَاهِلِيَّةِ»
“যারা (মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশে) গাল চাপড়ায়, জামার বুক ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহেলিয়াত যুগের মতো চিৎকার দেয়, তারা আমাদের তরিকাভুক্ত নয়”।[21]
গ- শোকে মাথার চুল কামানো। আবূ বুরদা ইবন আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
“আবূ মূসা কঠিন রোগে আক্রান্ত হলেন। এমন কি তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন। তখন তার মাথা তার পরিবারস্থ কোনো এক মহিলার কোলে ছিল। তিনি তাকে কোনো জওয়াব দিতে পারছিলেন না। চেতনা ফিরে পেলে তিনি বললেন, সে সব লোকের সঙ্গে আমি সম্পর্ক রাখি না যাদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সব নারীর সাথে সম্পর্কচ্ছেদের কথা প্রকাশ করেছেন- যারা চিৎকার করে কাঁদে, যারা মাথা মুড়ায় এবং যারা জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলে”।[22]
ঘ- শোকে মাথার চুল এলোমেলো করে রাখা। উসাইদ ইবন আবূ উসাইদ জনৈক বাই‘আত গ্রহণকারী মহিলা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছ থেকে যেসব উত্তম ব্যাপারে অঙ্গীকার গ্রহণ করেন, তার মাঝে এ ছিল যে, আমরা তাঁর নাফরমানী করব না, আমাদের চেহারা নখ দিয়ে আঁচড়ে ক্ষত-বিক্ষত করব না, ধ্বংসের আহ্বান করব না, জামার বক্ষদেশ ফেঁড়ে ফেলব না এবং মাথার চুল অবিন্যস্ত করব না”।[23]
৫- মাইয়্যেতের উত্তম পরিণতির কিছু আলামত:
মানুষের শেষ পরিণতি ভালো-মন্দ হওয়ার ব্যাপারে শরী‘আত প্রণেতা কিছু নিদর্শন দিয়েছেন। কারো মধ্যে এসব ভালো আলামত পাওয়া গেলে তার উত্তম পরিণতির সুসংবাদ, তবে এসব কিছু মহান আল্লাহ তা‘আলার ওপরই ছেড়ে দিতে হবে।
ক- যার সর্বশেষ বাক্য কালেমায় শাহাদাত হবে তার ব্যাপারে হাদীসে উত্তম পরিণতির শুভসংবাদ এসেছে। মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ كَانَ آخِرُ كَلَامِهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ»
“যার সর্বশেষ বাক্য হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”।[24]
মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি অসুস্থ অবস্থায় বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এমন কিছু কথা শুনেছি যা এতদিন গোপন রেখেছিলাম। তাঁকে বলতে শুনেছি,
«مَنْ كَانَ آخِرُ كَلَامِهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ»
“যার সর্বশেষ বাক্য হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে”।[25]
খ- মৃত্যুর সময়ে ললাট ঘর্মাক্ত হওয়া মুমিনের আলামত। আব্দুল্লাহ ইবন বুরাইদাহ রহ. তার পিতা বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
«مَوْتُ الْمُؤْمِنِ بِعَرَقِ الْجَبِينِ»
“মুমিন ব্যক্তি ঘর্মাক্ত ললাটের সাথে মারা যায়”। (মৃত্যুর সময়ে ললাট ঘর্মাক্ত হওয়া মুমিনের আলামত।)[26]
গ- জুমু‘আর দিনে বা রাতে মারা গেলে। আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَمُوتُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَوْ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ إِلَّا وَقَاهُ اللهُ فِتْنَةَ الْقَبْرِ »
“কোনো মুমিন যদি জুমু‘আর দিন বা রাতে মারা যায়, তবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে কবরের ফিতনা বা পরীক্ষা থেকে রক্ষা করবেন”।[27]
ঘ- যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হওয়া।
“আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, তাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না; বরং তারা তাদের রবের নিকট জীবিত। তাদেরকে রিযিক দেওয়া হয়। আল্লাহ তাদেরকে যে অনুগ্রহ করেছেন, তাতে তারা খুশি। আর তারা উৎফুল্ল হয়, পরবর্তীদের থেকে যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয় নি তাদের বিষয়ে। এজন্য যে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে নি‘আমত ও অনুগ্রহ লাভে খুশি হয়। আর নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের প্রতিদান নষ্ট করেন না”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৯-১৭১]
মিকদাম ইবনে মা‘দীকারিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“শহীদের জন্য আল্লাহর নিকট ছয়টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তার দেহের রক্তের প্রথম ফোঁটাটি বের হতেই তিনি তাকে ক্ষমা করেন এবং জান্নাতে তার ঠিকানা তাকে দেখানো হয়; কবরের আযাব থেকে তাকে রক্ষা করা হয়; (কিয়ামতের) ভয়ংকর ত্রাস থেকে সে নিরাপদ থাকবে; তাকে ঈমানের চাদর পরানো হবে; আয়তলোচনা হুরের সাথে তার বিবাহ দেওয়া হবে এবং তার নিকট আত্মীয়দের মধ্য থেকে সত্তরজনের পক্ষে তাকে শাফা‘আত করার অনুমতি দেওয়া হবে”।[28]
ঙ- আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে গাজী হয়ে ফিরে আসার পরে মারা গেলে, প্লেগ রোগে মারা গেলে, পেটের পীড়ায় ও পানিতে ডুবে, অগ্নিদগ্ধ হয়ে বা গর্ভাবস্থায় মারা যাওয়া শহীদ এবং মুমিনের তা শুভ লক্ষণ।
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
“তোমরা তোমাদের মধ্যকার কাদেরকে শহীদ বলে গণ্য কর? তারা বললেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় সেই তো শহীদ। তিনি বললেন, তাহলে তো আমার উম্মাতের শহীদের সংখ্যা অতি অল্প হবে। তখন তারা বললেন, তা হলে তারা কারা ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ জিহাদের ময়দানে নিহত হয় সে শহীদ। যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় গিয়ে মারা যায় সেও শহীদ। যে ব্যক্তি প্লেগে মারা যায় সে শহীদ, যে ব্যক্তি উদরাময়ে মারা যায় সেও শহীদ। ইবন মিকসাম বলেন, আমি তোমার পিতার ওপর এ হাদীসের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আরও বলেছেন, এবং পানিতে ডুবে মারা যায় এমন ব্যক্তিও শহীদ”।[29]
জাবির ইবন আতীক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহুর রোগের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য আসেন। এ সময় তিনি তাঁকে বেহুশ অবস্থায় পান। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জোরে ডাকেন, কিন্তু তিনি কোনো জওয়াব দেন নি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিঊন’ পাঠ করেন এবং বলেন, হে আবূ রাবী! আমি তোমার ব্যাপারে পরাস্ত হয়েছি। এ কথা শুনে মহিলারা চীৎকার দিয়ে কাঁদা শুরু করে। তখন ইবন আতীক রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের শান্ত হতে বলেন। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তাদের ছেড়ে দাও (অর্থাৎ কাঁদতে দাও)। অবশ্য যখন ওয়াজিব হবে, তখন যেন কোনো ক্রন্দনকারী আর না কাঁদে। তখন তারা জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ওয়াজিব হওয়ার অর্থ কী? তিনি বলেন, মৃত্যু”। (বর্ণনাকারী বলেন) তখন আব্দুল্লাহ ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহুর কন্যা বললেন, আল্লাহর শপথ! আমার তো এরূপ ধারণা ছিল যে, তুমি শহীদ হবে। কেননা, তুমি যুদ্ধের জন্য যাবতীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করছিলে। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে তার নিয়তের সাওয়াব প্রদান করবেন। তোমরা শাহাদত বলতে কী মনে কর? তিনি বলেন, আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়ে যাওয়াকে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হওয়া ছাড়াও আরো সাত ধরনের শহীদ আছে যথা, মহামরীতে যে মারা যায় সেও শহীদ, পানিতে ডুবে যে মারা যায় সেও শহীদ, পক্ষাঘাতে যে মারা যায় সেও শহীদ, পেটের রোগের কারণে (কলেরা, ডায়রিয়া ইত্যাদিতে) যে মারা যায় সেও শহীদ, অগ্নিদগ্ধ হয়ে যে মারা যায় সেও শহীদ, কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে যে মারা যায় সেও শহীদ এবং যে মহিলা গর্ভাবস্থায় মারা যাবে, সেও শহীদ”।[30]
চ- কেউ নিজের অধিকার তথা জীবন, সম্পদ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই ইত্যাদির কারণে মারা গেলে শহীদ। আর শহীদ হয়ে মারা যাওয়া শুভ লক্ষণ। আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
«مَنْ قُتِلَ دُونَ مَالِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ»
“যে ব্যক্তি নিজের ধন-সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয়, সে শহীদ”।[31]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ أُتِيَ عِنْدَ مَالِهِ، فَقُوتِلَ فَقَاتَلَ فَقُتِلَ، فَهُوَ شَهِيدٌ»
“কোনো ব্যক্তি অপর ব্যক্তির ধন-সম্পদ লুট করতে চাইলে সে তাতে বাঁধা দিতে গিয়ে তার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে নিহত হলে শহীদ গণ্য হয়”।[32]
ছ- আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত পাহারা দেওয়ার সময় মারা গেলে শহীদ। সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
«رِبَاطُ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ خَيْرٌ مِنْ صِيَامِ شَهْرٍ وَقِيَامِهِ، وَإِنْ مَاتَ جَرَى عَلَيْهِ عَمَلُهُ الَّذِي كَانَ يَعْمَلُهُ، وَأُجْرِيَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ، وَأَمِنَ الْفَتَّانَ»
“একটি দিবস ও একটি রাতের সীমান্ত প্রহরা একমাস সিয়াম পালন এবং ইবাদতে রাত জাগার চাইতেও উত্তম। আর যদি এ অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে, তাতে তার এ আমলের সাওয়াব জারী থাকবে, তার (শহীদ অবস্থায়) রিযিক অব্যাহত রাখা হবে এবং সে ব্যক্তি ফিতনাসমূহ থেকে নিরাপদে থাকবে”।[33]
ফুদালা ইবন উবায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর সাথে তার আমলের পরিসমাপ্তি হয়। কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে পাহারা দানরত অবস্থায় মারা যায় আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামত পর্যন্ত তার আমল বৃদ্ধি করতে থাকেন এবং তাকে কবরের ফিতনা থেকে নিরাপদে রাখবেন। (তিনি আরো বলেন,) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি যে, প্রকৃত মুজাহিদ হলো সেই, যে স্বীয় নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করে”।[34]
৬- মাইয়্যেতের প্রতি মানুষের প্রশংসা:
কোনো মুসলিম মারা গেলে অন্য মুসলিমের উচিত তার দোষ-ত্রুটি না খুঁজে ভালো গুণাবলীর জন্য প্রশংসা করা। সৎ লোকের প্রশংসা জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম করে দেয়। আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“একবার একটি জানাযা বয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। লোকেরা প্রশংসা করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার ‘ওয়াজাবাত’ বললেন। অর্থাৎ ওয়াজিব হয়ে গেছে। তখন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার ওপর আমার মা-বাবা কুরবান হোক। একটা জানাযা অতিক্রম করলে তার প্রতি ভালো মন্তব্য করা হলে আপনি তিনবার ‘ওয়াজাবাত’ বললেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যার সম্পর্কে ভালো মন্তব্য করেছ তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে। আর যার সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করেছ তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে। তোমরা জমিনের বুকে আল্লাহর সাক্ষী, তোমরা জমিনের বুকে আল্লাহর সাক্ষী, তোমরা জমিনের বুকে আল্লাহর সাক্ষী”।[35]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“কোনো মুসলিম মারা গেলে তার জন্য তার চারজন নিকটতম প্রতিবেশী এ সাক্ষ্য দেয় যে, তারা তার ব্যাপারে ভালো ছাড়া কিছু জানে না, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তারা যা জানে আমি তাদের জানা জ্ঞানকে কবুল করলাম। তোমরা যা জানো সে হিসেবে আমিও তাকে ক্ষমা করে দিলাম, আর তোমরা যা জানো না তাও আমি ক্ষমা করে দিলাম”।[36]
৭- মাইয়্যেতকে গোসল দেওয়ার পদ্ধতি:
ক- মৃতব্যক্তিকে গোসল দেওয়া, কাফন পড়ানো, জানাযার সালাত পড়া ও তাকে কবরস্থ করা ফরযে কিফায়া।
খ- গোসল দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম সেই ব্যক্তি হকদার, যার ব্যাপারে মৃত ব্যক্তি অসীয়ত করে গিয়েছে। তারপর তার পিতা। তারপর অপরাপর নিকটাত্মীয়। আর মহিলার গোসলে প্রথম হকদার হলো তার অসীয়তকৃত মহিলা। তারপর তার মা। তারপর তার মেয়ে। তারপর অন্যান্য নিকটাত্মীয় মহিলাগণ।
গ- স্বামী-স্ত্রী পরষ্পরকে গোসল দিতে পারবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাকী‘ গোরস্থান থেকে ফিরে এসে আমাকে মাথা ব্যথায় যন্ত্রণাকাতর অবস্থায় পেলেন। তখন আমি বললাম, হে আমার মাথা! তিনি বলেন: হে ‘আয়েশা! আমিও মাথা ব্যথায় ভুগছি। হে আমার মাথা! অতঃপর তিনি বলেন: তুমি যদি আমার পূর্বে মারা যেতে, তাহলে তোমার কোনো ক্ষতি হতো না। কেননা আমি তোমাকে গোসল করাতাম, কাফন পরাতাম, তোমার জানাযার সালাত পড়তাম এবং তোমাকে দাফন করতাম”।[37]
ঘ- মৃত ব্যক্তি নারী হোক বা পুরুষ তার বয়স যদি সাত বছরের কম হয়, তবে যে কোনো পুরুষ বা মহিলা তার গোসল দিতে পারবে। আর গোসলের জন্য পুরুষের ক্ষেত্রে পুরুষ আর নারীর ক্ষেত্রে নারী যদি না পাওয়া যায় তবে তার গোসল দিবে না। বরং তাকে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে। এর পদ্ধতি হলো, উপস্থিত লোকদের মধ্যে একজন তার হাত দু’টি পাক মাটিতে মারবে। তারপর তা দ্বারা মৃতের মুখমণ্ডল ও উভয় হাত কব্জী পর্যন্ত মাসেহ করে দিবে। আর কোনো কাফেরকে গোসল দেওয়া এবং দাফন করা মুসলিমের ওপর হারাম।
ঙ- গোসল দেওয়ার সুন্নাত পদ্ধতি হলো, প্রথমে তার লজ্জাস্থান ঢেকে দিবে, তারপর তার সমস্ত কাপড় খুলে নিবে। অতঃপর তার মাথাটা বসার মতো করে উপরের দিকে উঠাবে এবং আস্তে করে পেটে চাপ দিবে, যাতে করে পেটের ময়লা বেরিয়ে যায়।
চ- এরপর বেশি করে পানি ঢেলে তা পরিস্কার করে নিবে। তারপর হাতে কাপড় জড়িয়ে বা হাত মোজা পরে তা দিয়ে উভয় লজ্জাস্থানকে (দৃষ্টি না দিয়ে) ধৌত করবে। তারপর ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে এবং সালাতের ন্যায় অযু করাবে। তবে মুখে ও নাকে পানি প্রবেশ করাবে না। বরং ভিজা কাপড় আঙ্গুলে জড়িয়ে তা দিয়ে তার উভয় ঠোঁটের ভিতর অংশ ও দাঁত পরিস্কার করবে। একইভাবে নাকের ভিতরও পরিস্কার করবে।
ছ- পানিতে কুল পাতা মিশিয়ে তা ফুটিয়ে গোসল দেওয়া মুস্তাহাব। বরই পাতা দিয়ে ফোটানো পানি দ্বারা মৃতের মাথা ও দাঁড়ি ধৌত করতে হবে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“এক ব্যক্তি আরাফাতে ওয়াকুফ অবস্থায় হঠাৎ তার উটনী থেকে পড়ে যায়। এতে তার ঘাড় মটকে গেল অথবা বর্ণনাকারী বলেছেন, তার ঘাড় মটকিয়ে দিল। (এতে সে মারা যায়)। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে তাকে কাফন দাও। তাকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মাথা ঢাকবে না। কেননা কিয়ামতের দিন সে তালবিয়া পাঠ করতে করতে উত্থিত হবে”।[38]
জ- প্রথমে শরীরের ডান পাশের সামনের দিক ধৌত করবে। তারপর পিছন দিক তারপর বাম দিক ধৌত করবে। উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কন্যার গোসলের ব্যাপারে বলেছেন,
«ابْدَأْنَ بِمَيَامِنِهَا، وَمَوَاضِعِ الوُضُوءِ مِنْهَا»
“তোমরা তার ডান দিক থেকে এবং অযুর স্থানসমূহ থেকে শুরু করবে”।[39]
এভাবে তিনবার গোসল দিবে। প্রতিবার হালকাভাবে পেটে হাত বুলাবে এবং ময়লা কিছু বের হলে পরিস্কার করে নিবে।
ঝ- গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করতে পারে এবং প্রয়োজন মোতাবেক তিনবারের বেশি সাত বা ততোধিক গোসল দিতে পারে। শেষবার কর্পুর মিশ্রিত করে গোসল দেওয়া সুন্নাত। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কন্যা যায়নাব রাদিয়াল্লাহু আনহার শেষ গোসলে কর্পুর মিশ্রিত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যাগণের মধ্যে একজন মারা গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে গেলেন এবং বললেন, তোমরা তাকে তিনবার পাঁচবার অথবা যদি তোমরা প্রয়োজনীয় মনে কর, তবে তার চাইতে অধিকবার বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও। শেষবারে কর্পুর (অথবা তিনি বলেন) ‘কিছু কর্পুর’ ব্যবহার করবে। গোসল শেষ করে আমাকে জানাবে। উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমরা শেষ করে তাঁকে জানালাম। তখন তিনি তাঁর চাদর আমাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, এটি তার ভিতরের কাপড় হিসেবে পরাও। আইয়ূব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সূত্রে উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন এবং তাতে তিনি (উম্মে আতিয়্যাহ) বলেছেন, তিনি বলেছেন, তাকে তিন, পাঁচ, সাত বা প্রয়োজনবোধে তার চাইতে অধিকবার গোসল দাও। হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমরা তার মাথার চুলকে তিনটি বেণী বানিয়ে দিই”।[40]
ঞ- মৃতের মোচ বা নখ যদি বেশি বড় থাকে তবে তা কেটে দেওয়া মুস্তাহাব। তবে বগল বা নাভীর নিচের চুল কাটা যাবে না। মৃতের চুল আঁচড়ানোর দরকার নেই। তবে নারীর ক্ষেত্রে তার চুলগুলোতে তিনটি বেণী বেঁধে তা পিছনে ছড়িয়ে দিবে।
উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَنَّهُنَّ جَعَلْنَ رَأْسَ بِنْتِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثَلاَثَةَ قُرُونٍ نَقَضْنَهُ، ثُمَّ غَسَلْنَهُ، ثُمَّ جَعَلْنَهُ ثَلاَثَةَ قُرُونٍ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যার মাথা তিনটি বেণী করে দেন। তারা তা খুলেছেন, এরপর তা ধুয়ে তিনটি বেণী করে দেন”।[41]
ট- সাত বার গোসল দেওয়ার পরও যদি পেট থেকে ময়লা (পেশাব বা পায়খানা) বের হতেই থাকে তবে উক্ত স্থান ধুয়ে সেখানে তুলা বা কাপড় জড়িয়ে দিবে। তারপর তাকে অযু করাবে। কাফন পরানোর পরও যদি ময়লা বের হয়, তবে আর গোসল না দিয়ে সেভাবেই রেখে দিবে। কেননা তা অসুবিধার ব্যাপার।
ঠ- হজ বা ওমরায় গিয়ে ইহরাম অবস্থায় যদি কেউ মারা যায়, তবে তাকে কুল পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দিবে। কিন্তু কোনো সুগন্ধি ব্যবহার করবে না এবং পুরুষ হলে কাফনের সময় তার মাথা ঢাকবে না। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“এক ব্যক্তি ‘আরাফাতে ওয়াকূফ অবস্থায় হঠাৎ তার বাহন থেকে পড়ে যায়। এতে তার ঘাড় মটকে গেল অথবা বর্ণনাকারী বলেছেন, তার ঘাড় মটকিয়ে দিল। (এতে সে মারা যায়)। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল করাও এবং দু’কাপড়ে তাকে কাফন দাও। তাকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মাথা ঢাকবে না। কেননা কিয়ামতের দিন সে তালবিয়া পাঠ করতে করতে উত্থিত হবে”।[42]
ড- আল্লাহর রাস্তায় শহীদ ব্যক্তিকে গোসল দিবে না এবং তাকে তার সাথে সংশ্লিষ্ট কাপড়েই দাফন করবে। কেননা হাদীসে এসেছে,
»أن النبي صلى الله عليه وسلم " أمر بدفن شهداء أحد في دمائهم ولم يُغسلهم»
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের শহীদদেরকে তাদের রক্তমাখা কাপড় নিয়েই দাফন করতে নির্দেশনা দেন, তিনি তাদেরকে গোসল দেন নি।”[43]
ঢ- গর্ভস্থ সন্তান যদি চার মাস অতিক্রম হওয়ার পর পড়ে যায়, তবে তার গোসল ও জানাযার সালাত আদায় করবে। আর তার বয়স যদি চার মাসের কম হয়, তবে তাতে প্রাণ না থাকার কারণে সাধারণ একটি গোশতের টুকরা গণ্য হবে। যা কোনো গোসল বা জানাযা ছাড়াই যে কোনো স্থানে মাটিতে গেড়ে দেওয়া হবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“তোমাদের প্রত্যেকের শুক্র তার মাতৃ উদরে চল্লিশ দিন জমাট থাকে। এরপর অনুরূপ চল্লিশ দিনে রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়। এরপর অনুরূপ চল্লিশ দিনে তা একটি গোশত পিণ্ডের রূপ নেয়। এরপর আল্লাহ তা‘আলার তরফ থেকে একজন ফিরিশতা পাঠানো হয়। সে তাতে রূহ ফুকে দেয়। আর তাকে চারটি বিষয় লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আর তা হলো, তার রিযিক, তার মৃত্যুক্ষণ, তার কর্ম এবং তার বদকার ও নেককার হওয়া। সেই সত্তার কসম যিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ জান্নাতবাসীদের মতো আমল করতে থাকে, অবশেষ তার মধ্যে ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকে। এরপর তাকদীরের লিখন তার ওপর জয়ী হয়ে যায়। ফলে সে জাহান্নামীদের কাজ-কর্ম শুরু করে। এরপর সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়। আর তোমাদের মধ্যে কোনো কোনো ব্যক্তি জাহান্নামের কাজ-কর্ম করতে থাকে। অবশেষে তার ও জাহান্নামের মাঝখানে একহাত মাত্র ব্যবধান থাকে। এরপর ভাগ্যলিপি তার ওপর জয়ী হয়। ফলে সে জান্নাতীদের ন্যায় আমল করে। অবশেষে জান্নাতে দাখিল হয়”।[44]
সাঈদ ইবন মুসাইয়্যিব রহ. মৃত গর্ভপাত সম্পর্কে বলেন,
«إِذَا نُفِخَ فِيهِ الرُّوحُ صُلِّيَ عَلَيْهِ، وَذَلِكَ لِأَرْبَعَةِ أَشْهُرٍ»
“চার মাস হলে তাতে রূহ ফুক দেওয়া হয় তখন জানাযা পড়া হবে”। [45]
ন- মৃত ব্যক্তি আগুনে পুড়ে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খণ্ড-বিখণ্ড হওয়ার কারণে বা পানি না পাওয়ার কারণে যদি তাকে গোসল দেওয়া সম্ভব না হয়, তবে পূর্ব নিয়মে তাকে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে।
৮- কাফন পড়ানো:
ক- মৃত ব্যক্তিকে কাফন পরানো ওয়াজিব। আর তা হবে তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তি থেকে। যাবতীয় ঋণ, অসীয়ত এবং মীরাস বন্টনের আগে কাফনের খরচ তার সম্পত্তি থেকে গ্রহণ করতে হবে। মৃতের সম্পত্তি থেকে যদি কাফনের খরচ না হয় তবে তার পিতা বা ছেলে বা দাদার ওপর দায়িত্ব বর্তাবে। যদি এমন কাউকে না পাওয়া যায় তবে বায়তুল মাল থেকে প্রদান করবে। তাও যদি না পাওয়া যায় তবে যে কোনো মুসলিম প্রদান করতে পারে।
খাব্বাব ইবন আরাত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হিজরত করলাম। অতএব, আল্লাহর কাছে আমদের পুরস্কার পাওয়াটা অনিবার্য হয়েছে। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ এভাবে দুনিয়া থেকে চলে গেলেন যে তার পুরস্কারের কোনো কিছুই তিনি ভোগ করেন নি। মুস‘আব ইবন ‘উমাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের অন্যতম। তিনি উহুদ যুদ্ধের সময়ে শাহাদাত বরণ করেন। তাকে কাফন দেওয়ার মতো একটি চাদর ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় নি। আমরা যখন তা দিয়ে তার মাথা ঢাকলাম তার পা বেরিয়ে আসল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা চাদরটা এভাবে পরাও যাতে তা মাথা জড়িয়ে থাকে আর তার পা ‘ইযখির’ (একপ্রকার ঘাস) নামক ঘাস দিয়ে ঢেকে দাও। আর আমাদের মধ্যে কারো কারো ফল পেকে গেছে, যা তারা আহরণ করেছে”।[46]
খ- পুরুষকে তিনটি লেফাফা বা কাপড়ে কাফন পরানো মুস্তাহাব। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সুতী সাদা তিনটি কাপড়েই কাফন দেওয়া হয়েছিল। কাফনের কাপড়ে সুগন্ধি মিশ্রিত করা মুস্তাহাব। প্রথমে সাতটি ফিতা বিছিয়ে দিবে। তারপর (ফিতাগুলোর উপর) কাপড় তিনটি একটির উপর অন্যটি বিছাবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (সিরিয়ার) সাহুল নগরীর সাদা তিন কাপড় দ্বারা কাফন দেওয়া হয়। তন্মধ্যে জামা ও পাগড়ি ছিল না। (তাঁর নিকট সংরক্ষিত) ‘জোড়া কাপড়’ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল যে, তা কাফনের উদ্দেশ্যে খরিদ করা হয়েছিল কিনা? তাই তা রেখে দেওয়া হল এবং সাহুল নগরীর সাদা তিন কাপরেই কাফন দেওয়া হলো। এদিকে আব্দুল্লাহ ইবন আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু জোড়াটা নিয়ে বললেন, আমি অবশ্যই তা সংরক্ষণ করব এবং আমি নিজেকে এর দ্বারা কাফন দিব। তিনি পুনরায় বললেন আল্লাহ তা‘আলা যদি এটা তাঁর নবীর জন্য পছন্দ করতেন, তবে তিনি অবশ্যই তা দিয়ে কাফনের ব্যবস্থা করতেন। অতঃপর তিনি তা বিক্রি করেন ও তার মূল্য তিনি সদকা করে দিলেন।[47]
গ- মহিলাকে পাঁচটি কাপড়ে কাফন দিবে। লুঙ্গি যা নিচের দিকে থাকবে, খেমার বা ওড়না যা দিয়ে মাথা ঢাঁকবে, কামীছ (জামা) এবং দু’টি বড় লেফাফা বা কাপড়। (অবশ্য তিন কাপড়েও তাকে কাফন দেওয়া জায়েয)।
৯- জানাযা সালাত আদায় পদ্ধতি:
ঘ- জানাযা সালাত আদায় করা ফরযে কেফায়া। সুন্নাত হলো, ইমাম পুরুষের মাথা বরাবর দাঁড়াবে। আর মহিলার মধ্যবর্তী স্থান বরাবর দাঁড়াবে। সামুরা ইবন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে জানাযার সালাত পড়লাম। তিনি উম্মু কা‘আবের জানাযা পড়ছিলেন। তিনি নিফাস অবস্থায় মারা গিয়েছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযা পড়ার সময়ে তার লাশের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়েছিলেন”।[48]
ঙ- চার তাকবীরের সাথে জানাযা আদায় করতে হয়। আবূ হুরায়ারা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
«أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَعَى لِلنَّاسِ النَّجَاشِيَ فِي الْيَوْمِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ، فَخَرَجَ بِهِمْ إِلَى الْمُصَلَّى، وَكَبَّرَ أَرْبَعَ تَكْبِيرَاتٍ»
“যেদিন নাজ্জাশীর বাদশাহ মারা গেলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের তার মৃত্যু সংবাদ শুনালেন। অতঃপর তাদেরকে নিয়ে সালাতের স্থানে গিয়ে চারটি তাকবীর উচ্চারণ করলেন (জানাযা পড়লেন)”।[49]