“আমি তোমাকে এ কথার ওপর বাইয়াত করাবো, তুমি আল্লাহর সাথে শরিক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তুমি তোমার সন্তানকে হত্যা করবে না, তুমি কাউকে সরাসরি অপবাদ দেবে না, ‘নিয়া-হা’ তথা মৃত ব্যক্তির জন্য কান্না-কাটি করবে না এবং জাহিলিয়্যাতের যুগের নারীদের মতো সৌন্দর্য প্রদর্শন করবে না।” এ হাদীসে সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতাকে কবীরা গুনাহের সাথে একত্র করা হয়েছে।
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা অভিশাপ ডেকে আনে এবং আল্লাহর রহমত থেকে মানুষকে দূরে সরায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«سيكون في آخر أمتي نساءٌ كاسيات عاريات على رؤوسهن كأسْنِمَةِ البُخْت العنوهن فإنهن ملعونات»
“আমার উম্মতের শেষ যুগে এমন কতক মহিলার আবির্ভাব হবে, তারা কাপড় পরিধান করবে অথচ নগ্ন, তাদের মাথার উপরিভাগ উটের সিনার মতো হবে। তোমরা তাদের অভিশাপ কর, কারণ, তারা অভিশপ্ত”। [হাদীসটি বিশুদ্ধ]
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা জাহান্নামীদের চরিত্র:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“দুই শ্রেণির লোক জাহান্নামী হবে, যাদের আমি আমার যুগে দেখতে পাব না। এক শ্রেণির লোক, তারা এমন এক সম্প্রদায়, তাদের সাথে থাকবে গরুর লেজের মতো এক ধরণের লাঠি যদ্বারা তারা মানুষকে পিটাবে। অপর শ্রেণি হলো, কাপড় পরিহিতা নারী, অথচ নগ্ন, তারা পুরুষদেরকে আকৃষ্টকারী ও নিজেরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট। তাদের মাথা হবে উটের চোটের মতো বাঁকা। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের সু-ঘ্রাণও তারা পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে”। (সহীহ মুসলিম)
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা কিয়ামতের দিন ঘাঢ় অন্ধকার:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَثَلُ الرافلةِ في الزينة في غير ِ أهلِها كمثل ظُلْمَةٍ يومَ القيامة لا نورَ لها»
“অপর পুরুষকে সৌন্দর্য প্রদর্শন করা নারীর উদাহরণ হলো কিয়ামতের দিন গভীর অন্ধকারের মো। যার কোনো নুর থাকবে না।” [হাদীসটি দুর্বল]
অর্থাৎ যে মহিলা হাঁটার সময় সৌন্দর্য প্রকাশ করে হেলে দুলে হাঁটে সে কিয়ামতের দিন, ঘোর কালো অন্ধ হয়ে উপস্থিত হবে। তার দেহ হবে আগুনের কালো কয়লার মত। হাদীসটি যদিও দুর্বল, কিন্তু হাদীসের অর্থ শুদ্ধ। কারণ, আল্লাহর নাফরমানিতে মজা উপভোগ করা আযাব, আরাম পাওয়া কষ্ট। আর আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আল্লাহর ইবাদতে কষ্ট পাওয়া, মজা ও শান্তি...ইত্যাদি। কারণ, হাদীসে বর্ণিত আছে, একজন সাওম পালনকারীর মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর দরবারে মিশকের চেয়ে বেশি সুঘ্রাণ হবে। অনুরূপভাবে শহীদের রক্ত সম্পর্কে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর নিকট মিশকের চেয়ে অধিক সুগন্ধ।
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা মুনাফেকি:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“তোমাদের মধ্যে উত্তম নারী হলো, যারা অধিক মহব্বতকারী, অধিক সন্তান প্রসবকারী, ..যখন তারা আল্লাহকে ভয় করে। আর তোমাদের মধ্যে খারাপ মহিলা হলো, যারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী অহংকারী। মনে রাখবে এ ধরণের মহিলারা মুনাফিক তারা কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে না। একমাত্র লাল বর্ণের ঠোঁট বিশিষ্ট কাকের মতো। [হাদীসটি বিশুদ্ধ]
বধির কাক হলো, যার পা ও ঠোঁট লাল। এ ধরণের কাক একেবারেই দূর্লভ বা পাওয়া যায় না বললেই চলে। এখানে এ কথা বলার উদ্দেশ্য হলো, নারীদের জান্নাতে প্রবেশের সংখ্যা খুবই কম হবে তার প্রতি ইঙ্গিত করা।
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা আল্লাহর মাঝে ও বান্দার মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করে ও নারীদের জন্য অপমান:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَيُّما امرأةٍ وضعت ثيابها في غير بيت زوجها فقد هتكت سِتْرَ ما بينها وبين الله عز وجل»
“কোনো নারী যদি তার স্বামীর ঘরের বাহিরে স্বীয় কাপড় খুলে ফেলে, তাহলে সে তারা মাঝে আল্লাহর মাঝে যে বন্ধন ছিল তা ছিঁড়ে ফেলল। [হাদীসটি বিশুদ্ধ]
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা অশ্লীলতা:
অবশ্যই নারীরা হলো, সতর। আর সতর খোলা অশ্লীলতা ও নোংরামি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَإِذَا فَعَلُواْ فَٰحِشَةٗ قَالُواْ وَجَدۡنَا عَلَيۡهَآ ءَابَآءَنَا وَٱللَّهُ أَمَرَنَا بِهَاۗ قُلۡ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَأۡمُرُ بِٱلۡفَحۡشَآءِۖ أَتَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٢٨﴾ [الاعراف: ٢٨]
“আর যখন তারা কোনো অশ্লীল কাজ করে তখন বলে, ‘আমরা এতে আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি এবং আল্লাহ আমাদেরকে এর নির্দেশ দিয়েছেন’। বল, ‘নিশ্চয় আল্লাহ অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলছ, যা তোমরা জান না”? [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ২৮]
শয়তান মানুষকে এ ধরণের অশ্লীল বিষয়ে নির্দেশ দেয় এবং তাদের অন্যায়ের প্রতি ধাবিত করে। পর্দাহীন নারীরা মূলতঃ আল্লাহ আদেশ নয়, শয়তানের আদেশেরই আনুগত্য করে। শয়তান মানুষকে অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয় এবং মিথ্যা আশ্বাস দেয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿ٱلشَّيۡطَٰنُ يَعِدُكُمُ ٱلۡفَقۡرَ وَيَأۡمُرُكُم بِٱلۡفَحۡشَآءِۖ﴾ [البقرة: ٢٦٨]
“শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্রের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ করে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তার পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৬৮]
যে নারীরা সৌন্দর্য প্রদর্শন করে ঘুরে বেড়ায়, তারা অত্যন্ত খারাপ ও ক্ষতিকর নারী। তারা ইসলামী সমাজে অশ্লীল ও অন্যায় ছড়ায় এবং বেহায়াপনার দ্বার উন্মুক্ত করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ ٱلۡفَٰحِشَةُ فِي ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ١٩﴾ [النور: ١٩]
“নিশ্চয় যারা এটা পছন্দ করে যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ১৯]
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা শয়তানের আদর্শ:
অভিশপ্ত ইবলিসের সাথে সংঘটিত আদম আলাইহিস সালাম ও হাওয়া আলাইহাস সালামের ঘটনা দ্বারা আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি আল্লাহর শত্রু ইবলিস বনী আদমের ইজ্জত ও সম্ভ্রম হনন করা, তাদের সম্মান হানি করা, তাদের হেয়প্রতিপন্ন ও দুর্নাম ছড়ানোর প্রতি কতটুকু লালায়িত। এমনকি ইবলিসের লক্ষ্যই হলো, বনী আদমকে অপমান, অপদস্থ ও অসম্মান করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ لَا يَفۡتِنَنَّكُمُ ٱلشَّيۡطَٰنُ كَمَآ أَخۡرَجَ أَبَوَيۡكُم مِّنَ ٱلۡجَنَّةِ يَنزِعُ عَنۡهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوۡءَٰتِهِمَآۚ﴾ [الاعراف: ٢٧]
“হে বনী আদম, শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে, যেভাবে সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল; সে তাদের পোশাক টেনে নিচ্ছিল, যাতে সে তাদেরকে তাদের লজ্জা-স্থান দেখাতে পারে”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ২৭]
মোটকথা, ইবলিস বেহায়াপনা ও উলঙ্গপনার দাওয়াতের গুরু। শয়তানই নারী স্বাধীনতার শ্লোগান তুলে নারীদেরকে ঘর থেকে বের করার দায়িত্বশীল। যে সব লোক আল্লাহর নাফরমানি করে, শয়তান এ ধরণের লোকদের ইমাম। বিশেষ করে ঐ সব মহিলা যারা তাদের নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে মুসলিমদের কষ্ট দেয় এবং যুবকদের বিপদে ফেলে, শয়তান তাদের বড় ইমাম। শয়তান বনী আদমের চির শত্রু। পৃথিবীর শুরু থেকেই শয়তান মানুষকে বিপদে ফেলে আসছে। আর নারীরা হলো, শয়তানের জাল। শয়তান নারীদের মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজকে কলুষিত করে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ما تركتُ بعدي فتنةً هي أَضَرُّ على الرجال من النساء»
আমি আমার পর পুরুষদের জন্য নারীদের ফিতনার চেয়ে বড় ক্ষতিকর কোনো ফেতনা রেখে যাইনি। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
সৌন্দর্য প্রদর্শন করা ইয়াহুদীদের সুন্নত:
নারীর ফিতনা দ্বারা কোনো জাতিকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে ইয়াহুদীদের ষড়যন্ত্র ও কৌশল সফলতার দাবিদার। অতীতে উলঙ্গ নারীরাই হলো, তাদের বিভিন্ন সংস্থা ও কার্যক্রমের বড় হাতিয়ার। ইয়াহুদীরা এ বিষয়ে প্রাচীন ও অভিজ্ঞ। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«فاتقوا الدنيا واتقوا النساء فإن أول فتنةِ بني إسرائيل كانت في النساء»
“তোমরা দুনিয়াকে ভয় কর এবং নারীকে ভয় কর, কারণ, বনী ইসরাঈলের প্রথম ফিতনা ছিল নারীর ফিতনা”। (সহীহ মুসলিম)
তাদের কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ছিহয়ুন গোত্রের মেয়েদের সৌন্দর্য প্রদর্শনের কারণে শাস্তি দেয়। সিফরে আশিয়া কিতাবের তৃতীয় সংস্করণে উল্লেখ করা হয়েছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ছিহয়ুন গোত্রের মেয়েদের সৌন্দর্য প্রদর্শনের কারণে শাস্তি দেন। অর্থাৎ তাদের থেকে তাদের বিভিন্ন সৌন্দর্যকে ছিনিয়ে নেয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করতে এবং তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে নিষেধ করেন। বিশেষ করে নারীর ক্ষেত্রে তিনি উম্মতে মুসলিমাহকে অধিক সতর্ক করেন। কিন্তু তারপর দুঃখের সাথে বলতে হয়, বর্তমানে অধিকাংশ মুসলিম নারী ও পুরুষ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সতর্ক করণের বিরোধিতা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে যে ভবিষ্যৎ বাণী দিয়ে গেছেন, তার প্রতিফলনই আমরা লক্ষ্য করছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لتتبعن سَنَنَ مَن كان قبلكم شبرًا بشبر وذراعًا بذراع حتى لو دخلوا جُحْرَ ضَبٍّ لتبعتموهم» قيل: اليهود والنصارى؟ قال: «فمن؟»
“তোমরা তোমাদের পূর্বে যারা অতিবাহিত হয়েছে, তাদের হুবহু অনুকরণ করবে; কড়া ইঞ্চি পর্যন্ত অনুকরণ করবে। এমনকি যদি তারা গুই সাপের গর্তে প্রবেশ করে, তোমরাও তাদের অনুকরণ করে গুই সাপের গর্তে প্রবেশ করবে। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করল, তারা কি ইয়াহুদী ও খৃস্টান? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, তারা ছাড়া আর কারা”? (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
যারা ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের অনুকরণ করে এবং আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের নাফরমানি করে, তাদের সাথে ঐ সব অভিশপ্ত ইয়াহুদীদের সাথে কোনো পার্থক্য নেই; যারা এ বলে আল্লাহর আদেশের বিরোধিতা করে, سمعنا وعصينا ‘আমরা শুনলাম ও নাফরমানি করলাম’। এরা ঐ সব নারীদের থেকে কত দূরে যারা আল্লাহর নির্দেশ শোনার পর বলে, سمعنا وعصينا ‘আমরা শুনলাম এবং অনুকরণ করলাম’।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে কারীমে বলেন,
“আর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তার জন্য হিদায়াত প্রকাশ পাওয়ার পর এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফেরাব যেদিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসেবে তা খুবই মন্দ”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৫]
হিদায়াতের পথ স্পষ্ট হওয়ার পরও যদি কোনো লোক গোমরাহির পথ অবলম্বন করে এবং মুমিনদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কঠিন আযাব রেখেছেন। আখিরাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের কঠিন শাস্তি দেবেন। আর আখিরাতের শাস্তি কত কঠিন হবে তা বর্ণনা দিয়ে বোঝানো যাবে না।
পর্দাহীনতা ও সৌন্দর্য প্রদর্শন নিকৃষ্ট জাহেলিয়্যাত[4]:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে করীমে বলেন,
﴿وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ﴾ [الاحزاب: ٣٣]
“তোমরা তোমাদের ঘরে অবস্থান কর এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মতো সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহেলিয়াতের দাবিকে অপবিত্র ও দুর্গন্ধ বলে অবহিত করেন এবং আমাদেরকে তা প্রত্যাখ্যান করার নির্দেশ দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে তাওরাতে বলা হয়, তিনি তাদের জন্য পবিত্র বস্তুকে হালাল করেন এবং অপবিত্র বস্তুকে হারাম করেন।
﴿وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ﴾ [الاعراف: ١٥٧]
“এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৭]
জাহেলিয়্যাতের কু-সংস্কার ও নারীদের সৌন্দর্য প্রদর্শন উভয়টি একটি অপরটির পরিপূরক। এ দুটিই অপবিত্র ও দুর্গন্ধময়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য এ সবকে হারাম করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«كل شيء من أمر الجاهلية موضوع تحت قَدَمَيَّ»
“জাহেলিয়্যাতের যুগের প্রতিটি বস্তু আমার পায়ের নিচে নিক্ষেপ করা হলো”।
এ বিষয়ে একটি কথা মনে রাখতে হবে। জাহিলিয়্যাতের যুগের সুদ, জাহেলিয়্যাতের যুগের দাবি, জাহিলিয়্যাতের যুগের বিধান ও জাহেলিয়্যাতের যুগের উলঙ্গ হওয়া ইত্যাদি সব কিছুর বিধান এক ও অভিন্ন এবং এগুলো সবই সমান।
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা অধঃপতন ও পশ্চাদপরণ:
উলঙ্গপনা ও বেহায়াপনা চতুষ্পদ জন্তুর স্বভাব। যখন মানুষের মধ্যে এ ধরণের স্বভাব পাওয়া যাবে, তখন মানুষের পতন অবশ্যম্ভাবী ও অবধারিত। মানুষকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে সম্মান ও মান-মর্যাদা দিয়েছে, সে তা থেকে নিচে নেমে আসবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে সে সব নি‘আমতরাজি দান করেছে, তা থেকে সে নীচে নেমে আসবে। যারা উলঙ্গপনা, ঘরের বাহিরে যাওয়া ও নারী পুরুষের অবাধ মেলা-মেশাকে সৌন্দর্য বা নারীর অধিকার বলে দাবি করে, বাস্তবে তারা মানবতার শত্রু। তারা মানুষকে মনুষ্যত্ব থেকে বের করে পশুত্বের প্রতি ধাবিত করছে। তারা যদিও নিজেদের সভ্য বলে দাবি করছে, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তারা অসভ্য ও অমানুষ। মানবতার উন্নতির সম্পর্কই হলো, আত্ম-সম্ভ্রম হেফাজত করা ও তার দৈহিক সৌন্দর্যকে রক্ষা করার সাথে। মানুষ যখন তার আবরণ ফেলে দিয়ে নিজেকে উলঙ্গ করে ফেলে তখন তার অধঃপতন নিশ্চিত হয়। মানবতার উন্নতি ও অগ্রগতি ব্যাহত হয়। নারীরা যখন পর্দার আড়ালে থাকে তখন তাদের মধ্যে আত্ম-সম্মান ও আত্ম-মর্যাদা বোধ অবশিষ্ট থাকে। ফলে তার মধ্যে একটি রূহানী বা আধ্যাত্মিক শক্তি থাকে যা তাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আর নারীরা যখন দড়ি ছেড়া হয়ে যায়, আবরণ মুক্ত হয়, তখন তার মধ্যে তার প্রবৃত্তি শক্তিশালী হয়, যা তাকে সৌন্দর্য প্রদর্শন ও অবাধ মেলা-মেশার প্রতি আকৃষ্ট করে। সুতরাং একজন মানুষের সামনে দুটি পথ খোলা থাকে। যখন সে দ্বিতীয়টির ওপর সন্তুষ্ট থাকে তখন তাকে অবশ্যই প্রথমটিকে কুরবান দিতে হবে। আর তখন তার অন্তরে আত্ম-মর্যাদাবোধ বলতে কোনো কিছু থাকবে না। তখন সে অপরিচিত নারীদের সাথে মেলা-মেশাসহ যাবতীয় সব ধরণের অপকর্মই করতে থাকবে। আর এ ধরণের মেলা-মেশার ফলে মানব প্রকৃতি ধ্বংসের মুখোমুখি হবে। লজ্জাহীনতা বৃদ্ধি পাবে, আত্ম-মর্যাদা ও সম্মানবোধ আর বাকী থাকবে না। মানুষের মধ্যে অনুভূতি থাকবে না এবং তার জ্ঞান-বুদ্ধির অপমৃত্যু ঘটবে।
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতার ক্ষতি ব্যাপক:
যখন কোনো ব্যক্তি কুরআন ও হাদীসের প্রমাণাদি ও ইসলামের ইতিহাসের প্রতি লক্ষ্য করবে, তখন সে দীন ও দুনিয়ার ওপর পর্দাহীনতা ও সৌন্দর্য প্রদর্শনের ক্ষতি ও প্রভাব কি তা দেখতে পাবে। বিশেষ করে বর্তমানে নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশার কু-প্রভাব যখন তার সাথে যোগ করা হয়, তখন তার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে আমরা আরও বেশি উপলব্ধি করতে পারব। সমাজে পর্দাহীনতার কারণে অনেক কিছুই আমরা দেখতে পাই।
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতার ভয়াবহ পরিণতিসমূহ:
নারীরা তাদের প্রতি পুরুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার লক্ষ্যে নিষিদ্ধ সাজ-সজ্জা গ্রহণের ক্ষেত্রে পরস্পর প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে। তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে। এর ফলে তারা যেমনিভাবে তাদের চরিত্রকে কলঙ্কিত করে, অনুরূপভাবে তারা তাদের অনেক ধন-সম্পদ এ পথে ব্যয় করে। যার পরিণতিতে নারীরা বর্তমান সমাজে নিকৃষ্ট ও পঁচা-গন্ধ পণ্যে পরিণত হয়েছে।
দুই. সৌন্দর্য প্রদর্শনের ফলে পুরুষদের চরিত্র ধ্বংস হয়। বিশেষ করে যুব সমাজ ও প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেরা সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী নারীদের কারণে ধ্বংসের ধার প্রান্তে উপনীত হয় এবং তাদের বিভিন্ন ধরণের অশ্লীল কাজ ও অপরাধের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়।
দুই. পারিবারিক বন্ধন ধ্বংস হয় এবং পরিবারের সদস্যদের মাঝে অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং বিবাহ বিচ্ছেদ অহরহ ঘটতে থাকে।
তিন. যারা নারীদের দিয়ে চাকুরী করায় তাদের অবস্থা এমন তারা যেন তাদের নারীদের দিয়ে ব্যবসা করছে।
চার. সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী নারীরা তাদের নিজেদের দুর্নাম ও তাদের নিজেদের প্রতি মানুষের খারাপ ধারণা কামাই করে। কারণ, তারা যখন সেজে-গুজে ঘর থেকে বের হয়, এতে বুঝা যায় তাদের নিয়ত খারাপ এবং তাদের উদ্দেশ্য অসৎ। অন্যথায় সেজে-গুজে বের হওয়ার কারণ কি? তাদের আচরণের কারণে সমাজের দুর্বৃত্ত ও দাম্ভিকরা সুযোগ পেয়ে তার সদ্ব্যবহার করে।
পাঁচ. সামাজিক ব্যাধির সাথে সাথে সমাজে বিভিন্ন ধরণের মহামারি ও রোগ ব্যাধি দেখা দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لم تظهر الفاحشة في قومٍ قَطُّ حتى يُعْلِنوا بها إلا فشا فيهم الطاعونُ والأوجاعُ التي لم تكن في أسلافهم الذين مَضَوْا»
“কোনো কাওমের মধ্যে কোনো অশ্লীল কর্ম ও ব্যভিচার দেখা দেওয়ার পর তারা যখন তা প্রচার করত, তখন তাদের মধ্যে এমন মহামারি ও দুর্ভিক্ষ দেখা দিত, যা তাদের পূর্বে যারা অতিবাহিত হয়েছে, তাদের মধ্যে দেখা যায় নি”।
ছয়. চোখের ব্যভিচার ব্যাপক হারে সংঘটিত হতে থাকবে এবং চোখের হিফাযত করা যার জন্য আদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা কঠিন হয়ে যাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«العينان زناهما النظر»
“চোখ দুটির ব্যভিচার হলো, দৃষ্টি”। (সহীহ মুসলিম)
সাত. আসমানি মুসিবতসমূহ নাযিল হওয়ার উপযুক্ত হবে। এমন এমন বিপদের সন্মুখীন হতে হবে, যেগুলো ভূমিকম্প ও আণবিক বিস্ফোরণ হতেও মারাত্মক। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন করীমে বলেন,
﴿وَإِذَآ أَرَدۡنَآ أَن نُّهۡلِكَ قَرۡيَةً أَمَرۡنَا مُتۡرَفِيهَا فَفَسَقُواْ فِيهَا فَحَقَّ عَلَيۡهَا ٱلۡقَوۡلُ فَدَمَّرۡنَٰهَا تَدۡمِيرٗا ١٦﴾ [الاسراء: ١٦]
“আর যখন আমি কোনো জনপদ ধ্বংস করার ইচ্ছা করি, তখন তার সম্পদশালীদেরকে (সৎ কাজের) আদেশ করি। অতঃপর তারা তাতে সীমালঙ্ঘন করে। তখন তাদের ওপর নির্দেশটি সাব্যস্ত হয়ে যায় এবং আমি তা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করি।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১৬]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إن الناس إذا رأوا المنكر فلم يُغَيِّروه أوشك أن يَعُمَّهم الله بعذاب».
“মানুষ যখন অন্যায়কে দেখে এবং তা পরিবর্তন করে না, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের অচিরেই আযাব দ্বারা ঢেকে ফেলবে”।
হে মুসলিম মা ও বোনেরা!
তোমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর প্রতি একটু চিন্তা করে দেখ, যাতে তিনি বলেন,
«نَحِّ الأذى عن طريق المسلمين»؟
“মুসলিমদের চলাচলের রাস্তা থেকে তোমরা কষ্টদায়ক বস্তু সরাও।”
রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো যার প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, তা যদি ঈমানের অন্যতম শাখা হয়ে থাকে, তাহলে তোমাদের বুঝতে হবে, রাস্তায় কষ্টদায়ক বস্তু কাটা, পাথর, গোবর ইত্যাদি যা মানুষকে দৈহিক কষ্ট দেয় তা মারাত্মক নাকি যা মানুষের আত্মাকে ধ্বংস করে দেয়, জ্ঞান-বুদ্ধি নষ্ট করে এবং ঈমানদারদের নৈতিক পতন নিশ্চিত করে তা বেশি মারাত্মক?
মনে রাখবে একজন যুবকও যদি তোমার কারণে এমন ফিতনায় পড়ল, যা তাকে আল্লাহর যিকির থেকে বিরত রাখল বা সঠিক পথ হতে তাকে ফিরিয়ে রাখল, অথচ ইচ্ছা করলে তুমি তাকে নিরাপত্তা দিতে পারতে, কিন্তু তা তুমি করলে না, তাহলে তোমাকে অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ হতে ভয়াবহ আযাব গ্রাস করবে এবং তুমি কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
হে মুসলিম নারীরা! তোমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত বন্দেগী ও আনুগত্যর প্রতি অগ্রসর হও। মানুষের গোলামী করা ও তাদের আনুগত্য হতে বেঁচে থাক। কারণ, কিয়ামতের দিন আল্লাহর হিসাব অনেক কঠিন ও ভয়াবহ। মানুষ কে কি বলল, তা তোমার বিবেচ্য নয়, মানুষকে খুশি করা ও তাদের পদলেহন হতে বিরত থাক। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি লাভের জন্য কাজ করা, তোমার জন্য কল্যাণ ও নিরাপদ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من التمس رضا الله بِسَخَطِ الناسِ كفاه الله مؤنة الناس ومن التمس رضا الناسِ بِسَخَطِ الله وَكَلَه الله إلى الناس».
“যে ব্যক্তি মানুষকে নারাজ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের থেকে তাকে ফিরিয়ে নেবে এবং আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট হবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে নারাজ করে মানুষের সন্তুষ্টি কামনা করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে মানুষের নিকট সোপর্দ করবে”। [হাদীসটি বিশুদ্ধ]
একজন বান্দার ওপর ওয়াজিব হলো, একমাত্র আল্লাহকে ভয় করা এবং আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿فَلَا تَخۡشَوُاْ ٱلنَّاسَ وَٱخۡشَوۡنِ﴾ [المائدة: ٤٤]
“তোমরা মানুষকে ভয় করো না আমাকে ভয় কর”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৪]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَإِيَّٰيَ فَٱرۡهَبُونِ﴾ [البقرة: ٤٠]
“তোমরা আমাকেই ভয় কর”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ৪০]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿هُوَ أَهۡلُ ٱلتَّقۡوَىٰ وَأَهۡلُ ٱلۡمَغۡفِرَةِ﴾ [المدثر: ٥٦]
“তিনিই ভয়ের যোগ্য এবং ক্ষমার অধিকারী”। [সূরা আল-মুদ্দাচ্ছির, আয়াত: ৫৬]
মাখলুকের সন্তুষ্টি অর্জন করার কোনো প্রয়োজন নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের সন্তুষ্টি লাভের জন্য নির্দেশ দেন নি এবং এটি কোনো জরুরি বিষয় নয়। ইমাম শাফেঈ রহ. বলেন, “মানুষের সন্তুষ্টি লাভ এমন একটি পরিণতি যা লাভ করা কখনোই সম্ভব নয়, সুতরাং এর জন্য তোমার কষ্ট করার কোনো প্রয়োজন নেই। তুমি এমন কর্ম অবলম্বন কর, যা তোমাকে সংশোধন করবে। আর অন্য সব কিছুকে তুমি ছাড়”।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুত্তাকীদের উপায় বের করে দেবেন। যা মানুষের জন্য সংকীর্ণ ও সংকোচিত। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুত্তাকীদেরকে তাদের ধারণার বাহিরে রিযিক দান করবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُۥٓۚ﴾ [الطلاق: ٢، ٣]
“যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াককুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট”। [সূরা আত-তালাক, আয়াত: ২,৩]
শরঈ পর্দা অবলম্বন বিষয়ে যে সব শর্তাবলী একত্র হওয়া জরুরি:
এক: গ্রহণযোগ্য ও অগ্রগণ্য মতানুযায়ী নারীদের জন্য তাদের সম্পূর্ণ শরীর ডেকে রাখা:
কোন কোনো আলিমের মতে যদি ফিতনার আশঙ্কা না থাকে, তখন চেহারা ও কব্জিদ্বয় সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ, যদি নারী সুন্দরী না হয়ে থাকে, চেহারা ও হাতে কোনো সজ্জা গ্রহণ না করে, তখন কব্জিদ্বয় ও মুখ খুলে রাখাতে কোনো অসুবিধা নেই। আর মহিলাটি যে সমাজে বসবাস করে সে সমাজে এমন কোনো খারাপ লোক বা দুর্বৃত্ত নেই যারা মহিলাদের দিকে কু-দৃষ্টি দেয়। তখন নারীদের জন্য তাদের চেহারা ও হাতের কব্জিদ্বয় খোলা রাখাতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু যদি উল্লিখিত শর্তগুলো না পাওয়া যায়, তখন নারীদের জন্য তার চেহারা ও হাত খুলে রাখার বিষয়ে ওলামাদের ঐকমত্য হলো, তাদের চেহারা ও কব্জিদয় খুলে রাখা কোনো ক্রমেই বৈধ নয়।
দ্বিতীয়: পর্দা করা যেন সৌন্দর্য না হয়:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ﴾ [النور: ٣١]
“আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]
﴿وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ ﴾ [الاحزاب: ٣٣]
“আর তোমরা প্রাক জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না”। [সূরা আল আহযাব, আয়াত: ৩৩]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পর্দা করার নির্দেশ দিয়েছেন যাতে নারীরা তাদের সৌন্দর্যকে গোপন করে এবং তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে। কিন্তু পর্দা যদি এমন সুন্দর হয়, যা দেখে পুরুষরা নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং ফিতনার মুখোমুখি হয়, তাহলে এ ধরণের পর্দার কোনো অর্থ হতে পারে না।
তিন. পর্দার জন্য মোটা ও ঢিলে-ঢালা কাপড় পরিধান করতে হবে যাতে কাপড়ের ফাঁক দিয়ে তাদের শরীর দেখা না যায়:
কারণ, এ ধরণের কাপড় ছাড়া পর্দা বাস্তবায়ন হবে না। কারণ, চিকন –পাতলা- কাপড় পরিধান করলে, বাস্তবে মহিলারা উলঙ্গই থেকে যায়। তারা তাদের পর্দার ভিতর আর থাকল না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«سيكون في آخر أمتي نساء كاسيات عاريات على رُؤوسهن كأسنمة البُخت العنوهن فإنهن ملعونات »
আমার আখেরি যামানার উম্মতদের মধ্যে এমন কতক নারীর আবির্ভাব হবে, যারা পোশাক পরিধান করলেও মূলতঃ তারা উলঙ্গ। তাদের মাথা উটের চোটের মতো উঁচা হবে। তোমরা তাদের অভিশাপ কর; কারণ, তারা অভিশপ্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিষয়ে আরও বলেন,
«لا يدخلن الجنة ولا يجدن ريحها وإن ريحها ليوجد من مسيرةِ كذا وكذا»
“তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে।” (সহীহ মুসলিম) এতে এ কথা স্পষ্ট হয়, নারীদের জন্য পাতলা ও মসৃণ কাপড় পরিধান করা মারাত্মক কবিরা গুনাহ।
চার. ঢিলা-ডালা কাপড় পরিধান করতে হবে, সংকীর্ণ কাপড় পরিধান করবে না। কারণ, পর্দার উদ্দেশ্য হলো, জাতিকে ফিতনা থেকে রক্ষা করা। কিন্তু যখন কোনো মহিলা সংকীর্ণ কাপড় পরিধান করবে, তখন তার শরীরের গঠন একজন দর্শকের স্পষ্ট হবে। পুরুষের চোখে তা একেবারেই স্পষ্ট হবে। ফলে পুরুষরা তাদের এহেন অবস্থা দেখে ফিতনা-ফ্যাসাদের সন্মুখীন হবে। যা পর্দা না করার কারণে হয়ে থাকে। উসামা ইবন যায়িদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
পাঁচ. মহিলার সু-গন্ধি ও আতর মাখিয়ে রাস্তায় বের হবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَيُّما امرأةٍ استعطرت فَمَرَّتْ على قومٍ ليجدوا ريحها فهي زانية»
“যদি কোনো নারী খোশবু ব্যবহার করে কোনো পরুষ সম্প্রদায়ের নিকট দিয়ে অতিক্রম করে যাতে তারা তার সুগন্ধ উপলব্ধি করতে পারে। তাহলে সে নারী ব্যভিচারী”।
ছয়. নারীরা পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ليس منا من تشبه بالرجال من النساء ولا من تشبه بالنساء من الرجال»
“যে নারী পরুষের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং যে সব পুরুষ নারীর সাদৃশ্য অবলম্বন করে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়”।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«لعن رسولُ الله صلى الله عليه وسلم الرجلَ يَلْبَس لِبْسَةَ المرأة والمرأة تلبَسُ لِبسَةَ الرجل»
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পরুষ নারীদের বেশ-ভুষা অবলম্বন করে তাদের অভিশাপ করেছেন আবার যে সব পুরুষরা নারীদের বেশ-ভুষা অবলম্বন করে তাদের অভিশাপ করেছেন”।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«ثلاث لا يدخلون الجنة ولا ينظر الله إليهم يومَ القيامة: العاقُ والديه والمرأةُ المترجلة المتشبهة بالرجال والدَّيُّوث»
“তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের প্রতি কোনো করুণা করবে না। এক- যে মাতা-পিতার নাফরমানি করে, দুই- যে নারী পুরুষের আকৃতি অবলম্বন করে, তিন- দাইয়ূস (এমন ব্যক্তি যার পরিবারের মেয়েরা অশ্লীল কাজে লিপ্ত ও অশ্লীল পোষাক পরে অথচ সে তা সমর্থন করে”।
সাত. অমুসলিমদের মতো পোশাক পরিধান করবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من تشبه بقوم فهو منهم».
“যে ব্যক্তি কোনো কাওমের সাথে সাদৃশ্য রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে”। [হাদীসটি বিশুদ্ধ]
আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم عَلَيَّ ثوبين معصفرين فقال: «إن هذه من ثياب الكفار فلا تَلْبَسها»
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাকে দুটি রঙিন কাপড় পরিহিত অবস্থায় দেখেন, তারপর তিনি বললেন, এ ধরণের কাপড় পরিধান করা কাফেরদের অভ্যাস তুমি এ ধরণের কাপড় পরিধান করো না”। (সহীহ মুসলিম)
আট. মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধি লাভ করার মানসিকতা থাকতে পারবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ومن لَبِسَ ثَوْبَ شُهْرَةٍ في الدنيا ألبسه الله ثوبَ مَذَلَّةٍ يوم القيامة ثم ألهب في ناراً»
“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধ পোশাক পরিধান করল, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিয়ামতের দিন তোমাকে অপমান অপদস্থের পোশাক পরিধান করাবে। তারপর তোমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে”।