Articles

 





আল্লাহ তা‘আলা বলেন,





﴿وَمَا هَٰذِهِ ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَآ إِلَّا لَهۡوٞ وَلَعِبٞۚ وَإِنَّ ٱلدَّارَ ٱلۡأٓخِرَةَ لَهِيَ ٱلۡحَيَوَانُۚ لَوۡ كَانُواْ يَعۡلَمُونَ ٦٤﴾ [العنكبوت: ٦٤]





“এই পার্থিব জীবন ক্রীড়া কৌতুক বৈ কিছু নয়। পরকালের গৃহই প্রকৃত জীবন; যদি তারা জানত।” [সূরা আল-‘আনকাবুত, আয়াত: ৬৪]





তিনি আরো বলেন,





﴿وَلَدَارُ ٱلۡأٓخِرَةِ خَيۡرٞۚ وَلَنِعۡمَ دَارُ ٱلۡمُتَّقِينَ ٣٠ ﴾ [النحل: ٣٠]





“এবং পরকালের গৃহ আরও উত্তম। মুত্তাকীদের ঘর কী চমৎকার! [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৩০]





নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,





«لاَ تَزُولُ قَدَمَا ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ ».





“কিয়ামতের দিন আদম সন্তানের পা (স্বস্থান থেকে) একটুও নড়াতে পারবে না যতক্ষণ না পাঁচটি ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে:





    তার জীবনকাল কী কাজে শেষ করেছে?


    তার যৌবনকাল কী কাজে নিয়েজিত রেখেছে?


    তার ধন-সম্পদ কোন উৎস থেকে উপার্জন করেছে?


    কোন কাজে তা ব্যয় করেছে এবং


    সে অর্জিত জ্ঞানানুযায়ী কতটা আমল করেছে?”[21]





৮. শালীন পোশাক পরিধান করা





পশুদের লজ্জা নেই, পোশাক নেই। ওরা উলঙ্গ থাকে, যা ইচ্ছা তাই করে। মানুষ পশু নয়; মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। পোশাক মানুষের জন্য আল্লাহর অনন্য দান।





আল্লাহ তা‘আলা বলেন,





﴿يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ قَدۡ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكُمۡ لِبَاسٗا يُوَٰرِي سَوۡءَٰتِكُمۡ وَرِيشٗاۖ وَلِبَاسُ ٱلتَّقۡوَىٰ ذَٰلِكَ خَيۡرٞۚ ذَٰلِكَ مِنۡ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ لَعَلَّهُمۡ يَذَّكَّرُونَ ٢٦ يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ لَا يَفۡتِنَنَّكُمُ ٱلشَّيۡطَٰنُ كَمَآ أَخۡرَجَ أَبَوَيۡكُم مِّنَ ٱلۡجَنَّةِ يَنزِعُ عَنۡهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوۡءَٰتِهِمَآۚ إِنَّهُۥ يَرَىٰكُمۡ هُوَ وَقَبِيلُهُۥ مِنۡ حَيۡثُ لَا تَرَوۡنَهُمۡۗ إِنَّا جَعَلۡنَا ٱلشَّيَٰطِينَ أَوۡلِيَآءَ لِلَّذِينَ لَا يُؤۡمِنُونَ ٢٧ ﴾ [الاعراف: ٢٦، ٢٧]





“হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের প্রতি পোশাক নাযিল করেছি, যাতে তোমাদের শরীরের লজ্জাস্থান ঢাকা যায় এবং শরীরের হিফাযত ও সাজসজ্জা হয়। আর তাকওয়ার পোশাকই সবচেয়ে ভালো। এটা আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম নিদর্শন। হয়তো লোকেরা এ থেকে উপদেশ নেবে। হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদেরকে তেমনিভাবে ফিতনায় না ফেলে, যেমনিভাবে সে তোমাদের (আদি) পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল এবং তাদের শরীর থেকে তাদের পোশাক খুলিয়ে ফেলেছিল, যাতে তাদের লজ্জাস্থান একে অপরের সামনে খুলে যায়। সে এবং তার সাথী তোমাদেরকে এমন জায়গা থেকে দেখতে পায়, যেখান থেকে তোমরা তাকে দেখতে পাও না। যারা ঈমান আনে না তাদের জন্য আমি এ শয়তানদেরকে অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ২৬]





যিনি শালীন পোশাক পরেন তিনি অশালীন কাজ করতে পারেন না। নারীরা শালীন পোশাক পরলে শয়তানের কু-দৃষ্টি তাদের দিকে পড়ে না। আল্লাহ নারীদেরকে জাহেলী যুগের মতো চলাফেরা করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,





﴿وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ ﴾ [الاحزاب: ٣٣]





“তোমরা তোমাদের গৃহে অবস্থান কর এবং জাহেলিয়াত যুগের নারীদের মতো সৌন্দর্য প্রদর্শন করে চলাফেরা করো না।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩]





৯. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ:





আমাদেরকে সব সময় সৎ কাজের আদেশ দিতে হবে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করতে হবে। এ কাজ থেকে বিরত থাকার কোনো সুযোগ নেই। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,





﴿كُنتُمۡ خَيۡرَ أُمَّةٍ أُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَتَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَتُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِۗ ١١٠ ﴾ [ال عمران: ١١٠]





“তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।”[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১০]





রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,





“তোমাদের মধ্যে কেউ অন্যায় কাজ দেখলে সে যেন তার হাত দিয়ে তা প্রতিহত করে, যদি তা না করতে পারে, সে যেন মুখ দিয়ে প্রতিবাদ করে, যদি তাও না করতে পারে, সে যেন অন্তত অন্তর দিয়ে হলেও প্রতিবাদ করে। আর সেটি হচ্ছে ঈমানের দুর্বলতম অবস্থা।”[22]





মুসলিম সমাজের প্রত্যেক সদস্য একে অপরকে সৎ কাজের আদেশ দেবেন এবং খারাপ কাজে বাঁধা দেবেন। আমরা যদি এ কাজটি করতে পারি তাহলে আমাদের সমাজ থেকে অনেক অঘটন উঠে যাবে। আমাদেরকে যারা উত্ত্যোক্ততার শিকার হচ্ছেন তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং উত্ত্যেক্তকারীকে প্রতিহত করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,





﴿وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٢ ﴾ [المائ‍دة: ٢]





“সৎকর্ম ও তাকওয়ার কাজে তোমরা একে অন্যের সাহায্য করো। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ২]





১০. সামাজিক দায়বদ্ধতা সৃষ্টি:





নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,





«كلكم راعٍ وكلكم مسؤولٌ عن رعيته».





“তোমরা প্রত্যেকেই একেকজন রাখাল এবং তোমরা প্রত্যেকেই তোমাদের অধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।”[23]





আমরা সবাই আল্লাহর কাছে দায়বদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের অধীনদের সম্পর্কে কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসা করবেন। একটি সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির অধীনে কেউ না কেউ পরিচালিত হন। তিনি যদি তার অধীনদের খোঁজ-খবর রাখেন, মন্দ কাজে বাধা দেন, তাহলে সমাজের কেউ অপরাধমূলক কর্মে জড়াতে পারে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,





«مثل القائم في حدود الله والواقع فيها كمثل قوم استهموا على سفينة، فصار بعضهم أعلاها، وبعضهم أسلفها، وكان الذين في أسفلها إذا استقوا من الماء مروا على من فوقهم فقالوا: لو أنا خرقنا في نصيبنا خرقاً ولم نؤذ من فوقنا، فإن تركوهم وما أرادوا هلكوا جميعاً، وإن أخذوا على أيديهم نجوا ونجوا جميعاً».





“যারা আল্লাহর বিধান মেনে চলেন এবং যারা মেনে চলে না, তাদের উদাহরণ হচ্ছে ঐ কওমের মতো, যারা একটি নৌকা নিয়ে লটারী ধরেছে। অতঃপর তাদের একাংশ নৌকার উপরের অংশে ভাগে পেয়েছে এবং অন্য অংশ পেয়েছে নৌকার নিচের অংশ। যারা নৌকার নিচের তলায় থাকতেন তারা তাদের পানীয় পানির প্রয়োজন মেটাতে নৌকার উপরতলাবাসীদের কাছে যেতেন। এক পর্যায়ে তারা বলল, আমরা আমাদের অংশে ছিদ্র করে পানির প্রয়োজন মেটালে আর উপরতলাবাসীকে কষ্ট দিতে হয় না। এখন যদি উপরতলার বাসিন্দারা নিচতলাবাসীদেরকে নৌকা ছিদ্র করার জন্য সুযোগ দেন, তাহলে উপরতলা ও নিচতলার সবাই পানিতে ডুবে মারা যাবে। আর যদি তারা নিচতলাবাসীকে তাদের এ কর্মে বাধা দেয় তাহলে নিচতলার বাসিন্দারাও বেঁচে যাবে এবং উপরতলার বাসিন্দারাও বেঁচে যাবে।”[24]





আল্লাহর রাসূলের উক্ত হাদীসের আলোকে যদি সমাজের সকল মানুষ দায়িত্ববান হয় তাহলে অনেক অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সুযোগই কমে আসবে।





১১. সহশিক্ষা বর্জন করা:





সহশিক্ষা ইসলামী শরী‘আতের সরাসরি লঙ্ঘন। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ইসলামে হারাম। সহশিক্ষার কুফল অনেক। সহশিক্ষা পর্দার লঙ্ঘন হয়, লজ্জা কমে যায়, পশুবৃত্তি জাগ্রত হয়, কু-চিন্তা, কু-বাসনায় পেয়ে বসে, যার পরিণতি ভালো নয়। ইভটিজিং, যেনা-ব্যভিচার, ধর্ষণ, হত্যা, আত্মহত্যা সবই সহশিক্ষার কুফল। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটের সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের পর্নো-সিডি বাজারে বিভিন্ন সাংকেতিক নামে পাওয়া যায়। কোনো কোনো মিনি পতিতালয়ে গড়ে উঠেছে নামী-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে। সম্প্রতি ইডেন কলেজের কেলেঙ্কারি কারো অজানা নয়। এসবই সহশিক্ষার কুফল।





ইভটিজিংসহ নানারকম ফিতনা-ফাসাদ ও বালা-মুসিবত থেকে আমাদের সন্তাদের রক্ষা করতে সহশিক্ষা বাদ দিতে হবে। নর ও নারীর জন্য আলাদা শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরীক্ষার রেজাল্ট গবেষণা করে দেখা গেছে যে, সহশিক্ষাযুক্ত প্রতিষ্ঠানের চেয়ে সহশিক্ষামুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করছে।





১২. লজ্জা:





লজ্জা মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ ভূষণ। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ লজ্জাশীল পুরুষ ছিলেন। লজ্জাহীন মানুষ পশুতুল্য। পশুর লজ্জা নেই। তাই ওরা যেখানে সেখানে যা ইচ্ছা তাই করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,





«إِنَّ مِمَّا أَدْرَكَ النَّاسُ مِنْ كَلَامِ النُّبُوَّةِ : إِذَا لَمْ تَسْتَحِ فَاصْنَعْ مَا شِئْتَ».





“মানুষের কাছে পৌঁছা নবুওয়াতের প্রথম বাণী হচ্ছে, তুমি লজ্জাহীন হলে যা ইচ্ছা তাই করতে পারো।”[25]





তিনি আরো বলেন,





«الْحَيَاءُ لاَ يَأْتِي إِلاَّ بِخَيْرٍ».





“লজ্জা কল্যাণ বৈ কিছুই বয়ে আনে না।”[26]





অতএব, আমাদেরকে লজ্জার গুণ অর্জন করতে হবে। সন্তানদেরকে লজ্জাশীলতা শেখাতে হবে। যেসব অভিভাবক ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে একত্রে অশালীন সিনেমা, নাটক আর গান দেখেন তাদেরকে বিষয়টি ভেবে দেখার অনুরোধ করছি।





১৩. ছোটদের স্নেহ ও বড়দের শ্রদ্ধা করা:





আমাদের সন্তানদেরকে বড়দের শ্রদ্ধা আর ছোটদেরকে স্নেহ করার আদর্শ শেখাতে হবে। যারা এ গুণ অর্জন করবে তারা কখনোই রাস্তায় কোনো খারাপ কাজ করতে পারে না। কেননা তার তখন স্মরণ হবে সব নারীই কারো না কারোর মা, বোন, স্ত্রী কিংবা আত্মীয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,





«ليس منا من لم يرحم صغيرنا ويوقر كبيرنا».





“সে আমাদের দলভুক্ত নয় যে ছোটদের স্নেহ এবং বড়দের শ্রদ্ধা করে না।”[27]





১৪. সচ্চরিত্র:





সুশীলসমাজ গঠন করতে চাইলে সচ্চরিত্রের বিকল্প নেই। আমাদের সন্তানদেরকে সকল প্রকার উত্তম চরিত্র শিক্ষা দিতে হবে। একজন বিনয়ী, নম্র, ভদ্র এবং সচ্চরিত্রবান ছেলে কখনোই কোনো নারীকে উত্ত্যক্ত করতে পারে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,





«إن من خياركم أحسنكم أخلاقا».





“নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তি যার চরিত্র উত্তম।”[28]





আমাদের সন্তানদের চরিত্র বদলাতে হবে। রাসূলের চরিত্রকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,





﴿لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا ٢١ ﴾ [الاحزاب: ٢١]





“যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২১]





১৫. সৎসঙ্গ:





নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,





«مثل الجليس الصالح والسوء كحامل المسك ونافخ الكير فحامل المسك إما أن يحذيك وإما أن تبتاع منه وإما أن تجد منه ريحا طيبة ونافخ الكير إما أن يحرق ثيابك وإما أن تجد ريحا خبيثة».





“সৎবন্ধু এবং অসৎ বন্ধুর তুলনা হচ্ছে, সুগন্ধী বহনকারী ও কামারের সাথে। সুগন্ধি বহনকারী তোমাকে হয়তো সুগন্ধি উপহার দেবে; না হয় তুমি তার থেকে সুগন্ধি কিনে নেবে আর না হয় তুমি তার থেকে সুবাস পাবে। আর কামারের কাছে গেলে আগুনের ফুলকি তোমার বস্ত্রকে ছিদ্র করবে অথবা খারাপ গন্ধ পাবে।”[29]





১৭. মোবাইল, ইন্টারনেট ও কম্পিউটারের অপব্যবহার রোধ:





মোবাইল, কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের অপব্যবহার রোধ অত্যন্ত জরুরি। বর্তমান সময়ে চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাসী ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে এগুলো ব্যবহার হচ্ছে যথেচ্ছভাবে। ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফির সাইট আছে লক্ষ লক্ষ। আমাদের যুবসমাজ ইন্টারনেটকে গবেষণামূলক কাজে ব্যবহার না করে বন্ধুত্ব স্থাপন, চ্যাটিং, অশ্লীল দৃশ্য ও অপরাধের কাজেই বেশি ব্যবহার করছে। আধুনিক প্রযুক্তির অবৈধ ব্যবহার বন্ধে সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।





আমাদেরকে তাই আমাদের সন্তানদের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। তারা কাদের সাথে বন্ধুত্ব করছে, খোঁজ রাখা উচিৎ। বাজে বন্ধুর খপ্পরে পড়ে আপনার আমার ছেলেরা মুহূর্তেই বদলে যেতে পারে। পরিণত হতে পারে মদখোর, জুয়াখোর, নেশাগ্রস্ত, ইভটিজার, সন্ত্রাসী কিংবা চোর ডাকাতে।





১৮. পর্দার অনুশীলন:





পর্দার বিধান মেনে চলা প্রত্যেক নর-নারীর উপর ফরয। ইসলামী শরী‘আতের এ বিধান মেনে চলতে পারলেই দুনিয়ার বহু অনিষ্টতা থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া সম্ভব।





১৯. নারীর পর্দা:





আল্লাহ তা‘আলা নারীদেরকে উত্ত্যেক্তকারীদের হাত থেকে রেহাই পেতে পর্দার বিধান মেনে চলতে বলেছেন। পবিত্র কুরআনে নিম্নের এ আয়াতে বখাটেদের উত্ত্যেক্ততা থেকে রেহাই পেতে নারীদের সরাসরি কৌশল বাতলে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,





﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَن يُعۡرَفۡنَ فَلَا يُؤۡذَيۡنَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٥٩ ﴾ [الاحزاب: ٥٩]





“হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে (সম্ভ্রান্ত বলে) চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্ত্যেক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯]





পর্দার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা যদি নর-নারীরা পালন করেন, তাহলে খারাপ কোনো চিত্র রাস্তা-ঘাটে দৃশ্যমান হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,





﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ ٣١ ﴾ [النور: ٣٠، ٣١]





“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের ওড়না মাথার বক্ষদেশে ফেলে রাখে।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০-৩১]





আল্লাহ তা‘আলা নারীদেরকে পর্দাহীন চলাফেরা করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,





﴿وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ﴾ [الاحزاب: ٣٣]





“তোমরা তোমাদের গৃহে অবস্থান কর এবং জাহিলিয়াত যুগের নারীদের মতো সৌন্দর্য প্রদর্শন করে ঘোরাফেরা করো না।’’ [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩]





হিজাব নারীকে হেফাযত করে, রক্ষা করে তার ইজ্জত-অবরুকে। বাংলাদেশের যে নারীরা রাস্তায় হিজাব পরে চলেন, পর্দার ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম মানেন, তারা ইভটিজিং, এসিড সন্ত্রাস এবং ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এ খবর সাধারণত পাওয়া যায় না।





কোনো ফলের খোসা ছিড়ে খোলা জায়গায় ঢাকনাবিহীন রেখে দিলে তা মাছি ও জীবানু থেকে যেমন রক্ষা করা যায় না, তেমনি পর্দাবিহীন কোনো নারী রাস্তায় নিরাপদ নয়। শয়তান ও দুষ্টলোকের কুদৃষ্টি তার দিকে পড়বেই। তাই নারীকে বাঁচাতে, ইভটিজিং থেকে রক্ষা করতে নারীকেই আল্লাহর নির্দেশ মেনে পর্দা করে চলতে হবে -এর কোনো বিকল্প নেই।





নারীর পর্দার কতিপয় দিক:





একজন মুসলিম নারী পর্দার বিধান মেনে চলতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলবেন। না হয় তার পর্দার বিধান পুরোপুরি মেনে চলা হবে না। আল্লাহর বিধান পরিপূর্ণভাবে না মানলে দুনিয়াবী ফিতনা ফাসাদ থেকে মুক্ত থাকাও সম্ভব নয়।





১. সতর ঢাকা:





নারীর দেহ আবৃত করে রাখাই পর্দার উদ্দেশ্য। কোনোভাবেই নারীদেহ প্রদর্শন করা যাবে না।





কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষ প্রয়োজনে তার শরীর থেকে এমন কিছু অংশ সতরের বহির্ভুত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, যা প্রকাশ না করলেই নয়। এ মর্মে কুরআনে বলা হয়েছে,





﴿وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ ﴾ [النور: ٣١]





“তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]





এখানে যা সাধারণত প্রকাশমান দ্বারা অধিকাংশ শরী‘আহ বিশেষজ্ঞের মতে, হাতের তালু এবং বহিরাবরণকে বোঝানো হয়েছে। এগুলো সে আজনবীদের সামনে প্রকাশ করতে পারবে।





২. পরপুরুষের সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ না করা:





পরপুরুষের সামনে কোনো মুসলিম নারী তার সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,





﴿وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ ﴾ [النور: ٣١]





“তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]





শুধু দৈহিক সৌন্দর্য প্রদর্শন থেকে বিরত থাকলেই চলবে না বরং কণ্ঠের সৌন্দর্যকেও পরপুরুষ থেকে দূরে রাখতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,





﴿ إِنِ ٱتَّقَيۡتُنَّۚ فَلَا تَخۡضَعۡنَ بِٱلۡقَوۡلِ فَيَطۡمَعَ ٱلَّذِي فِي قَلۡبِهِۦ مَرَضٞ وَقُلۡنَ قَوۡلٗا مَّعۡرُوفٗا ٣٢ ﴾ [الاحزاب: ٣٢]





“যদি তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে করা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। তোমরা সঙ্গত কর্থাবার্তা বলবে।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩২]





নারীদেরকে আল্লাহ তা‘আলা নীরবে পথ চলতে বলেছেন, যাতে দুষ্ট লোকেরা তাদের পায়ের আওয়াজ শুনে ব্যাকুল হয়ে না ওঠে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,





﴿ وَلَا يَضۡرِبۡنَ بِأَرۡجُلِهِنَّ لِيُعۡلَمَ مَا يُخۡفِينَ مِن زِينَتِهِنَّۚ ﴾ [النور: ٣١]





“তারা যেন পদযুগল এমনভাবে স্থাপন করে, যাতে তাদের গোপন সৌন্দর্য টের পাওয়া যায়।” [সূরা আন-নুর, আয়াত: ৩১]





বর্তমানে অধিকাংশ নারীগণ রাস্তায় বের হলে তাদের রূপ-সৌন্দর্যকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে প্রায় মরিয়া। নানা ধরনের পারফিউম, সাজগোজ, পায়ে ঝুমকা, বাহারি ডিজাইনের পোশাক পরিধান করে তারা একদিকে যেমন আল্লাহর বিধানকে লঙ্ঘন করছে, পাশাপাশি পুরুষদের যৌন ক্ষুধা বাড়িয়ে দিয়ে নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছে।





বর্তমানে বোরকাও ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। নানা ডিজাইনের বোরকা আধুনিক নারীদের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলছে। বোরকা যদি পর্যার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন না করতে পারে তাহলে তার পরিধান করা অর্থহীন। আমাদের মা বোনদের বোরকা এমন হওয়া উচিত, যা তাদের সৌন্দর্যকে আবৃত করবে। বোরকার সৌন্দর্য যেন পুরুষদের আকর্ষণ না করে।





৩. নর-নারীর নির্জন সাক্ষাৎ বর্জন:





ইসলামে নর-নারীর নির্জন সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ। এটি অত্যন্ত ভয়ানক। নারী-পুরুষের নির্জনে সাক্ষাৎ কিংবা গোপন সম্পর্ক, যখন উভয়ের মধ্যে কোনো পর্দা বা আড়ালও থাকে না। এরূপ পরিস্থিতিতে এমন কোনো বাহ্যিক চাপ থাকে না, যা মানুষকে আবেগ উত্তেজনার কাছে পরাভূত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। নর-নারীর সম্পর্ক ইসলামের দৃষ্টিতে নিছক দৈহিক লালসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর উপর আবর্তিত হয় অনেক দায়-দায়িত্ব। তাই এ সম্পর্কের সাথে সামাজিক বন্ধন ও স্বীকৃতি থাকা অত্যাবশ্যক, যেন এই দায়-দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সমাজ ব্যক্তির সাহায্যে এগিয়ে আসে। আর যদি ব্যক্তি তা পালন করতে অবহেলা করে বা পাশ কাটিয়ে যেতে চায় তাহলে তাকে জবাবদিহির জন্য পাকড়াও করতে পারে। এই বন্ধন বা বাধ্য-বাধকতাই তার বিপথগামিতার পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। ফলে নর-নারী কারো অধিকার বিনষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। মানুষের এই দুর্বলতার কথা বিবেচনা করে বেগানা নারী-পুরুষের নির্জন দেখা সাক্ষাৎ ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে।[30] রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,





“তোমাদের কেউ যেন কোনো বেগানা নারীর সাথে একান্তে সাক্ষাৎ না করে, তবে তার সাথে তার কোনো মাহরাম পুরুষ আত্মীয় থাকলে ভিন্ন কথা।”[31]





অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নর-নারীর নির্জন আড্ডা থেকে সর্তক করে বলেন,





«لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلاَّ كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ».





“একান্ত নির্জনে বেগানা নর-নারী যখন কথাবার্তা বলে, শয়তান তখন তাদের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে যায়।”[32]





আল্লাহ তা‘আলা বরেন,





﴿وَلَا مُتَّخِذَٰتِ أَخۡدَانٖۚ﴾ [النساء: ٢٥]





“মেয়েরা গোপনে বা চুপিসারে বন্ধুত্ব করবে না।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৫]





অনুরূপ ছেলেদেরকে বলা হয়েছে,





﴿وَلَا مُتَّخِذِيٓ أَخۡدَانٖ٥ ﴾ [المائ‍دة: ٥]





“পুরুষেরাও গোপনে বা চুপিসারে বন্ধুত্ব করবে না।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৫]





৪. পুরুষদের মতো পোশাক পরিধান না করা:





নারীদের জন্য পুরুষের পোশাক পরিধান করা নিষিদ্ধ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সকল নারীদের অভিসম্পাত করেছেন, যারা পুরুষের পোশাক পরিধান করে। হাদীসে এসেছে,





«لعن النبي صلى الله عليه وسلم المتشبهين من الرجال بالنساء والمتشبهات من النساء بالرجال».





“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের অনুকরণকারী পুরুষদের এবং পুরুষদের অনুকরণকারী নারীদের অভিসম্পাত করেছেন।”[33]





৫. পাতলা স্কিন টাইট কিংবা পুরো দেহ আবৃত করে না এমন পোশাক পরিধান:





আবু হোরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,





«صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا ».





“জাহান্নামীদের এমন দুটি দল রয়েছে, যাদের আমি দেখিনি। তাদের এক দলের হাতে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা লোকদেরকে মারবে। আর একদল নারীদেরকে। তারা পোশাক পরিচ্ছদ পরিধান করা সত্ত্বেও উলঙ্গ, বিচুৎতকারিণী ও স্বয়ং বিচ্যুত। বুখতী উটের উচু কুঁজের মতো তাদের চুলের খোপা। এসব নারী কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি অনেক অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে।”[34]





ইসলাম নগ্নতা, বেহায়াপনা, নির্লজ্জ চালচলন নিষিদ্ধ করে অবাধ যৌনচর্চার দুয়ার বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ, অবাধ যৌনচর্চা মানবতার মহাসর্বনাশ সাধন করতে পারে। এর ফলে যুবশক্তির ধ্বংস সাধনসহ মারাত্মক যৌনব্যাধি, শারীরিক শক্তি নাশ, পারিবারিক শৃঙ্খলার বিলোপ, বেশ্যাবৃত্তির প্রসার, ইভটিজিং ও নানা প্রকার প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আজকের বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থা যার বাস্তব প্রমাণ।[35]





৬. নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বর্জন:





মানুষ পাপের আস্তানার পাশ দিয়ে দৃষ্টি অবনত করে অতিক্রম করতে পারে। কিন্তু যেখানে গোটা সমাজকে ব্যভিচারের আঁখড়ায় পরিণত করা হয়েছে, সেখানে যে কোথায় গিয়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করবে? নিজের নৈতিকতা ও কর্মের পরিমার্জনের জন্য কী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে? বর্তমানে অবস্থা এই যে, কোনো ব্যক্তি সে বাজারের দোকানদার হোক কিংবা কারখানার শ্রমিক, কলেজের ছাত্র হোক কিংবা অফিসের কেরানি, সে কোনো হোটেলে বসে থাকুক বা পার্কে ভ্রমণরত হোক-প্রতিটি স্থানেই বিপরীত লিঙ্গ তার সামনে পাপের পয়গাম নিয়ে হাজির আছে। জীবনের এমন কোনো অঙ্গন নেই, বর্তমান সভ্যতা যেখানে নারী ও পুরুষের একসাথে কাজ-কর্ম অনিবার্য করে দেয় নি। শুধু তাই নয়; বরং এই একত্রে মেলামেশাকে এতটা বৈচিত্র্যময় ও আকর্ষণীয় করে দিয়েছে যে, সমাজের ওপরে যৌন ক্ষুধা ও যৌন উপবাসের মতো পরিস্থিতি ছেয়ে আছে। মনে হয়, যেন যৌনতা সর্বত্র ভিক্ষাপাত্র হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নারী ও পুরুষের অভাদ মেলামেশা যতদিন উচ্ছেদ না করা যাবে, ততদিন এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি লাভ করা যাবে না।





ইসলাম সব সময় নারী ও পুরুষের কর্মক্ষেত্র পুরোপুরি আলাদা করে রাখে। তাই ইসলামের নীতিমালার ওপর প্রতিষ্ঠিত সমাজে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেলার সুযোগ নিতান্ত কম। কোনো সময় নারী ও পুরুষের একই গন্ডির মধ্যে কাজ করার প্রয়োজন হলেও ইসলাম তাদের পরস্পর মেলামেশা থেকে দূরে থাকতে কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়।[36]





একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারী ও পুরুষদের পারস্পরিক মিশে যেতে দেখে নারীদের বললেন,





«اسْتَأْخِرْنَ فَإِنَّهُ لَيْسَ لَكُنَّ أَنْ تَحْقُقْنَ الطَّرِيقَ عَلَيْكُنَّ بِحَافَاتِ الطَّرِيقِ ».





“পেছনে চলে যাও। রাস্তার মাঝখান দিয়ে তোমাদের চলা উচিত নয়। তোমাদের রাস্তার একপাশ দিয়ে চলা উচিত।”[37]





আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো পুরুষকে দুইজন স্ত্রীলোকের মাঝ দিয়ে চলতে নিষেধ করেছেন।[38]





উকবা ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,





«إِيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ عَلَى النِّسَاءِ ». فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَفَرَأَيْتَ الْحَمْوَ قَالَ « الْحَمْوُ الْمَوْتُ »





“নারীদের সাথে অবাধে মেলামেশা থেকে সাবধান হও। একজন আনসারী বললেন, দেবরের সাথে মেলামেশার ব্যাপারে আপনার মতামত কী? তিনি বললেন, দেবর তো সাক্ষাৎ মৃত্যু”[39] (অর্থাৎ মৃত্যু যেমন দেহে পচন ধরায়, দেবরের কারণে দাম্পত্যজীবনে তেমিন পচন ধরতে পারে)।





পুরুষের পর্দা:





নারীর পর্দার পাশাপাশি পুরুষের পর্দা করাও ফরয। পবিত্র কুরআনের পর্দার বিধান সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সূরা আন-নূরের আয়াত দুটিতে প্রথমেই পুরুষদের পর্দার বিষয়ে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,





﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ ﴾ [النور: ٣٠]





“মুমিনদেরকে বলনু, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০]





সুতরাং যেসব বস্তু মানবহৃদয়কে আল্লাহর স্মরণবিমুখ করে দেয় কিংবা যে দিকে তাকাতে শরী‘আতে নিষেধাজ্ঞা উচ্চারিত হয়েছে, সে দিক থেকে দৃষ্টিকে বিরত রাখতে হবে। যেমন ঘরে বইরে, রাস্তা ঘাটে পরনারী ও আজনবী মহিলা, টেলিভিশন কিংবা সিডি ভিডিও-র নাটক, ছায়াছবির অশ্লীল দৃশ্যাবলী কিংবা দেয়াল পোস্টারের অশালীন ছবি ইত্যাদি। মূলতঃ অসংঘত দৃষ্টির কুপ্রভাব শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মন-মানসকেই কলুষিত করে না; বরং তা তার গোটা দেহের সমস্ত কর্মকান্ডে সংক্রমিত হয়ে ক্রামন্বয়ে ব্যক্তি পর্যায় অতিক্রম করে এক সময় তা সমূহবিপদ নিয়ে জাতীয় অস্তিত্ববিনাশী অশনি সংকেত হয়ে দাঁড়ায়। আকাশ সংস্কৃতি, পাশ্চাত্য থেকে আসা অশ্লীল ছবির কুপ্রভাবে আমাদের যুব সমাজের মধ্যে বর্তমানে নৈতিক অবক্ষয়ের যে ধস নেমেছে, তা এই নির্মম সত্যেরই কিছু বাস্তবতা। এই অপসংস্কৃতির করাল গ্রাস রোধ করতে যদি আমরা অক্ষমতার পরিচয় দেই তাহলে আগামী দিনে ইসলামী আদর্শ-ঐতিহ্য নিয়ে আমাদের জাতীয় স্বকীয়তা সংরক্ষণ করা কিছুতেই সম্ভব হবে না। আর এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে, আনতনয়ন বিশিষ্ট হওয়াই নিষিদ্ধ দৃষ্টি থেকে আত্মরক্ষার ও দৃষ্টির পবিত্রতা বিধানের প্রকৃষ্ট পদ্ধতি-কৌশল। স্বয়ং চক্ষুদাতা মহান আল্লাহ তা‘আলাই আমাদের এ শিক্ষা দিয়েছেন।





দৃষ্টির অবাধ বিচরণের নাম স্বাধীনতা নয়। যেমন অনেক নির্বোধ মুর্খ ধারণা করে থাকে; বরং তা হচ্ছে কুপ্রবৃত্তির কাছে নিজের পরাধীনতার বহিঃপ্রকাশ। একটি ক্ষুধার্ত সিংহকে লোকালয়ে ছেড়ে দিলে সে যতটা হত্যাযজ্ঞ চালাতে পারে, অনিয়ন্ত্রিত কুপ্রবৃত্তির ধ্বংসযজ্ঞ তার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। কু-রিপুর পূজারীরা মূলত যালিম ও সীমালঙ্ঘণকারী। ইসলামের দৃষ্টিতে, মানুষ তো তখনই স্বাধীন হতে পারে, যখন সে কুপ্রবৃত্তির দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভ করে।[40] এজন্যই কুরআনুল কারীমে কুপ্রবৃত্তি পূজাকারীদেরকে চরম ধিক্কার দেওয়া হয়েছে,





﴿ وَلَوۡ شِئۡنَالَرَفَعۡنَٰهُ بِهَا وَلَٰكِنَّهُۥٓ أَخۡلَدَ إِلَى ٱلۡأَرۡضِ وَٱتَّبَعَ هَوَىٰهُۚ فَمَثَلُهُۥ كَمَثَلِ ٱلۡكَلۡبِ إِن تَحۡمِلۡ عَلَيۡهِ يَلۡهَثۡ أَوۡ تَتۡرُكۡهُ يَلۡهَثۚ ﴾ [الاعراف: ١٧٦]





“অবশ্য আমরা ইচ্ছা করলে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিতাম সে সকল নিদর্শনসমূহের বদৌলতে; কিন্তু সে যে অধ:পতিত এবং নিজের রিপুর অনুগামী হয়ে রইল। সুতরাং আর অবস্থা হলো কুকুরের মতো; যদি তাকে তাড়া কর তবুও হাঁপাবে আর যদি ছেড়ে দাও তবুও হাঁপাবে। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৭৬]





অতএব, সুস্থ সমাজ গঠন করতে নর-নারীর চোখের পর্দার কোনো বিকল্প নেই। চোখের পর্দাই পারে ইভটিজিং থেকে আমাদের মা-বোনদের রক্ষা করতে।





উপসংহার





ইসলাম যে সকল অশান্তি, অন্যায়-অনাচার ও অপরাধকে দুর করে শাস্তি ও সুখী সমাজ গঠন করতে পারে তা প্রমাণিত। চৌদ্দ শত বছর পূর্বে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরবের জাহেলী সমাজকে পরিণত করেছিলেন সোনার সমাজে। সমাজ থেকে সকল অপরাধ বিতাড়িত করতে হলে পারিবারিক শিক্ষা ও পর্দা অনুশীলনের বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে ইসলামের দিক নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলামের নির্দেশিত পথে চলার তাওফীক দিন। আমীন।





সমাপ্ত



Recent Posts

সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ...

সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ক্ষেত্রে করণীয়

প্রতিবেশীর অধিকার ...

প্রতিবেশীর অধিকার

ঈদুল ফিতরের আনন্দ ও আ ...

ঈদুল ফিতরের আনন্দ ও আমাদের করণীয়

হজ-উমরার ফাযাইল ও উপক ...

হজ-উমরার ফাযাইল ও উপকারিতা